জুলাই হত্যাকান্ডের বিচারের দাবি পরিবারের

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন সরকারি তোলারাম কলেজ শাখার উদ্যোগে কলেজের চার শহীদদের স্মরণে স্মরণসভা ও সম্মামনা স্মারক প্রদান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শহীদ এবং মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ১ মিনিট নিরবতার মধ্য দিয়ে স্মরণ সভা শুরু হয়।
সৌরভ সেনের সভাপতিত্বে এবং কলেজ সদস্য সচিব মুন্নি আক্তার প্রত্যাশার সঞ্চালনায় স্মরণসভা ও সম্মাননা স্মারক প্রদানের আয়োজনে আলোচনা করেন সরকারি তোলারাম কলেজের ৪ শহীদের পরিবার থেকে শহীদ মো. মানিক মিয়ার বাবা, শহীদ মো. মাহাদী হাসান পান্থর মা এবং শহীদ মো. মেহেদী হাসান নাঈমের বাবা এবং শহীদ আবদুর রহমানের বড় ভাই।
গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন, যুগ্ম সমন্বয়কারী আলমগীর হোসেন আলম, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মশিউর রহমান রিচার্ড, জেলা সভাপতি ফারহানা মানিক মুনা।
এছাড়াও স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ কলেজ শাখার আহ্বায়ক মৌমিতা নুর, তোলারাম কলেজ শাখার সদস্য মীম আহমেদ, ভোলাইল শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক স্বপ্নীল শোভন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন শাখার নেতৃবৃন্দ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
বক্তব্যে শহীদ মাহাদী হাসান পান্থর মা বলেন ‘সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমার ছেলে রাজপথে নেমেছিল এবং এই লড়াইয়ে সে শহীদ হয়।’
শহীদ মেহেদি হাসান নাঈমের বাবা ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে বলেন ‘হত্যাকান্ডের ১ বছর হয়ে গেলেও এখনো ছেলে হত্যার বিচার পাইনি।’
শহীদ মো. মানিক মিয়ার (শাহরিক) বাবা বলেন ‘আমার ছেলে এক ফেরাউনি ব্যবস্থার পতনের জন্য আন্দোলনে যায়, কিন্তু তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।’
শহীদদের পরিবারের সদস্যরা এই হত্যাকান্ডের ন্যায়বিচারের দাবি করেন।
গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন তার বক্তব্যে বলেন, “যখন শহীদের রক্ত বিক্রি হয়ে যায় তখন সেই রাষ্ট্র তার মর্যাদা হারায়। যেমনটি হয়েছিল ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের পরে। গত ১৭ বছর দেশের মানুষের রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণাকে শহীদরা একটি ভাষা দিয়েছে, যেই ভাষার মধ্য দিয়ে আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি।’’
শহীদ পরিবারের কাছে অঙ্গিকার ব্যাক্ত করে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ৭১ থেকে ২৪ সকল শহীদদের উত্তরসূরি। এই শহীদের রক্তের সাথে আমরা কাউকে বেইমানি করতে দিবো না। কেউ যদি শহীদের রক্ত বিক্রি করতে চায়, আমরা রুখে দাড়াবো, শহীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করবো।’
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মশিউর রহমান রিচার্ড তার বক্তব্যে বলেন, “আমরা এমন একটা শাসন ব্যবস্থায় ছিলাম যখানে রাষ্ট্রের কোনো জবাবদিহিতা ছিল না, প্রশ্ন করা যেতো না এবং রাষ্ট্রের সকল অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, কাঠামোগত হত্যাসহ কোনো হত্যার বিচার চাওয়া যেতো না। এর বিপরীতে বাংলাদেশের মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা সংগঠিত হয়ে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। যার ধারাবাহিকতায় জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতাকে রাজপথে দমন করা হয়।’’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা আমাদের পথ দেখিয়েছে তারা শহীদ হয়েছে এবং আহত হয়েছে। যাদের আত্মত্যাগে আমরা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং গণহত্যার বিচার, শহীদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন এবং শহীদ পরিবারের সম্মানজনক পুনর্বাসন করার দাবি জানাই।’
সর্বশেষ সরকারি তোলারাম কলেজের ৪ শহীদের পরিবারের সদস্যদের হাতে শহীদের মর্যাদায় সম্মাননা স্মারক তুলে দেন অভ্যুত্থানের যোদ্ধারা। শহীদদের স্মরণে ‘মুক্তির মন্দিরো সোপান তলে’ গান পরিবেশন করে তোলারাম কলেজের গানের শিক্ষার্থীরা।