২৮ অক্টোবর ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২১:৩২, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

আদালত প্রাঙ্গণে হামলার পর ‘নিরাপত্তাহীনতায়’ ভুক্তভোগী পরিবার

আদালত প্রাঙ্গণে হামলার পর ‘নিরাপত্তাহীনতায়’ ভুক্তভোগী পরিবার

নারায়ণগঞ্জ জেলা জজ আদালত প্রাঙ্গণে হামলার ঘটনার পর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। তাদের বিভিন্ন মহল থেকে হুমকি ও মামলা না করার জন্য চাপ দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।

গত রোববার দুপুর বারোটার দিকে একটি মামলার তারিখে আদালত প্রাঙ্গণে গেলে ওই মামলার বাদী ও তার পরিবারের সদস্যদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজে তাদের মারধর করতে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খানের অনুসারী দুই আইনজীবী ও তার সহকারীকেও (মুহুরি) দেখা যায়।

এই ঘটনায় আহত হন শহরের কালিরবাজার এলাকার স্যানেটারি ব্যবসায়ী ইরফান মিয়া, তার স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা, দুই ছেলে মোহাম্মদ জিদান ও আব্দুল্লাহ। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত হন মামলার বাদী ইরফান মিয়া।

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, কয়েকমাস আগে অপর এক ব্যবসায়ীর কাছে পাওনা টাকা চাওয়াতে হুমকি-ধমকি দিলে নারায়ণগঞ্জের একটি জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন ইরফান মিয়া। ওই মামলায় বিবাদীপক্ষে লড়ছেন সাখাওয়াত হোসেন খান। মামলার তারিখে তারা আদালতে গেলে তাদের উপর হামলা চালানো হয়।

তাদের অভিযোগ, সাখাওয়াত হোসেন খানের নির্দেশে তার জুনিয়র আইনজীবী ও মুহুরিসহ কয়েকজন মিলে হামলা চালান।

এই ঘটনায় রোববার বিকেলে ফতুল্লা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন রাজিয়া সুলতানা। তবে, অভিযোগটি মামলা হিসেবে এখনও রেকর্ড করা হয়নি বলে জানান বাদী।

এদিকে, হামলার ঘটনার পর থেকে নানা মহল থেকে চাপ ও হুমকি আসছে উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন রাজিয়ার বড় ছেলে পেশাদার বক্সিং প্লেয়ার জিদান।

স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, “আজকে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও তার সন্ত্রাস বাহিনী আমাদের উপর যেই আক্রমন করে তাতে উনি শান্ত হননি। আমাদের হুমকির মুখে রেখেছে এখনো। বিভিন্নভাবে আমাদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। আমরা এখন নিজের বাসায়ও নিরাপদ না। তারা নানা লোক মারফত হুমকি দিচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর হুমকিও উনি পাঠাইসেন। ওনার ক্ষমতা কতটুকু আমরা নাকি জানি না, উনি জানাবে। আমরা এই ব্যাপারটা নিয়ে যাতে বাড়াবাড়ি না করি। করলে এর পরিণাম ভয়ঙ্কর মৃত্যু হবে। যদি বাঁচতে চাই তাহলে যাতে আমরা তার করা অন্যায় অত্যাচারের কথা কাউকে আর না বলি। এবং চুপচাপ থাকি।”

তিনি আরও লেখেন, “আমি আমার দেশবাসী ও এলাকাবাসীর কাছে সাহায্য চাই। আমার পরিবারকে দয়া করে সবাই বাঁচান। আমার পরিবার এখন একটা বড় হুমকির মুখে আছে, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমাদের এই খুনি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেনের হাত থেকে বাঁচান, প্লিজ। আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”

এদিকে, পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ করেছেন রাজিয়া সুলতানা। অভিযোগ থেকে সাখাওয়াত হোসেন খানের নাম বাদ দেওয়ার জন্যও চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ এ নারীর।

তিনি বলেন, “আমরা আহতাবস্থায় এ ব্যাপারে থানায়, পুলিশ সুপারের অফিসে নানা জায়গায় দৌড়ঝাপ করছি। কিন্তু পুলিশ মামলা নিতে টালবাহানা করছে।”

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী বলেন, “হামলার ভিডিও ফুটেজে সাখাওয়াত হোসেন খানের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। আমরা আদালত প্রাঙ্গণের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের জন্য অফিসিয়ালি আবেদন করবো। তদন্তে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।”

এর আগে রোববার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে এই হামলার ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততা নেই দাবি করে মহানগর বিএনপি নেতা সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, তাকে বিতর্কিত করতে একদল ব্যক্তি এই ঘটনার সঙ্গে তাকে জড়িত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি ঘটনার সময় আদালত প্রাঙ্গণে ছিলেন না। তিনি পরে এসে ঘটনার বিষয়ে শুনেছেন।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়