মারা গেলেন পুলিশের গুলিতে চোখ হারানো ‘জুলাই যোদ্ধা’ সালাউদ্দিন
গত বছরের জুলাইতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের ছোরা ছররা গুলিতে এক চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিলেন গাজী সালাউদ্দিন। অপর চোখেও দেখছিলেন ঝাপসা। মুখমন্ডলের পাশাপাশি গলায়ও একাধিক গুলি লেগেছিল তার। চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, গলায় লাগা গুলির স্প্রিন্টার শ্বাসনালি ছুঁয়ে আছে, এটি বের করা দুঃসাধ্য। শরীরে এ স্প্রিন্টার নিয়েই ১৫ মাস পর রোববার রাতে মারা যান এ জুলাই যোদ্ধা।
সালাউদ্দিনের বড়ছেলে আমির ফয়সাল রাতুল বলেন, “চোখ ছাড়াও বাবার সারামুখে, গলায়, হাতেও গুলি লেগেছিল। গলার স্প্রিন্টারগুলো বের করা যায়নি। ডাক্তার তাকে কথা প্রায় বলতেই নিষেধ করে দিছিলেন। গত কয়েকদিন খুব কাশতেন এবং কাশির সাথে রক্তও পড়তো।”
রোববার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর শ্বাসকষ্ট শুরু হলে রাত নয়টার দিকে তাকে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তিনি মারা যান বলে জানান রাতুল।
নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলে বাড়ি সালাউদ্দিনের। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া একতলা ভবনের দু’টি কক্ষে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকতেন তিনি। অন্তর্বর্তী সরকারের গেজেটভুক্ত অতি গুরুতর আহতের তালিকার ১৩২ নম্বরে ছিল তার নাম। সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি তার কর্মসংস্থানের জন্য মুদি দোকানের মালামালও কিনে দিয়েছিল জুলাই ফাউন্ডেশন।
শারীরিক অবস্থার কারণে দোকানে খুব একটা সময়ও দিতে পারতেন না সালাউদ্দিন। বড় ছেলে রাতুলই বসতেন দোকানটিতে।
পরিবারের সদস্যরা বলেন, গত বছরের জুলাইতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জ শহর যখন উত্তাল তখন ভূঁইগড় এলাকার একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন সালাউদ্দিন। ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনে অংশ নেন সালাউদ্দিনও। ১৯ জুলাই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধলে আরও অনেকের সঙ্গে গুলিবিদ্ধ হন তিনিও।
নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরদিন তাকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারও হয় তার। কিন্তু এক চোখের দৃষ্টি আর ফিরে পাননি। শুধু তাই নয়, শরীরের কয়েকটি অংশে গুলির স্প্রিন্টার বয়ে বেড়াচ্ছিলেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।
“শুরুর দিকে ধার-দেনা করে বাবার চিকিৎসা চালাইছি। পরে সরকার পতনের পর নতুন সরকার সাহায্য-সহযোগিতা করলো। কিন্তু তার চোখের দৃষ্টি আর উনি পাননি। গলার স্প্রিন্টারটাও তাকে অনেক ভোগাচ্ছিল। কাশির সাথে তার রক্ত পড়তো, গলা ব্যথা করতো কিন্তু আমরা জিজ্ঞেস করলেই চেপে যেতেন। কাশির ধমক উঠলে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে তারপর কাশতেন”, কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন সালাউদ্দিনের ছেলে রাতুল।
তবে, আরও উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব হলে সালাউদ্দিন বেঁচে থাকতেন বলে মনে করেন তার স্ত্রী রানী বেগম। স্বামীকে হারিয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত এ নারী বলেন, “আমাদের কোনো পুজি নাই। উনি যাই পাইতেন কাজ করতেন। এ দিয়েই সংসার চলতো। এইভাবে তারে হারামু ভাবি নাই।”
সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকালে গোদনাইল বাজারে সালাউদ্দিনের জানাজার নামাজ পড়ানো হয়। পরে স্থানীয় একটি কবরস্থানে তার দাফন করা হয়েছে বলে জানান পরিবারের সদস্যরা।





































