ওসমান পরিবারের দোসররা নব্য গডফাদারদের সাথে: রফিউর রাব্বি

তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১৫১ মাস উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় আলী আহাম্মদ চুনকা নগর মিলনায়তন প্রাঙ্গণে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
সংগঠনের সভাপতি মনি সুপান্থর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক দীনা তাজরীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব হালিম আজাদ, দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমান মাসুম, শিশু সংগঠক রথীন চক্রবর্তী, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক দীপু সিপিবি জেলা সভাপতি শীবনাথ চক্রবর্তী, গণসংহতি আন্দোলন জেলার সমন্বয়ক তরিকুর সুজন, বাসদ জেলা সংগঠক সেলিম মাহমুদ ও সামাজিক সংগঠন সমমনার সাবেক সভাপতি দুলাল সাহা।
রফিউর রাব্বি বলেন, শেখ হাসিনা দেশের বিচার-ব্যবস্থাকে যেভাবে ধ্বংস করে রেখে গেছে তার উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন এখনো হয় নাই। বৈষম্যের বিরুদ্ধে জুলাই অভ্যুত্থান সংঘটিত হলেও ভিন্ন মতের বিরুদ্ধে এক শ্রেণির উগ্রবাদীদের উত্থান ঘটেছে। তারা সংস্কৃতির উপর যেমনি আঘাত করছে, তারা ধর্মের ভিন্ন মতের উপর নৃশংস হয়ে উঠছে। কবর থেকে লাশ তুলে পুড়িয়ে দিচ্ছে, তারা দুই শতাধিক মাজার ও খানকায় হামলা করেছে, বাউলদের মেলা আখড়ায় হামলা করেছে, নারীরা তাদের আক্রমণের শিকার হচ্ছে। সরকারের নিরবতা এদেরকে ক্রমাগত হিংস্র করে তুলছে। শেখ হাসিনা দেশের জেলায় জেলায় মাফিয়া, গডফাদারদের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তার নির্দেশে সাড়ে এগার বছর ত্বকী হত্যার বিচারটি বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। ঘাতক ওসমান পরিবারকে শেখ হাসিনা বার বার পুরস্কৃত করেছে। তারা দোর্দন্ড প্রতাপে নারায়ণগঞ্জে একের পর এক লাশ ফেলেছে। নারায়ণগঞ্জবাসীর জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। ওসমান পরিবার পালিয়ে গেলেও তাদের দোসর লুটেরারা নব্য গজিয়ে ওঠা গডফাদারদের সাথে মিশে নতুন করে লুটপাটে লিপ্ত হয়েছে। আজকে পরিবর্তীত বাংলাদেশে পতিত স্বৈরাচারদের পুরুত্থান যেমনি জনগণ চায় না, তেমনি নতুন কোন স্বৈরাচারের উত্থানও চায় না।
তিনি বলেন, আজকে আমরা ত্বকী হত্যার এক যুগ পরে ত্বকীসহ সাগর-রুনি, তনু, মিতু এবং নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবার দ্বারা নিহত সকল হত্যার বিচার চাই, আবরার ফাহাদ হত্যার রায় দ্রুত কার্যকর দেখতে চাই।
মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, ১৯৭৩ সালে ওসমান পরিবার জাকসুর সাধারণ সম্পাদক রোকনকে হত্যা করেছিল, সাড়ে বারো বছর আগে তারা ত্বকীকে হত্যা করেছে। শামীম ওসমান বিদেশে পালিয়ে গিয়ে বহাল তবিয়তে আছে। তাদের অনুচরেরা আজকে নারায়ণগঞ্জে নতুন করে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে। প্রশাসনের যথাযথ ভূমিকার অভাবে তারা বিভিন্নভাবে ওসমান পরিবারকে সহায়তা করে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দু’দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানায়, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ৫ মার্চ ২০১৪ তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চারসেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। অচিরেই তারা অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবে। কিন্তু সে অভিযোগপত্র আজো পেশ করা হয় নাই। ত্বকী হত্যার পর থেকে বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোক প্রজ্বালনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।