২৫ মে ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২২:০৭, ২৪ মে ২০২৫

আজমেরী অনুসারীদের মিছিল, হোয়াইট বাবুসহ মামলায় আসামি ৮২

আজমেরী অনুসারীদের মিছিল, হোয়াইট বাবুসহ মামলায় আসামি ৮২

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ভোলাইলে অসংখ্য খুন ও চাঁদাবাজির ঘটনায় অভিযুক্ত আজমেরী ওসমানের অনুসারীদের মিছিল থেকে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাধ্যমে সড়ক ও নির্মাণাধীন ফ্ল্যাইওভারের কাজে বিঘ্ন ঘটনো এবং ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে।

ফতুল্লা মডেল থানায় দায়ের করা এ মামলায় ৩২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় অজ্ঞাত ৪০-৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

মামলায় প্রধান অভিযুক্ত করা হয়েছে কাশীপুরের সাখাওয়াত হোসেন বাবু ওরফে হোয়াইট বাবুকে। স্থানীয়ভাবে হোয়াইট বাবু বলে পরিচিত কাশীপুরের হাটখোলা এলাকার সাখাওয়াত হোসেন বাবু নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়নের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তিনি কাশীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম সাইফউল্লাহ বাদলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে হাটখোলা ও আশেপাশের এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের বিগত সময়ের শাসনামলে বাবু হাটখোলা ও আশেপাশের এলাকার হাট-মাঠ-ঘাটের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক ছিলেন। এসব কার্যক্রম বাধাহীনভাবে পরিচালনা করতে অয়ন ওসমানের কাছে নিয়মিত মাসোয়ারাও দিতেন তিনি। গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও আসন্ন ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে কাশীপুর ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী গোগনগর ইউপির তাজেক প্রধান স্কুলের পাশের অস্থায়ী পশুর হাটটির নিয়ন্ত্রণ রাখতেও মরিয়া হয়ে উঠেছেন হোয়াইট বাবু। এবং স্থানীয়ভাবে আধিপত্য এখনও তার হাতে রয়েছে এ বিষয়ের জানান দিতেই অনুসারীদের দিয়ে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ব্যানারে গোপনে মিছিলও করিয়েছেন বাবু।

গত ২০ মে রাত দশটার দিকে কাশীপুর ইউনিয়নের কাশীপুর মধ্যপাড়া এলাকায় নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের পক্ষে এ মিছিল করেন কয়েকজন তরুণ-যুবক। পরে সেখানকার বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা ওই মিছিলে ধাওয়াও দেন। এক কিশোরকে আটক করে পুলিশের দেন তারা।

পরে আটক ওই কিশোরের দেওয়া তথ্যমতে আরও তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কাশীপুর মধ্যপাড়ায় আজমেরী ওসমানের অনুসারী কয়েকজন তরুন-যুবক মিছিল করে। এ সময় নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধেও স্লোগান দেন তারা। খবর পেয়ে কাশীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মইনুল হোসেন রতনের নেতৃত্বে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ওই মিছিলকারীদের ধাওয়া দেন।

এই মিছিলের ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশিকুর রহমান বাদী হয়ে ২২ মে থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের লোকজনসহ কতিপয় সন্ত্রাসী বর্তমান রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করতে রাস্তার উপর নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট করতে জড়ো হন। তারা হাতে নিষিদ্ধ সংগঠনের ব্যানার, লাঠিসোটা, ইট-পাটকেল ও দেশী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পক্ষে শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিসহ কুখ্যাত সন্ত্রাসী আজমেরী ওসমানের ছবি সম্বলিত ব্যানার লোকজনের সামনে প্রদর্শন করে মশাল মিছিল করে মানুষের মনে ভীতির সঞ্চার করে।

এই মামলায় আরও আসামি করা হয়েছে: নগরীর পাইকপাড়া এলাকার ফয়সাল (১৮), কাশীপুর মধ্যপাড়ার উৎপল (২৭), চর কাশীপুরের আপেল (৩৫), সম্রাটহল এলাকার পাভেল (৪৫), কাশীপুর সিকদার বাড়ির অলিন্দ (৩৫), কাশীপুর মধ্যপাড়ার সবুজ শিকদার (৪০), মধ্য নরসিংহপুরের তালহা (৩৫), চর কাশীপুরের আফতাব (২৮), মারুফ (২৩), আপন (৪০), ছোট আনোয়ার (২৯), আবির (২৮), কাশীপুর চৌধুরীগাঁয়ের ইরফান (২৮), হাটখোলা এলাকার কামালকেও (৪৭)।

স্থানীয়দের অভিযোগ, হোয়াইট বাবু এলাকায় তার প্রভাব ধরে রাখতে লোকজনকে দিয়ে নিষিদ্ধ সংগঠনের পক্ষে মিছিল করিয়েছে। ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠতা রেখে বিগত আমলে আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হয়েছেন বাবু। এসব টাকা এখন তিনি খরচ করছেন এবং স্থানীয় সন্ত্রাসীদের শেল্টার দিচ্ছেন। স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতাও নিয়মিত আর্থিক সুবিধা নিয়ে বাবুকে পুনর্বাসনের চেষ্টায় রয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়