২০ নভেম্বর ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২১:০৭, ২০ নভেম্বর ২০২৫

বিভক্ত বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করলেন মাসুদুজ্জামান

বিভক্ত বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করলেন মাসুদুজ্জামান

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার পর ব্যবসায়ী মাসুদুজ্জামান মাসুদ দলের ভেতর-বাইরের নতুন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন। তরুণ বয়সে যুবদলের রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও দীর্ঘদিন ব্যবসায় মনোযোগী ছিলেন তিনি। তবু তৃণমূলে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা এবং দুর্দিনে পাশে থাকার কারণে এলাকায় ধীরে গড়ে ওঠে তার গ্রহণযোগ্যতা। বিগত সময়ে সমাজসেবা, ক্রীড়া ও শিক্ষাঙ্গণেও ভূমিকা রাখায় সাধারণ মানুষের মাঝেও পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি। তারপরও আসনটিতে মনোনয়নকে ঘিরে নানা প্রতিকূলতা, অভ্যন্তরীণ ক্ষোভ ও বিরোধ সামলেও শেষ পর্যন্ত তিনি তৃণমূলের বিভিন্ন বলয়কে একত্র করতে সক্ষম হয়েছেন, যা স্থানীয় রাজনীতিতে তার ব্যক্তিগত কারিশমারই প্রভাব বলে মনে করছেন অনেকেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ নগরীর তল্লা এলাকা জন্ম নেওয়া মাসুদুজ্জামানের কৈশোর ও তরুণ বয়স কেটেছে এ শহরেই। তরুণ বয়সে যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন মাসুদুজ্জামান মাসুদ। নগরীর একটি ওয়ার্ড কমিটির সভাপতিও ছিলেন। পরে ব্যবসায়ে মনোনিবেশ করেন, ব্যবসায়ীদের নেতৃত্বও দেন। তিনি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি। শিক্ষা, ক্রীড়া ও সমাজসেবায় আবদান রাখা মাসুদুজ্জামান সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত এক মুখ। বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও তার অবদানের কথা তুলে ধরেছেন বিভিন্ন সময়। এ বিএনপি নেতা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নেপথ্যে থেকে নানাভাবে দল ও দলের নেতা-কর্মীদের সহযোগিতা করেছেন। গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানেও ছাত্র-জনতার পক্ষে ভূমিকা রেখেছেন তিনি।

গণঅভ্যুত্থানের পর গড়ে ওঠা নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন মাসুদুজ্জামান। জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী মাসুদ বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। দলও তার বিগত দিনের ভূমিকাকে বিবেচনায় নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দলে যোগদানের নির্দেশ দেয়। পরে গত সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে দলে যোগ দেন।

গত ৩ নভেম্বর স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে সারাদেশে ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে বিএনপি। ওইদিন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে মাসুদুজ্জামান মাসুদের নাম ঘোষণা করা হয়।

কিন্তু আসনটিতে মাসুদুজ্জামান ছাড়াও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, প্রাইম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু জাফর আহমেদ বাবুল, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সিটি কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও শিক্ষক আলিয়ার হোসেনসহ আরও কয়েকজন।

মনোনয়ন পাওয়ার পর মাসুদুজ্জামান সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দলের স্বার্থে কাজ করার আহ্বান জানালেও তাতে সাড়া দেননি মনোনয়নবঞ্চিত চার নেতাÑ আবুল কালাম, সাখাওয়াত হোসেন খান, আবু আল ইউসুফ খান টিপু ও আবু জাফর বাবুল। উল্টো তারা নিজেদের ঘনিষ্ঠ অনুসারীদের নিয়ে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচারণায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সংবাদ সম্মেলন করে সরাসরি বিরোধীতাই কেবল নয়, এ আসনে প্রার্থী বাতিল করে তাদের মধ্যে কাউকে দেওয়ার আহ্বানও কেন্দ্রে জানান এই চার নেতা।

দলীয় নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, শিল্পপতি আবু জাফর আহমেদ বাবুলের নেতৃত্বে মূলত অপর তিন নেতা একজোট হয়েছেন। দলীয় প্রার্থীর বিরোধীতা পক্ষান্তরে দলের বিরোধীতা হলেও তারা কোনো তোয়াক্কা করছেন না। বরং প্রতিনিয়ত পাল্টা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ধানের শীষের প্রার্থীকে চাপে রাখার প্রয়াসে ব্যস্ত তারা।

কিন্তু শুরু থেকে বিভাজনের রাজনীতির বদলে ঐক্যের ডাক দিয়ে গেছেন মাসুদুজ্জামান। তিনি চূড়ান্তভাবে দলের প্রার্থী ঘোষণার আগেও সকলকে সাথে নিয়ে এগোনোর আহ্বান দিয়ে গেছেন। এমনকি মনোনয়ন পাওয়ার পরও প্রত্যেকের বাড়িতে গিয়েছেন তিনি। মনোনয়ন-বঞ্চিতদের অনেকে দলের স্বার্থে সাড়া দিলেও ওই চার নেতা বেঁকে বসে আছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার বিষোদগার না করে দলের নির্দেশনা মেনে নির্বাচনকে ঘিরে নিজ পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। এবং এতে সাথে পাচ্ছেন দলের তৃণমূলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদেরও।

বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা বলছেন, দলের নির্দেশনা ছিল সকলকে একত্রে নিয়ে এগোনোর। দলের প্রার্থী আহ্বানে সকলে সাড়াও দিয়েছে। বিদ্রোহী কয়েকজন তাদের অবস্থান নিয়ে থাকলেও তাদের অনুসারী অনেকেই দলের স্বার্থে ভিড়ছেন ধানের শীষের প্রার্থীর দিকে। পেছনে না তাকিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন মাসুদুজ্জামানও।

ইতোমধ্যে তিনি তার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধন করেছেন। অঞ্চলভিত্তিক ত্যাগী ও প্রবীণ নেতাদের তিনি আকৃষ্ট করছেন তার বিনয়ী আচরণের মধ্য দিয়ে। মনোনয়ন-বঞ্চিত নেতাদের মধ্যে মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদও তার প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। সমর্থন দিয়েছেন বিএনপিপন্থী শিক্ষক আলিয়ার হোসেনও। এমনকি সদর ও বন্দরের বিভিন্ন ইউনিটের প্রবীণ ও তরুণ নেতাদের পাশাপাশি যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, কৃষক দল, তাঁতী দলের নেতা-কর্মীরা ধানের শীষের প্রচারণায় ব্যস্ত। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে বিএনপিপন্থী সাবেক কাউন্সিলরদের মধ্যে শওকত হাশেম শকু, অহিদুল ইসলাম ছক্কু, শাহেন শাহ, গোলাম নবী মুরাদ ও শামসুজ্জোহার মতো নেতারাও ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন।

অন্যদিকে, তার পক্ষে শুরু থেকেই কাজ করে যাচ্ছেন প্রবীণ নেতা নূর ইসলাম সর্দার, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সবুর খান সেন্টু, আনোয়ার হোসেন আনু, মহানগর বিএনপির সদস্য শরিফুল ইসলাম শিপলু, সদর থানা বিএনপির সভাপতি মাসুদ রানা, বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ, সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ লিটন, মহানগর মহিলা দলের সভাপতি দিলারা মাসুদ ময়নাসহ তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মী।
দলের সহযোগী সংগঠন যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরাও রয়েছেন ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে। তাদের মধ্যে মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল, সদস্য সচিব শাহেদ আহমেদ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সাখাওয়াত ইসলাম রানা, মহানগর কৃষক দলের সভাপতি এনামুল খন্দকার স্বপন, ছাত্রদল নেতা মনির হোসেন জিয়া গণসংযোগে নিয়মিত মুখ হয়ে উঠেছেন। তাদের অনুসারী কর্মীরাও ঝাপিয়ে পড়েছেন নির্বাচনী মাঠে ধানের শীষের প্রার্থীকে জয়ি করতে।

মাসুদুজ্জামান আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছেন সদর ও বন্দরের হেভিওয়েট নেতাদেরও। মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি সদরের দক্ষিণে বিএনপির মধ্যে প্রভাবশালী ও প্রবীণ নেতা এম এ মজিদ এবং তার ভাই হাসান আহমেদও ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। বন্দরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যেও প্রভাব রাখা আতাউর রহমান মুকুল, নুরু উদ্দিন আহমেদও আছেন মাসুদুজ্জামানের সাথে। 

এসব নেতারা বহু বছর ধরে মতবিরোধে বিভক্ত ছিলেন। দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতেও তাদের বিভক্তি নজরে আসতো। কিন্তু নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব বিভক্ত বলয়গুলোকে একসুতোয় গাঁথতে সক্ষম হয়েছেন মাসুদুজ্জামান। পুরোনো দ্বন্দ্ব ও বিভেদ ভুলে তারা দলের স্বার্থে মাসুদুজ্জামানকে বিজয়ী করতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা বলছেন, মাসুদুজ্জামান উড়ে এসে জুড়ে বসা নেতা না। তিনি বিগত সময়েও দলের পাশে ছিলেন। সবাই রাজপথে থাকেন না, কেউ কেউ দলের জন্য নেপথ্যে থেকে কাজ করেন। এবং তারই পুরষ্কার হিসেবে নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসনটিতে তাকে মনোনীত করেছে দল। এই পুরষ্কারের যে তিনি যোগ্য তার প্রমাণও দিয়েছেন তিনি। ইতোমধ্যে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে তিনি সদর ও বন্দরে সকল নেতা-কর্মীদের একত্র করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি এগোচ্ছেন খুবই গোছানোভাবে পরিকল্পনামাফিক। দলের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছে ধানের শীষের বার্তা পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মাসুদুজ্জামান দেখিয়েছেন যে তৃণমূলের সঙ্গে নিবিড় সংযোগ, বিনয়ী আচরণ এবং দীর্ঘ দিনের অবদানই কেবল নেতা হিসেবে কাউকে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে সহযোগিতা করে। নিজের ব্যক্তিগত কারিশমা ও কৌশলের মাধ্যমে তিনি সদর ও বন্দরের সব স্তরের নেতা-কর্মীকে একত্র করেছেন। মনোনয়ন-বঞ্চিত কিছু নেতার বিরোধ থাকা সত্ত্বেও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এভাবে ধানের শীষের বার্তাকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির শক্ত অবস্থান তৈরি করছেন মাসুদুজ্জামান মাসুদ, যা প্রমাণ করে বিদ্বেষ, বিভাজন নয় বরং ধারাবাহিক নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী সাফল্য অর্জন সম্ভব।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়