২৪ জুলাই ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২২:২২, ২৩ জুলাই ২০২৫

চুক্তিতে কদমরসুল সেতুর জন্য ১৩ গুণ বেশি জমি পেয়েছিল নাসিক

চুক্তিতে কদমরসুল সেতুর জন্য ১৩ গুণ বেশি জমি পেয়েছিল নাসিক

শীতলক্ষ্যা নদীর উপর কদমরসুল সেতু ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ডাবল রেললাইন (ডুয়েল গেজ) প্রকল্প দু’টি নারায়ণগঞ্জের অতিগুরুত্বপূর্ণ ও জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রকল্প। দুই বছর আগে এই দুই প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের জমি বিনিময়ের একটি সমঝোতা চুক্তি হয়। ওই চুক্তিতে রেলকে ১২ শতাংশ জমি দেওয়ার বিপরীতে ১৩ গুণ বেশি জমি পেয়েছিল নাসিক। 

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৮ এপ্রিল চুক্তিটি স্বাক্ষর হয়। চুক্তিতে কদমরসুল সেতু নির্মাণের জন্য রেলের ১৬৩ শতাংশ জমি পায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন। বিপরীতে ডাবল রেললাইনের জন্য ১২ শতাংশ জমি দেবার চুক্তি করে নাসিক। তখন নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র ছিলেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। তার উদ্যোগেই শীতলক্ষ্যার দুইপাড়ের মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে এগিয়েছিল কদমরসুল সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কার্যক্রম। অনেক বাধাবিপত্তির পর রেলওয়ে ছাড়াও খাদ্য মন্ত্রণালয় ও কুমুদিনীর সঙ্গেও জমি সংক্রান্ত জটিলতা মেটানো হয়। তাছাড়া দু’টি প্রকল্প নারায়ণগঞ্জের অতিগুরুত্বপূর্ণ ও জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রকল্প হওয়ায় এই সমঝোতা চুক্তি করা হয় বলে জানা গেছে। 

তবে নাসিকের দেওয়া এ জমি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ নাগরিক আন্দোলন নামে একটি সংগঠন এ চুক্তিকে ‘অপরিকল্পিত ও জনস্বার্থবিরোধী’ উল্লেখ করে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছে। গত মঙ্গলবার সংগঠনটির আহ্বায়ক রফিউর রাব্বির পাঠানো ওই বিবৃতিতে নাসিক ও রেলের এই চুক্তি বাতিলেরও দাবি জানিয়েছেন।

এ চুক্তিকে ‘অপরিকল্পিত ও জনস্বার্থবিরোধী’ বলে মানতে নারাজ নাসিকের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, চুক্তি নিয়ে সম্প্রতি বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তবে, চুক্তি করার সময় নারায়ণগঞ্জবাসীর স্বার্থই আগে বিবেচিত হয়েছে। এ চুক্তি কোনো বাণিজ্যিক স্বার্থে হয়নি, বরং অতিগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রীয় দু’টি দপ্তরের মধ্যকার এ চুক্তি নারায়ণগঞ্জবাসীর স্বার্থেই।

সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল ও ভূ-সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সিটিকে দুইভাগে ভাগ করেছে শীতলক্ষ্যা সেতু। দুইপাড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে এ নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি বহুদিনের। কয়েক বছর আগে শহরের ৫ নম্বর ঘাট দিয়ে কদমরসুল সেতু নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হলে সরকারিভাবে অধিগ্রহণের পরও তখন রেলওয়ের বেশকিছু জমি প্রয়োজন হয় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের। তখন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ডুয়েল গেজ প্রকল্পও চলমান ছিল। তখন ওই প্রকল্পের জন্যও কিছু জমি প্রয়োজন হয় রেল বিভাগের, যার মালিক নাসিক। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোর মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক ও পর্যালোচনার পর জনগুরুত্বপূর্ণ দু’টি প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষে জমি বিনিময়ের চুক্তিটি হয়।

তবে, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক আন্দোলনের নেতারা বলছেন, সিটি কর্পোরেশন নগরীর ১ নম্বর রেলগেইট থেকে ২ নম্বর রেলগেইট পর্যন্ত জমি দেবার চুক্তি করেছে। সোহরাওয়ার্দী সড়কের দক্ষিণ দিকের এ জমি দেওয়া হবে রেলকে। এতে ব্যস্ত এ সড়কটি আরও সংকুচিত হয়ে যাবে। এতে সড়কটিতে যানজট বাড়বে এবং যা শহরকে অচল অবস্থায় নিয়ে যাবে বলে মনে করেন রফিউর রাব্বি। তিনি বলেন, “এখনই সোহরাওয়ার্দী সড়কে সীমাহীন দুর্ভোগ লেগে আছে। ঢাকাগামী বাস রাস্তার দক্ষিণপাশে রেখে রাস্তাকে সংকুচিত করে ফেলেছে। এর মধ্যে এ সড়ক আরও ১৪ ফুট সংকুচিত হলে তা হয়ে উঠবে ওয়ানওয়ে সড়ক। আমরা জানিনা এমনি জনগুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কী ভাবে জনগণের মতামত না নিয়ে, মতামতকে তোয়াক্কা না করে সিটি কর্পোরেশন গ্রহণ করে থাকে। আমরা এই সমঝোতা স্মারকের তীব্র নিন্দা জানাই।”

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নাসিকের প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, “চুক্তিটি জনস্বার্থেই করা হয়েছিল। দু’টি প্রকল্পই গুরুত্বপূর্ণ। দুই প্রকল্পই এই শহরের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সুন্দর ও উন্নত করার লক্ষে পরিকল্পিত। তাছাড়া, অন্তত ৫০ ফুট এ সড়কটির দুই পাশে হকার ও অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে ২০ ফুটের মতো সবসময়ই দখলে থাকে। রেলওয়ে তার মূল লাইন থেকে দুই পাশে স্বাভাবিকতই অতিরিক্ত জমি খালি রাখে। এই খালি জমি রাখার জন্যই সড়কের ১৪ ফুট জমি তাদের দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। প্রকল্প দু’টি সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন হলে এখন যে আশঙ্কা করা হচ্ছে সেইটা হতো না।”

এদিকে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডুয়েল গেজ প্রকল্পটি চাষাঢ়া থেকে মাটির উপর দিয়ে সরাসরি না এনে উড়াল ও পাতাল দিয়ে নেওয়ার প্রস্তাবনা এসেছে। শহর থেকে বাস টার্মিনাল সরিয়ে নেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে। এক্ষেত্রে সড়কটিতে তীব্র যে যানজটের সম্ভবনার কথা বলা হচ্ছে তা হবে না বলেও মনে করেন নাসিকের এ কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন একটি গণমাধ্যমে বলেন, “এ চুক্তি আগে করা হয়েছিল। সড়কের জায়গা রেলওয়েকে দেওয়া হলে নগরী অচল ও যানজট বাড়ার অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এটার পক্ষে-বিপক্ষে দুই দিকেই আলাপ আছে। যারাই উদ্বেগ জানিয়েছেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।”

তবে, রেলের সঙ্গে এ চুক্তি বাতিলের যে দাবি উঠেছে তা বাস্তবায়ন হলে শীতলক্ষ্যা নদীর উপর কদমরসুল সেতু নির্মাণের প্রকল্প আরও পেছানো এবং বাতিল হওয়ার সম্ভবনাও তৈরি হয়েছে। কেননা, রেলওয়েকে ১২ শতাংশ জমি দেওয়ার বিপরীতে ১৬৩ শতাংশ জমি পাবার কথা ছিল সিটি কর্পোরেশনের। যা শীতলক্ষ্যা সেতু প্রকল্পের জন্য প্রয়োজন ছিল।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়