১৯ জুলাই ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২২:১১, ১৮ জুলাই ২০২৫

নারায়ণগঞ্জে সহাবস্থানের নজির দেখালো রাজনৈতিক দলগুলো

নারায়ণগঞ্জে সহাবস্থানের নজির দেখালো রাজনৈতিক দলগুলো

রাজনৈতিক উত্তেজনার সময়েও সহাবস্থানের বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করল নারায়ণগঞ্জ। রাজধানীসংলগ্ন এই শহরে শুক্রবার (১৮ জুলাই) একদিনেই পাঁচটি ভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার প্রতিটিই ছিল উল্লেখযোগ্য জনসমাগমে ভরপুর এবং সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। 

দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে একসঙ্গে চলেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, গণসংহতি আন্দোলন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বিভিন্ন কর্মসূচি। তবে এতগুলো দল একই সময়ে মাঠে থাকলেও কোথাও কোনো সংঘর্ষ, উত্তেজনা বা বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেনি। শহরের দুই কিলোমিটার এলাকার মধ্যে একই সময়ে কর্মসূচির আয়োজন করা হলেও কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে কেটেছে দিনটি।

স্থানীয়দের মতে, এটি সহাবস্থানের রাজনীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত। কেউ কেউ এটিকে “রাজনৈতিক পরিপক্বতার নতুন সূচনা” বলেও আখ্যায়িত করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং সমন্বিত প্রস্তুতিকেও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য কৃতিত্ব দিচ্ছেন শহরবাসী।

গত বছরের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অদৃশ্য জোট গড়েছিল দেশের রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক মতপার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে রাজনীতিকরা ‘ফ্যাসিবাদের’ বিরুদ্ধে লড়েছিল হাতে হাত রেখে। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের কয়েক মাস পরই যখন ভোটের রাজনীতির হিসেব আসলো তখন দিন দিন সম্পর্কে অবনতি হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। জাতীয় রাজানীতির হিসেব-নিকেশ স্থানীয় পর্যায়েও চলছে। রাজনৈতিক নেতারা একে-অপরকে ঘায়েল করে প্রকাশ্যে বক্তব্যও দিচ্ছেন।

এমন পরিস্থিতিতে একইদিন দুপুরের পর কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি, এনসিপি, জামায়াতে ইসলামী, গণসংহতি আন্দোলন ও ইসলামী আন্দোলন। একইদিন প্রায় কাছাকাছি স্থানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলেও কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কোনো বাদানুবাদ বা বিশৃঙ্খলা হয়নি।

গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের সমন্বয়ে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি নারায়ণগঞ্জে ঘোষণা করে। নগরীর নিতাইগঞ্জ মোড় থেকে পায়ে হেঁটে হাজারো নেতা-কর্মীকে নিয়ে চাষাঢ়ায় এসো জড়ো হন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলটির প্রধান ও অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা, যুগ্ম সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সার্জিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক শওকত আলী, নারায়ণগঞ্জ জেলার যুগ্ম সমন্বয়কারী আহমেদুর রহমান তনু প্রমুখ।

সাড়ে ছয়টার দিকে পদযাত্রা শেষ করে এনসিপির গাড়িবহর চাষাঢ়া-আদমজী সড়ক হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় বলে জানান নেতারা।

এনসিপির সমাবেশ যখন চাষাঢ়া চত্ত্বরে চলছিল তখন পাশেই শহীদ মিনারে চলছিল গণসংহতি আন্দোলনেরও জুলাই সমাবেশ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন দলটির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।

একই সময়ে এক কিলোমিটার দূরে শহরের ডিআইটি এলাকায় চলছিল ইসলামী আন্দোলনের সমাবেশ। হাজারো নেতা-কর্মীর এ সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন দলটির আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম।

অন্যদিকে দুপুরে জামায়াতে ইসলামীর নারায়ণগঞ্জ মহানগরের নেতা-কর্মীরা শহরে মিছিল করেন। আগামী শনিবার ঢাকায় দলটির মহাসমাবেশ উপলক্ষে এ মিছিল করেন তারা।

বিকেলে চাষাঢ়ার পাশে মিশনপাড়ায় ছিল বিএনপির কর্মসূচি। দলটির নারায়ণগঞ্জ মহানগর শাখার নেতা-কর্মীরা জুলাই শহীদদের স্মরণে শহরে মৌন মিছিল করেন।

পাঁচটি দলের এই কর্মসূচিকে ঘিরে শহরে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা থাকলেও এমন কোনো ঘটনা সারাদিনে ঘটেনি। বরং শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হয় প্রতিটি কর্মসূচি।
পাঁচটি রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শহরে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না ঘটে, সেজন্য প্রশাসন ছিল তৎপর। শহরজুড়ে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়, পাশাপাশি নিরাপত্তা জোরদারে বিজিবিও মাঠে ছিল।

রাজনৈতিক দলগুলোর এই শৃঙ্খলাবদ্ধ ও সহনশীল অবস্থান একদিকে যেমন ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে, অন্যদিকে প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এটি একটি সফল নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়