১৯ জুলাই ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২০:০৪, ১৮ জুলাই ২০২৫

আপডেট: ২০:৩৪, ১৮ জুলাই ২০২৫

জুলাই বলছে, ঘৃণার রাজনীতি আর চলবে না: সাকি

জুলাই বলছে, ঘৃণার রাজনীতি আর চলবে না: সাকি

বাংলাদেশের রাজনীতির সংকট উত্তরণে জনগণের অংশগ্রহণমূলক, জবাবদিহিমূলক ও বৈষম্যহীন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেছেন, “জুলাই আমাদের কয়েকটি বিষয়ে রায় দিয়ে গেছে। জুলাই শহীদ সারাদেশের মানুষদের এক সুতায় গেঁথেছিল। রংপুরে আবু সাঈদ বুকে গুলি নিয়ে সারাদেশে যে দাবানল সৃষ্টি করেছিল, সে দাবানলের রায় যদি গ্রহণ করতে চাই, বুকে ধারণ করি—আগামীর বাংলাদেশ হবে জনগণের বাংলাদেশ।”

শুক্রবার (১৮ জুলাই) নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া শহিদ মিনারে আয়োজিত গণসংহতি আন্দোলনের ‘সমাবেশ ও শহিদী মার্চ’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

সাকি বলেন, “আমরা দেখেছি, মুষ্টিমেয় লোক ক্ষমতা ব্যবহার করে ধন-সম্পদ আহরণ করে। আজকের অভ্যুত্থানের পরে দেখছি, ক্ষমতা ব্যবহার করে নানান দখল আর ধন-সম্পদ আহরণ চলছে। কেউ চাঁদাবাজি প্রকাশ্যে করে, কেউ গোপনে ধন-সম্পদ আহরণ করেন। ক্ষমতা ব্যবহার করে ধন-সম্পদ আহরণ করে সেই দেশের কোনো উন্নতি হয় না। জুলাই স্পষ্ট করে বলছে—এই দেশ জনগণের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দেশ। ক্ষমতা ব্যবহার করে ধন-সম্পদ আহরণের যে ব্যবস্থা, তাকে বদল করতে হবে। সেটাই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত।”

তিনি বলেন, “জুলাই পরিষ্কার করে বলছে—ঘৃণার রাজনীতি আর বাংলাদেশে চলবে না। ঘৃণার, নির্মূলের রাজনীতি আওয়ামী লীগ করেছে। ঘৃণা, নির্মূল, গণহত্যার রাজনীতি আমরা ২০২৪ সালে দেখেছি। এর বদলে আমরা বৈষম্যহীন আর অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ চাই। এটাই জুলাইয়ের রায়। এসব বিষয় নিয়ে আপনাদের ভাবতে হবে।”

গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। গণসংহতির জেলার নির্বাহী সমন্বয়কারী অঞ্জন দাসের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটির সমন্বয়কারী বিপ্লব খান, নির্বাহী সমন্বয়কারী পপি রাণী সরকার, জেলা কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী আলমগীর হোসেন আলম, প্রচার সম্পাদক শুভ দেব, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউর রহমান, জেলা ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি ফারহানা মানিক মুনা, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি'র জেলা আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন।

সমাবেশের আগে গণঅভ্যুত্থানে নারায়ণগঞ্জে শহিদ ৫৪ জনের ছবি সম্বলিত একটি মিছিল নারায়ণগঞ্জ শহর প্রদক্ষিণ করে।

নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, “নতুন বন্দোবস্ত মানেই সংস্কার করতে হবে। আর সেই সংস্কার জনগণের সম্মতি নিয়ে করতে হবে, মানে নির্বাচন করতে হবে। যারা বিচার আর সংস্কারের সাথে নির্বাচনের দ্বন্দ্ব করেন, তারা আসলে জনগণের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চান না। জনগণের বাংলাদেশ মানে—বিচার চাই, সংস্কার চাই, নির্বাচন চাই। জনগণের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে আগামী দিনে এমন ক্ষমতা-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যে ক্ষমতা জনগণের কাছে জবাবদিহি করবে। সেটাই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত।”

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশকে সেই বন্দোবস্ত গড়ে তোলার জন্য, জনগণের অধিকার, মর্যাদা, বৈষম্যহীন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য আমাদের জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তি দরকার। এই দেশের জনগণ মানে সমস্ত শ্রমজীবী মানুষ। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষ, যে ধর্মেরই হোক, যে পরিচয়েরই হোক—তাকে নাগরিকের মর্যাদা দেওয়া, এটাই জুলাইয়ের রায়।”

“আর সেই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হলে জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তি দরকার। চাঁদাবাজি, দখলদারি, বড়লোকের কাছ থেকে টাকার ভার—কোনো কিছু দিয়েই ক্ষমতা ব্যবহার করে জনগণের শক্তিকে এড়ানো যাবে না। আপনি কীভাবে সংগঠিত হচ্ছেন, তার উপর নির্ভর করবে ক্ষমতায় গিয়ে আপনি কী করবেন। আমরা দেখছি, ক্ষমতায় পুরোপুরি না গিয়েও অনেকে অনেক কিছু করছেন। সব আমলনামা খেলা হচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণের কাছে প্রতিটি বিষয়ের জবাবদিহি করতে হবে।”

জোনায়েদ সাকি বলেন, “আমরা একটি জাতীয় সংকট, ক্রান্তিকালের মধ্যে আছি। পাশের দেশসহ নানা শক্তি ওই পতিত ফ্যাসিস্টদের পৃষ্ঠপোষক। তারা ষড়যন্ত্র করেই চলেছে। আমরা সরকারকে দেখেছি, তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর করতে পারেনি। যার ফলে মিডফোর্ডের সামনে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে, গোপালগঞ্জে এনসিপির পূর্বনির্ধারিত সমাবেশে হামলা হয় এবং ৪ জন নিহত হন। বহিঃশক্তি পতিত ফ্যাসিস্টদের নানা ভাবে উসকানি দিয়ে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।”

তিনি বলেন, “আমাদের সেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে। জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষায় আমাদের মধ্যে ন্যূনতম জাতীয় ঐক্য রক্ষা করতে হবে। আমাদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে, নির্বাচনে তা আরও বাড়বে। কিন্তু একটি যথাযথ রাজনৈতিক উত্তরণ এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের মধ্যে ন্যূনতম ঐক্য রক্ষা করতে না পারলে ফ্যাসিস্টরা এই সুযোগ গ্রহণ করবে এবং আমাদের অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করতে চাইবে।”

তিনি বলেন, “আমরা ঐক্যবদ্ধ শক্তি দিয়ে এই দেশে রাষ্ট্রীয় গণতন্ত্র পুনর্দখল করে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করব। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হবে। আগামী সংসদ হবে সংবিধান সংস্কার পরিষদের সংসদ। জনগণের সম্মতি ছাড়া সংবিধানের টেকসই সংস্কার সম্ভব নয়। সংস্কার বিষয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি—তাই সংবিধানকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার টেকসই হাতিয়ারে পরিণত করতে হবে।”

সাবধানতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “ষড়যন্ত্রকারীদের সম্পর্কে সতর্ক থাকবেন। নানা ঘটনা ঘটিয়ে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে তারা বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে বন্ধ করে দিতে চায়। দেশের জাতীয় স্বার্থ, জনগণের স্বার্থ, শহীদের রক্তের ঋণ—এই দেশের বিচার, সংস্কার এবং নির্বাচন। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি, বিজয় আমাদের অনিবার্য।”

শেষে তিনি বলেন, “শহীদদের রক্তের ঋণকে ধারণ করুন। শহীদদের চাইতে বড় হতে চাইবেন না। শহীদদের চাইতে বড় হয়ে আমরা বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারব না। শহীদদের ঋণ ও বন্ধনকে ধারণ করে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থাকে কবর দিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পৌঁছাবো।”

সর্বশেষ

জনপ্রিয়