১২ ডিসেম্বর ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৩:২০, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫

নির্বাচনী তফসিলে স্বাগত, শঙ্কার কথাও জানালেন প্রার্থীরা

নির্বাচনী তফসিলে স্বাগত, শঙ্কার কথাও জানালেন প্রার্থীরা

দেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তফসিল ঘোষণার পর নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনেও নড়াচড়া শুরু হয়েছে। নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা মাঠপর্যায়ে ‘ভয়ভীতি’, ‘পোস্টার ছেঁড়া’, ‘অবাধ পরিবেশের অভাব’ ও ‘অবৈধ অস্ত্রের বিস্তার’ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রত্যাশা থাকলেও উপযুক্ত নির্বাচনী পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি বলে মনে করছেন অধিকাংশ প্রার্থী।

তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, “তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে দেশ নির্বাচনী মহাসড়কে চলতে শুরু করলো। জনগণের এবং আমাদের প্রত্যাশা হলো একটি সুষ্ঠ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ এগিয়ে যাবে। সেইসাথে গণতান্ত্রিক দ্বার খুলবে। আমরা সে প্রত্যাশা করি।”

নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে জামায়তে ইসলামীর প্রার্থী ইলিয়াস মোল্লা বলেন, “আমরা নির্বাচনমুখী দল। তফসিল ঘোষণা হয়েছে, একে আমি স্বাগত জানাই। তবে মাঠে-ময়দানে এখনো ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আজ পূর্ব নির্ধারিত এক জায়গায় আমাদের উঠান-বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কে বা কারা ওই জায়গার মালিককে পুলিশি হয়রানির ভয় দেখায়। শেষে সে লোক আমাদের জানান, তার ওইখানে বৈঠক সম্ভব না। এছাড়া আমাদের পোস্টার ছেঁড়া, ফেস্টুন সরিয়ে অন্যদের ফেস্টুন টানানোর মতো ঘটনা ঘটছে। ফলে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।”

গণসংহতি আন্দোলনের প্রার্থী তরিকুল ইসলাম সুজন বলেন, “ইলেকশন হবে কিনা তা নিয়ে যে শঙ্কা ছিল, আজ তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে সে শঙ্কা কেটেছে। এজন্য নির্বাচন কমিশন ও অন্তর্বর্তী সরকারকে সাধুবাদ।”

“বিগত সময়ে নির্বাচনে আমরা টাকা ও পেশীশক্তির খেলা দেখেছি। এই নির্বাচন শুধু ক্ষমতার পালাবদল না, কাঠামোর বদল। আমরা আশা করি, সরকার ও নির্বাচন কমিশন আমাদের একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিবে। তবে এখনো উপযুক্ত নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে আমরা মনে করি না।”

তিনি আরও বলেন, “এখনই বিভিন্ন জায়গায় প্রার্থীদের পোস্টার ছেঁড়া ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পোস্টারের উপর আরেক প্রার্থীর পোস্টার সাঁটানো এবং এ নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে মারধরের ঘটনা আমরা লক্ষ্য করছি। জেলায় অপরাধের মাত্রা বেড়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এসব শক্ত হাতে মোকাবেলা করতে হবে।”

তরিকুল বলেন, “মানুষ পরিবর্তন চায়। মানুষ চায় টাকার খেলা ও পেশীশক্তির ব্যবহার বন্ধ করে একটি নির্বাচনী পরিবেশ। যেখানে ভোটাররা কোনো রকম প্রভাব ছাড়া তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে পারবে। তাই প্রশাসনকে একটি উপযুক্ত নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।”

তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে এনসিপির প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল আমিন “নিরপেক্ষ নির্বাচনী পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয়তা” নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। 

তিনি বলেন, “গত এক সপ্তাহে বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। গতকাল আমাদের তিনজন কর্মীকে মারধর করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা নির্বাচন নিয়ে শঙ্কিত। নির্বাচনেও পেশীশক্তির ব্যবহার হতে পারে বলে শঙ্কা আমাদের। এমন পরিস্থিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও অ্যাকটিভ হতে হবে।”

খেলাফত মজলিসের প্রার্থী ইলিয়াস আহমদ বলেন, “আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী। গত ১৬ বছর শাসনের নামে জনগণকে শোষণ করা হয়েছে। বৈষম্য দূর করা, ন্যায়বিচার কোনোটিই প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বরং ইসলাম বিদ্বেষী কাজ চলেছে। তাই মানুষ চায় যোগ্য ব্যক্তি ও যোগ্য নেতৃত্ব। সেক্ষেত্রে ইসলামী আদর্শবাদী দলগুলোর প্রতি জনগণ আশাবাদী।”

তিনি আরও বলেন, “সকল দল নির্বাচনে অংশগ্রহন করছে, যা স্বতস্ফূর্ত ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে।”

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়ে এ প্রার্থী আরও বলেন, “জুলাই আন্দোলনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক অস্ত্র লুট হয়েছে যা এখানো উদ্ধার করা যায়নি। এছাড়া অবৈধ অস্ত্রতো রয়েছেই। সম্প্রতি সময়ে নারায়ণগঞ্জে অবৈধ অস্ত্র প্রদর্শণ ও অস্ত্রের মহড়ার ঘটনাও দেখা যাচ্ছে। এসব ঘটনায় প্রদর্শিত অস্ত্রগুলোর বিষয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এসব অবৈধ অস্ত্র নিয়ে আমরা শঙ্কিত। এ বিষয়ে আমরা বরাবর প্রশাসনকে বলেছি। এসব অস্ত্র উদ্ধার না হলে, আসন্ন নির্বাচনে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার ঘটতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করি।” 

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ২৯ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের ১১ জানুয়ারি এবং আপিল নিষ্পত্তি হবে ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও প্রতীক বরাদ্দ করা হবে ২১ জানুয়ারি। নির্বাচনী প্রচার শুরু হবে ২২ জানুয়ারি, প্রচার শেষ হবে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে সাতটায়। ১২ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ৩০০ সংসদীয় আসনে ভোট গ্রহণ করা হবে।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়