সম্ভাব্য নির্বাচন কর্মকর্তাদের সাথে চলছে জামায়াত প্রার্থীদের সভা
নারায়ণগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন। সাধারণত এসব শিক্ষকরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও পোলিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করে থাকেন। সম্ভাব্য নির্বাচনী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রার্থীদের এই বৈঠক ভোটে পক্ষপাতিত্বের আশঙ্কা তৈরি করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েকদিনে নারায়ণগঞ্জ-৪ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে জামায়াতে ইসলামের মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন। এ দুই প্রার্থী তাদের নিজস্ব ফেসবুক একাউন্ট ও পেজে এসব সভার ছবিও প্রকাশ করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ঘেঁটে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মঈনুদ্দিন আহমাদ নগরীর মাসদাইর এলাকায় অবস্থিত আদর্শ স্কুলে শিক্ষকদের সঙ্গে সভা করেছেন। বৃহস্পতিবার তিনি এ সভার কয়েকটি ছবিও প্রকাশ করেছেন।
ছবির সঙ্গে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “আদর্শ স্কুল নারায়ণগঞ্জের শিক্ষকদের নিয়ে মতবিনিময় করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি প্রার্থী মঈনুদ্দিন আহমাদ।”
একইদিন তিনি নগরীর আরেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মর্গ্যান গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকেরও কিছু ছবি প্রকাশ করেছেন।
আগেরদিন, বুধবার ডিআইটি এলাকার গণবিদ্যা নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জ ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা, বেগম রোকেয়া খন্দকার পৌর উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকের ছবিও প্রকাশ করেন।
এছাড়া, আদর্শ স্কুল জামে মসজিদ ও নবীগঞ্জ ইসলামাবাদ জামে মসজিদে মতবিনিময়ের কিছু ছবিও মঈনুদ্দিন আহমাদের ফেসবুক পেজে দেখা যায়।
একইভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে জামায়াতের প্রার্থী আবদুল জব্বারও। তিনিও এসব বৈঠকের বেশকিছু ছবি নিজের ফেসবুক একাউন্ট ও পেজে প্রকাশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার নিজ ফেসবুক পেজে আদর্শ স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার কিছু ছবি প্রকাশ করেছেন আব্দুল জব্বার। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আদর্শ স্কুল নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাথে এক শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি প্রার্থী মাওলানা আবদুল জব্বার। সভায় শিক্ষার সার্বিক উন্নয়ন, ছাত্রছাত্রীদের নৈতিক-মানসিক বিকাশ, আধুনিক শিক্ষা-ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা, এবং শিক্ষকদের সম্মান-সম্মাননা বৃদ্ধিসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনায় হয়।”
“...আলোচনা পর্বে শিক্ষক-শিক্ষিকারাও বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা, প্রয়োজন ও উন্নয়নমুখী পরামর্শ তুলে ধরেন। তিনি (আবদুল জব্বার) মনোযোগসহকারে সকল মতামত শোনের এবং শিক্ষাখাতকে আরও শক্তিশালী করতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন। সভায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা এমপি প্রার্থী মাওলানা আবদুল জব্বারের আহমনকে স্বাগত জানান এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।”
তার আগেরদিন বুধবার শাহ ফতেহ ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় কিছু ছবি প্রকাশ করেন আবদুল জব্বার।
গত মঙ্গলবার তার ফেসবুক পেজে ফতুল্লার পাগলা এলাকার পাগলা উচ্চ বিদ্যালয় ও ৮০নং পাগলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের ছবি প্রকাশ করা হয়। একইদিন কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গেও ‘সৌজন্য সাক্ষাতের’ ছবি প্রকাশ করা হয় জব্বারের ফেসবুক পেজে।
এসব শিক্ষা, ধর্মীয় ও সরকারি প্রতিষ্ঠান নারায়ণগঞ্জ-৪ ও ৫ আসনের সংসদীয় এলাকায় অবস্থিত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগরীর একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেন, “ওনারা এসে আমাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন। আমরা তো আর না করতে পারি না। ওনারা কথা বলেছেন, আমরা শুনেছি, এই পর্যন্তই। এটি একটি সামাজিকতা।”
জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীদের এ ধরনের কার্যক্রম নজরে এসেছে বলে জানান মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান। তিনি বলেন, এ ধরনের কার্যক্রম নির্বাচনী মাঠের নিরপেক্ষকতাকে বাধাগ্রস্ত করবে।
“জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করছেন বিষয়টি আমাদেরও পরিলক্ষিত হয়েছে। এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এটি সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা তৈরিতে কাজ করবে। কেননা ভোটগ্রহণের সময় শিক্ষকরা দায়িত্বে থাকবেন। সেক্ষেত্রে যদি তাদেরকে আগে থেকেই দলীয়ভাবে প্রশিক্ষণ ও তালিম দেওয়া হয় তাহলে নির্বাচন কলুষিত হবে। এভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। এটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য অন্তরায়।”
তবে, শিক্ষকদের সঙ্গে এ ধরনের সভা নির্বাচনকে ‘প্রভাবিত’ করার উদ্দেশ্য করছেন না বলে দাবি করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ও দলটির মহানগর শাখার আমীর আবদুল জব্বার।
তিনি বলেন, “আমরা নাহলেও দুইশো’ প্রতিষ্ঠানে গিয়েছি, সালাম দিয়েছি, দোয়া চেয়েছি। কিন্তু এইগুলো কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নয়, স্বাভাবিক কার্যক্রমের অংশ। আমাদের মূলত দু’টি বিষয়- আমরা যদি সামনে মানুষের ভোটে নির্বাচিত হই, তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে কী কাজ করবো এবং শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধাগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি।”
“শিক্ষকদের মেধা, যোগ্যতা ও জ্ঞান রয়েছে। এখানে কাউকে প্রভাবিত করার বিষয় না। কেউ প্রভাবিত করার চেষ্টা করলে তারা বরং ইগনোর করেন। কিন্তু আমরা বলেছি, অতীতে বিভিন্ন সময় ভোটের আয়োজন সরকারিভাবে হয়েছে, আপনারা (শিক্ষকরা) কাজ করতে পারেননি, ভোটাররা ভোট দিতে পারে নাই। শিক্ষকরা যেন নিরপেক্ষ থাকেন, এই ধরনের কথাও আমরা বলেছি। কারণ যেখানে বলার সুযোগ আছে, সে জায়গায় আমরা বলছি। ভয়-ভীতি দেখানোর কোনো নিয়ত আমাদের নেই।”
তফসিল ঘোষণার আগে এই ধরনের কার্যক্রম নির্বাচনী আচরণবিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “যেহেতু আজ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হয়েছে, সে হিসেবে আজকে থেকে কেউ করলে তা কারো করা উচিত হবে না।”
এ বিষয়ে অপর প্রার্থী মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমাদের মুঠোফোনের নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
এদিকে, জেলা নির্বাচন অফিসার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, “শিক্ষকদের সঙ্গে প্রার্থীদের মতবিনিময় সভার বিষয়টি আমরা আগে শুনিনি। কিন্তু আজ তফসিল ঘোষণার পর থেকে তারা আর এটি করতে পারবেন না। কাল থেকে এমন কোনো কার্যক্রম আমাদের নজরে এলে তা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হবে।”





































