শহর-বন্দরের মানুষের মুখে মুখে মাসুদুজজামান

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নিজেকে সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার পর থেকেই শহর ও বন্দরের অলিগলি চষে বেড়াচ্ছেন মাসুদুজ্জামান মাসুদ। বিগত বছরগুলোতে সমাজসেবা, ক্রীড়াঙ্গণ ও ব্যবসা খাতে বিশেষ অবদান রেখে আলোচিত মাসুদ এবার রাজনীতির মাঠেও মানুষের প্রশংসা কুড়াচ্ছেন। রাজনৈতিক অঙ্গণে তো বটেই এখন চায়ের আড্ডাতেও উঠে এসেছে মাসুদুজ্জামানের নাম। গণঅভ্যুত্থানের আগে ও পরে তার গণমুখী বিভিন্ন কার্যক্রম এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার পুরোনো যোগাযোগ এই জনপ্রিয়তা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন অনেকে।
মাসুদুজ্জামানের পরিবার ও ঘনিষ্ঠ সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শীতলক্ষ্যা তীরঘেঁষা এই নারায়ণগঞ্জ শহরে জন্ম মাসুদুজ্জামান মাসুদের। এ শহরের আলো-বাতাসে তার বেড়ে ওঠা। লক্ষ্যাপাড়ের বাসিন্দারা তারই পরিবার, আত্মীয় ও প্রতিবেশী। তারা পারিবারিকভাবে জাতীয়বাদী রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী। তরুণ বয়সে জাতীয়তাবাদী যুবদলের নেতা ছিলেন মাসুদুজ্জামান। খেলাধুলায়ও ছিল তার বিশেষ মনোযোগ, যা পরবর্তীতে তাকে ক্রীড়াঙ্গণে ভূমিকা রাখতে অনুপ্রাণিত করেছে।
শহরের একটি ওয়ার্ডের যুবদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা মাসুদুজ্জামান তরুণ বয়সেই ব্যবসায় মনোযোগ দিলেন। কিন্তু দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি তার দায়বদ্ধতার কথা ভুলে যাননি। ব্যবসাখাতে তার সাফল্য এতে সহযোগিতা করেছে। গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের পাশে ছিলেন সবসময়। বিএনপি নেতা-কর্মীদের মামলার খরচ, হামলায় আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা, পরিবারের লোকজনকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে গেছেন তিনি।
করোনাকালীন সময়ে লকডাউনে স্বল্প আয়ের মানুষের পাশে খাদ্য ও অর্থ সহযোগিতা পৌঁছেছেন মাসুদুজ্জামান। ওই সময় সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতেও ভূমিকা রেখেছিলেন। ২০২০ সালে পশ্চিম তল্লার মসজিদে বিস্ফোরণে হতাহত পরিবারের পাশেও ছিলেন তিনি। নিহত পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের চাকুরির ব্যবস্থাও করেছেন। গণঅভ্যুত্থানেও বিশেষ ভূমিকা ছিল তার। আন্দোলনকারীদের পক্ষে সমর্থন ছাড়াও তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন মাসুদ। জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও আহত পরিবারকেও ছিলেন আর্থিক সহযোগিতা।
মাসুদুজ্জামান কেবল রাজনৈতিক নেতাদেরই নন সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও দরিদ্র মানুষের পাশেও ছিলেন তিনি। মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের রমজান মাস, দুই ঈদ, হিন্দুদের দুর্গোৎসব, খ্রিস্টানদের বড়দিন ছাড়াও বিভিন্ন উৎসব-পার্বনে মাসুদুজ্জামানের উপহার বিলি হয়েছে সকলের মাঝে। মসজিদ, মন্দির ও খেলার মাঠের উন্নয়ন কার্যক্রম কিংবা সামাজিক কোনো উদ্যোগে পাশে থেকেছেন তিনি। ফলে আগে থেকেই সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাছে পুরোনো মুখ মাসুদুজ্জামান অভ্যর্ত্থনা পাচ্ছেন সবখানে।
গত কয়েকমাসে বিএনপির দলীয় কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন মাসুদুজ্জামান। ডেঙ্গু সংক্রমনরোধে নিজ অবস্থান থেকে উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি নাগরিক দুর্ভোগ নিরসনেও সরব ভূমিকা দেখা যাচ্ছে। সদর ও বন্দরের কয়েকটি এলাকায় সুপেয় পানিরও ব্যবস্থা করেছেন। তিনি নারায়ণগঞ্জকে মেট্রোরেলের আওতাভুক্ত আনার পাশাপাশি এটিকে মেট্রোপলিটন সিটি ঘোষণারও দাবি জানিয়েছেন। নাগরিক সমস্যা সমাধানে এবং নগরবাসীকে রাজনৈতিক সচেতন করে তুলতে একটি নাগরিক প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করিয়েছেন। কথা বলছেন পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী দলিত সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে। তাদের চ্যালেঞ্জগুলো সমাধানের আশ্বাস দিচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে তিনি তরুণদের নিয়ে আয়োজন করেছেন এক মতবিনিময় সভা। যেখানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন। তাদের কাছ থেকে নারায়ণগঞ্জ সম্পর্কে ভাবনা জানতে চান মাসুদুজ্জামান, জানান নিজের পরিকল্পনাও। তরুণরা তাদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে কাজ করলে তাকে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দেন।
তরুণদের পাশাপাশি অভিজ্ঞদের মতামত পেতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গেও বসেছেন তিনি। সম্প্রতি জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে এক মতবিনিময় সভায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান মাসুদুজ্জামানকে সমর্থনও দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
মাসুদুজ্জামান বিএনপির ব্যানারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সদর ও বন্দরের বিভিন্ন এলাকায়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা কার্যক্রমের কথা বলে বেড়াচ্ছেন মানুষকে। আগামীর বাংলাদেশ ও আগামীর নারায়ণগঞ্জের স্বপ্নের কথা বলছেন তিনি। মানুষেরও সাড়াও পাচ্ছেন। বিভিন্ন এলাকায় প্রান্তিক পর্যায়ের নারী-পুরুষ তাকে কাছে পেয়ে আলিঙ্গণ করছেন। তাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে গলির মোড়ের চায়ের দোকানটিতেও।
তবে, সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে ব্যাপক সাড়া পেলেও মাসুদুজ্জামান পুরোপুরি স্বস্তিতে নেই। তাকে নিয়ে সমালোচনামুখর আছেন আসনটিতে মনোনয়ন প্রত্যাশী কয়েকজন বিএনপি নেতা। কেননা এখনও দল কাউকেই মনোনীত বলে চূড়ান্ত করেনি। যদিও দলীয় কয়েকজন নেতার এমন আচরণে খুব একটা বিচলিত দেখা যাচ্ছে না মাসুদুজ্জামানকে। তিনি বরং দলীয় বিভাজন ভুলে ঐক্যের ডাক দিয়ে বেড়াচ্ছেন। তার এ ভূমিকাই আসন্ন নির্বাচনে আসনটিতে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টিকে আরও নিশ্চিত করেছে বলেও দাবি তার কর্মী-সমর্থকদের।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের রাজনীতিতে মাসুদুজ্জামান মাসুদের পদচারণা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। দীর্ঘদিনের সামাজিক কাজ, খেলাধুলায় অবদান, দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি দায়বদ্ধতা ও মানুষের পাশে থাকার মানসিকতা তাকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে তুলেছে। তরুণদের অনুপ্রেরণা জোগানো থেকে শুরু করে মুক্তিযোদ্ধা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সংযোগ- সবখানেই তার উপস্থিতি স্পষ্ট। রাজনীতির মাঠে নবাগত হয়েও নিজের কর্ম, ব্যক্তিত্ব ও গণসংযোগের মধ্য দিয়ে তিনি ইতোমধ্যেই মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন। সামনে জাতীয় নির্বাচনে এই জনপ্রিয়তা কীভাবে রাজনীতির ফলাফলে প্রতিফলিত হয়, তা দেখার অপেক্ষায় এখন নারায়ণগঞ্জবাসী।