১২ জুলাই ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২১:০০, ১১ জুলাই ২০২৫

জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বাসদের সমাবেশ

জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বাসদের সমাবেশ

নারায়ণগঞ্জে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ জেলা কমিটির উদ্যোগে জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচির সূচনা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকেল ৪টায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সদস্যসচিব আবু নাঈম খান বিপ্লব।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন—গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, বাসদ ফতুল্লা থানা শাখার সদস্যসচিব এস এম কাদির, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আক্তার, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জ জেলার সদস্যসচিব প্রদীপ সরকার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম।

নেতৃবৃন্দ বলেন, “আগামী ৫ আগস্ট হবে জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি। এক বছর আগে বাংলাদেশে স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটিয়ে মানুষ বৈষম্য, লুটপাট, গুম-খুন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, কর্তৃত্ববাদ ও স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। তারা চেয়েছিল সমতা ও ন্যায়ের ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক সমাজ। কিন্তু সেই প্রত্যাশা আজ ফিকে হয়ে যাচ্ছে।”

তারা বলেন, “এখনও আহত-নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ হয়নি। আহতদের যথাযথ চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত না করে নানা তালবাহানা করা হচ্ছে। প্রায় দেড় হাজার মানুষ হত্যার বিচার হয়নি, বরং গড়পড়তা অভিযোগে মামলা দিয়ে বিচারকে দুর্বল করা হচ্ছে।”

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, “জুলাই আন্দোলনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সুযোগে দেশে মব সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়েছে। সরকার এসব দমন না করে বরং কিছু ক্ষেত্রে উসকানি দিচ্ছে। এমনকি সরকারের প্রেস সচিব একে ‘প্রেশার গ্রুপ’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে গোটা জাতিকে বিস্মিত করেছেন।”

তারা বলেন, “আন্দোলনের অন্যতম অগ্রণী শক্তি ছিল নারী সমাজ। অথচ এখন নারীদের চলাফেরার স্বাধীনতার ওপর হামলা হচ্ছে, আদিবাসী ও ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়েও আক্রমণ চলছে। এসব প্রতিরোধে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ধ্বংস ও যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন অভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী।”

সরকার সংস্কারের কথা বললেও, যেসব বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ করে বক্তারা বলেন, “রাষ্ট্রের গঠন কাঠামোতেই কেবল সংস্কার নয়, খেটে খাওয়া মানুষ, দলিত, আদিবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করেই কার্যকর সংস্কার আনতে হবে।”

নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, “বর্তমান সরকারের নানা কুশীলবের বিরুদ্ধেও দুর্নীতি, লোপাট, ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠছে। এতে করে তারা জুলাই অভ্যুত্থানের মূল স্পিরিট থেকে বিচ্যুত হচ্ছেন।”

সমাবেশ থেকে নেতৃবৃন্দ সরকারের এক বছরের কর্মকাণ্ডের শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানান। একইসঙ্গে অভিযোগ করেন, “সরকার বিচার, সংস্কার বা নির্বাচনের কাজে মনোযোগ না দিয়ে সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থে বন্দর ইজারা, রাখাইনে করিডোর, অস্ত্র কারখানা ও স্টারলিংকের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে দেশকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।”

তারা বলেন, “সরকারকে অবিলম্বে এসব কার্যক্রম বন্ধ করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সচেষ্ট হতে হবে এবং সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে হবে। এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো—জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া। তা না হলে দেশে ভয়াবহ সংকট দেখা দিতে পারে।”

সর্বশেষ

জনপ্রিয়