ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট অলিম্পিয়াড: প্রকৃতি রক্ষার শপথ শত শিক্ষার্থীর

“প্রকৃতি আমার বন্ধু, আমি প্রকৃতিকে রক্ষা করব এবং নিজের চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখব”- এ শপথ করেছেন নারায়ণগঞ্জের শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫০০ শিক্ষার্থী। তারা সকলেই জেলা প্রশাসনের আয়োজিত ‘ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট অলিম্পিয়াডে’ অংশ নিয়েছিলেন।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতার সমাপ্তি হয় মঙ্গলবার ফাইনাল রাউন্ডে বিজয়ী নির্ধারণের মধ্য দিয়ে। সদর উপজেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে বিজয়ী ও অংশ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মাঝে সনদ ও পুরস্কার তুলে দেন প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাছলিমা শিরিনের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ছিলেন সহকারী কমিশনার সাদিয়া আক্তার ও দেবযানী কর, উপজেলা প্রকৌশলী ইয়াসির আরাফাত এবং শিক্ষা অফিসার সুরাইয়া আশরাফী। প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, নারায়ণগঞ্জ সদরে প্রতিদিন ১ হাজার টনেরও বেশি বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার একটি বড় অংশ খোলা জায়গায় ফেলা হয় এবং সেখান থেকে নির্গত হয় গ্রিনহাউস গ্যাস, যা জলবায়ু পরিবর্তনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এই বাস্তবতাকে সামনে রেখেই এই অলিম্পিয়াড আয়োজন করা হয়, যাতে শিক্ষার্থীরা সমাধানমুখী চিন্তা-ভাবনায় উদ্বুদ্ধ হয়।
ডিসি জাহিদুল ইসলাম ঘোষিত ‘গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে পরিবেশ সুরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি ও ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ জাগ্রত করার উদ্দেশ্যে দু’টি পর্যায়ে এ প্রতিযোগিতা সম্পন্ন হয়।
প্রথম পর্যায়ে গত ২৬ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলার ১০০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মোট ১০,০০০ শিক্ষার্থী স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। এক ঘন্টার সচেতনতামূলক সেশন ও কুইজ প্রতিযোগিতা শেষে ৫০০ জন শিক্ষার্থী সিলেক্ট হন।
তাদের মধ্য থেকে ১০০ জনকে নিয়ে মঙ্গলবার ফাইনাল রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয়। অলিম্পিয়াডের শুরুতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ৩০ মিনিটের ইনফরমেশন ওয়ার্কশপ পরিচালনা করা হয়, যেখানে তাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং টেকসই পরিবেশ গঠনের গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা হয়।
এরপর অনুষ্ঠিত হয় অলিম্পিয়াডের মূল প্রতিযোগিতা। সেখান থেকে বিচারকমণ্ডলীর মূল্যায়নের ভিত্তিতে ৫ জন শিক্ষার্থীকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
প্রতিযোগিতয়া প্রথম হয়েছেন বিদ্যা নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রণয় রায়।
জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম বলেন “গ্রীন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ শুধু একটি স্লোগান নয়- এটি একটি দায়বদ্ধতা, একটি প্রতিশ্রুতি। এই কর্মসূচির আওতায় ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন পর্যায়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, গাছ রোপণ, ওয়ার্ড পর্যায়ে ডাস্টবিন স্থাপন, এবং মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আজকের এই অলিম্পিয়াড তারই ধারাবাহিকতা।”
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “পৃথিবী একমাত্র গ্রহ যেখানে আমরা বসবাস করতে পারি। এই গ্রহের প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব আমাদের। আমারে নিজেরে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যই আমাদের এটি করতে হবে। প্রতিদিন উৎপাদিত বর্জ্য না জমিয়ে আমাদের রিসাইকিলিং কর্মকাণ্ডে মনোযোগ দিতে হবে। আমরা নিজেদের নাগরিক দায়িত্ব পালন করলেই পরে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।”
ইউএনও তাছলিমা শিরিন বলেন, “পরিবেশ রক্ষার লড়াই কেবল প্রশাসনের একার নয়, বরং এটি একটি সমন্বিত প্রয়াস- যেখানে স্কুল, পরিবার ও সমাজকে একত্রে কাজ করতে হবে। আমরা চাই, প্রতিটি শিক্ষার্থী শুধু পরীক্ষার খাতায় নয়, জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্তে পরিবেশবান্ধব হোক।”
“নারায়ণগঞ্জের প্রধান সমস্যা হল জলাবদ্ধতা, যানজট এবং অপরিচ্ছন্নতা। এই অপরিচ্ছন্নতা বা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার যে সংকট সেটি সমাধানের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুষ্ঠু সমাধান হবে ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা তৈরি হলে। শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের চর্চা থেকেই তাদের সহনাগরিকরাও শিখবেন, এইটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল শপথ গ্রহণ পর্ব, যেখানে শিক্ষার্থীরা উচ্চারণ করেনÑ “প্রকৃতি আমার বন্ধু, আমি প্রকৃতিকে রক্ষা করব এবং নিজের চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখব।”