অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে প্রশংসিত নারায়ণগঞ্জের ডিসি

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক হৃদয়বিদারক পোস্ট নজরে আসে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞার। পোস্টে জানানো হয়—রাজবাড়ী জেলার কালুখালি উপজেলার মাঝপাড়া গ্রামের রিংকু শরীফের মেয়ে পিংকি শরীফ শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনের পাশে অবস্থিত বেসরকারি বিএনকে হাসপাতালে মারা গেছেন। তার নবজাতক কন্যা তখনও মুমূর্ষু অবস্থায় একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল।
কিন্তু মৃত্যুর পরও শান্তি মেলেনি পিংকির পরিবারের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাশ আটকে রেখে দাবি করে ১ লাখ ৭৩ হাজার টাকার বিল। অসহায় পিতা রিংকু শরীফ আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধারদেনা করে মাত্র ৪০ হাজার টাকা জোগাড় করে অনুরোধ জানান লাশটি ফিরিয়ে দিতে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাজি হয়নি।
এই ঘটনাই নজরে আসে জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞার। তিনি সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনির সঙ্গে এবং বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার অনুরোধ জানান।
অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি দ্রুত বিষয়টি জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মঈনুল হাসানকে। এরপর ডা. হাসান কথা বলেন বিএনকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও রিংকু শরীফের সঙ্গে। দ্রুত বদলে যায় পরিস্থিতি—হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই রিংকুর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে মরদেহ হস্তান্তরের প্রস্তুতি নেয়। অবশেষে টানা ১৪ ঘণ্টা জিম্মি রাখার পর শুক্রবার রাত ১০টার দিকে পিংকির মরদেহ ও নবজাতক কন্যাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
শনিবার অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি বলেন, “নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম বিষয়টি জানিয়ে অনুরোধ করেছিলেন। আমি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালককে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলি। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বিষয়টি সমাধান করেন। জাহিদুল ইসলাম সত্যিই একজন ভালো ও মানবিক ডিসি। তার কর্মকাণ্ড প্রশংসনীয়।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মঈনুল হাসান বলেন, “অতিরিক্ত সচিব মহোদয়ের নির্দেশ পেয়ে আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলি। রোগীর পরিবারের আর্থিক অসুবিধার কথা জানিয়ে মানবিক কারণে লাশ হস্তান্তরের অনুরোধ করি। তারা সম্মত হন এবং তাৎক্ষণিকভাবে লাশ ও নবজাতক হস্তান্তর করা হয়। এই উদ্যোগের কৃতিত্ব প্রথমেই নারায়ণগঞ্জের ডিসি সাহেবের।”
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম বলেন, “ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে আমি আবেগতাড়িত হয়ে পড়ি। যেহেতু বিষয়টি আমার দায়িত্বপূর্ণ জেলার বাইরে ঘটেছে, তাই আমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি স্যারকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করি। বাকি সব ব্যবস্থাপনা করেছেন শেখ মোমেনা মনি স্যার এবং ডা. মঈনুল হাসান মহোদয়।”
তিনি আরও বলেন, “পিংকি রাজবাড়ী জেলার সন্তান। আমি সেখানে দুই মাস জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। রাজবাড়ীর মানুষের আর্থিক অবস্থা খুব একটা স্বচ্ছল নয়, তা আমি কাছ থেকে দেখেছি। দায়িত্বের বাইরে হলেও মানবিক কাজ করে যে আত্মিক প্রশান্তি পাওয়া যায়, তা কোটি টাকা খরচ করেও পাওয়া সম্ভব নয়।”
পিংকির পিতা রিংকু শরীফ বলেন, “আমার মেয়ের নবজাতক কন্যাও রাতে মারা গেছে। মা ও মেয়েকে একসঙ্গে দাফন করেছি গ্রামের বাড়ি কালুখালিতে। জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি এবং ডা. মঈনুল হাসানের প্রতি আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। তারা কেউ আমাকে চিনতেন না, তবুও মানবিক কারণে পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাদের জন্য দোয়া করি, আল্লাহ যেন তাদের ভালো রাখেন।”
পিংকির চাচা জিরু সর্দার জুয়েল বলেন, “তাদের সাহায্য না পেলে আমরা টাকা ছাড়া লাশ বের করতে পারতাম না। আমরা তাদের প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।”