১৪ আগস্ট ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৫:২৭, ১৪ আগস্ট ২০২৫

চাষাড়ায় মায়ের ওষুধ কিনতে বেরিয়ে নিখোঁজ কিশোরের মরদেহ মিলল লেকে

চাষাড়ায় মায়ের ওষুধ কিনতে বেরিয়ে নিখোঁজ কিশোরের মরদেহ মিলল লেকে

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ডিএনডি লেকে পাওয়া মরদেহটি ১৭ বছর বয়সী কিশোর মো. ইয়াছিনের। গত সোমবার সন্ধ্যায় মায়ের জন্য ওষুধ কিনতে শহরের চাষাড়ার বাসা থেকে বেরিয়ে এ কিশোর আর ফেরেনি বলে জানিয়েছে তার স্বজনরা। 

গতকাল বুধবার সকালে বাসা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে তার মরদেহ পাইনাদী সিআইখোলা এলাকায় লেকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। পরে রাতে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নিহতের পরিচয় নিশ্চিত করেন তার পরিবারের সদস্যরা। 

নিহত ইয়াছিন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুরের মোহাম্মদ আলীর ছেলে। তার বাবা সৌদি প্রবাসী। 

বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালের মর্গের সামনে কথা হয় ইয়াছিনের মামা মনসুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, নগরীর পাইকপাড়া নয়াপাড়া এলাকার বেইজ স্কুলে পড়াশোনা করতো ইয়াছিন। 

গত জুলাই মাসে প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে জিপিএ-৪.৬২ পান এ কিশোর। তিন ভাই-বোনের মধ্যে ইয়াছিন ছোট। 

কাঁচপুরের স্থানীয় বাসিন্দা হলেও পড়াশোনার সুবিধার জন্য তিন সন্তানকে নিয়ে শহরের চাষাড়ায় ভাড়াবাসায় থাকতেন ইয়াছিনের মা আফরিনা নাসরিন। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে নির্বাক তিনি। 

ইয়াছিনের মামাতো ভাই মুনতাসির রহমান জিহাদ বলেন, “হাতে ৫০ টাকা নিয়ে মায়ের জন্য ওষুধ কিনতে বের হয় ইয়াছিন। বাসার পাশেই ফার্মেসি অনেকগুলো, ১০ মিনিটের বেশি লাগার কথা না। কিন্তু সেই অনেক সময় পরও বাড়িতে না ফেরায় বাসার লোকজন মোবাইলে (মুঠোফোন) কল দিতে থাকে। কিন্তু রিসিভ করেনি।” 

রাত দুইটা পর্যন্ত মুঠোফোনটি সচল ছিল বলেও জানান জিহাদ। 

এদিকে, সন্তানকে খুঁজে না পেয়ে রাতেই সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেন আফরিনা নাসরিন। 

শোকাহত মায়ের মানসিক পরিস্থিতিতে তার সঙ্গে ছেলের বিষয়ে কথা বলা যায়নি। তবে ইয়াছিনের মামা মনসুর বলেন, “রাগ কইরা এর আগেও বাসা থেকে বের হইছে ইয়াছিন। মসজিদেও থাকছে ও। কিন্তু আমার নিজেই ফিরে আসছে। ওর সঙ্গে কী হইসে, কীভাবে বাসা থেকে কয়েক কিলোমিটর দূরে ডিএনডি লেকে পাওয়া গেল লাশ, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা করতে পারতেছি না।” 

তবে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান নিহতের স্বজনরা। 

এদিকে, দুপুর দুইটায় ময়নাতদন্তের পর নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক হায়দার আলী শিমুল বলেন, “নিহতের মাথা ও বুকে আঘাতের আলামত পাওয়া গেছে। পানিতে ডুবে মারা গেলে পেটে যে পানির উপস্থিতি পাওয়া যায় তেমনটি পাইনি। এটি হত্যাকাণ্ড বলেই মনে হচ্ছে।” 

এ ঘটনাটি তদন্ত করছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ওয়ালী সওদাগর। তিনি মুঠোফোনে বলেন, মরদেহ উদ্ধারের পর বুধবার রাতে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা রুজু হয়। 

“পরিবারের ভাষ্যমতে তার সঙ্গে মুঠোফোন থাকার কথা। কিন্তু মরদেহের সঙ্গে ফোনটি পাইনি। পরনে জুতা পেয়েছি একটি। মরদেহের অবস্থা অনুযায়ী অন্তত ২৪ ঘন্টা সেটি পানিতে ছিল বলে ধারণা করছি। আমরা গুরুত্বের সঙ্গে ঘটনাটি তদন্ত করছি। হত্যাকাণ্ড হলেও তদন্তে তা বেরিয়ে আসবে।”

সর্বশেষ

জনপ্রিয়