০২ আগস্ট ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ:

প্রকাশিত: ২১:৪০, ৩১ জুলাই ২০২৫

আপডেট: ২১:৪১, ৩১ জুলাই ২০২৫

সংসদীয় আসনের সীমানা নিয়ে রাজনীতিকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

সংসদীয় আসনের সীমানা নিয়ে রাজনীতিকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের তিনটি আসনের সীমানা পুনরায় নির্ধারণের খসড়া প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। এ প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গন পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।

বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এক ব্রিফিংয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার দেশের কয়েকটি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনরায় নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান।

এ সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ তিন, চার ও পাঁচ আসনে। সুপারিশে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে সোনারগাঁ উপজেলার সঙ্গে বন্দর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নও যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ড থাকবে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদীয় এলাকা হিসেবে।

অন্যদিকে, সদর উপজেলার গোগনগর ও আলীরটেক ইউনিয়ন, যে দু’টি আগে ছিল নারায়ণগড়ঞ্জ-৫ আসনে, তা বিবেচিত হবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এলাকা হিসেবে।

সংসদীয় আসনের এ পরিবর্তনে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন রাজনীতিবিদদের কেউ কেউ। সুপারিশ অনুযায়ী এলাকা পুননির্ধারণ হলে ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি হবে বলেও মনে করছেন অনেকে। কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা এই সুপারিশে ইতিবাচকতাও দেখছেন।

সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কারিগরি কমিটির প্রস্তাবনার তীব্র সমালোচনা করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী ও বিএনপি নেতা মাসুদুজ্জামান মাসুদ।

তিনি বলেন, “নির্বাচনী সীমা বিভক্ত করে আমাদের ঐক্য ভাঙা যাবে না। কলমের এক খোঁচায় আসন ভাগ করা হলেও, মানুষের হৃদয়ে আমি সবসময় ঐক্যবদ্ধ নারায়ণগঞ্জের প্রতিনিধিত্ব করেছি এবং করবো।

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সীমানা থেকে বন্দরের পাঁচটি এবং সদরের দু’টি ইউনিয়ন বাদ দেওয়ার প্রসঙ্গে মাসুদ বলেন, “এই সাতটি ইউনিয়ন দীর্ঘদিন অবহেলিত। নাগরিক সুবিধা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, ড্রেনেজ ও কর্মসংস্থান সবদিক থেকেই পিছিয়ে রয়েছে। যেখানে উন্নয়নের প্রয়োজন, সেখানে করা হয়েছে বিভাজনের মতো বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত- এটি মেনে নেওয়া যায় না। এই সাতটি ইউনিয়নের প্রতিটি মানুষ আমার আপনজন। আমি ছিলাম, আছি এবং থাকব আপনাদের পাশে- দুঃখে, দুর্যোগে, উন্নয়নে ও অধিকার আদায়ে।”

নারায়ণগঞ্জ-৩, ৪ ও ৫ আসনের নতুন সীমানা বণ্টনকে ‘অবিচার’ আখ্যা দিয়ে ফেসবুকে প্রতিবাদ জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মো. আবু আল ইউসুফ খান টিপু। তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ ও দীর্ঘায়িত করার অপচেষ্টা। তিনি পূর্বের সীমানা পুনঃবহালের দাবি জানিয়ে হুঁশিয়ার করেন, জনগণের অধিকার ফিরে পেতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

তবে, এ বিষয়ে দলীয়ভাবে পর্যালোচনার আগে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমার দল (বিএনপি) পর্যালোচনা করে আমাদের সাথে কথা বলবে, তারপর আমরা এ বিষয়ে মন্তব্য করব। এখন কিছু বলার নেই।”

তবে, প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ জেলা সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন।

শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বপাড়ের বন্দর উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশনের অংশটিকে দুই ভাগ করে একটি অংশ নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে এবং অপর অংশ নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে যুক্ত করার বিষয়টি স্থানীয়দের বৈষম্যের মুখে ফেলবে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, “নতুন সীমানা নির্ধারণ হলে বন্দর থেকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য হয়ে যাবে। এটি ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের বৈষম্য দূর করার আকাক্সক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। গতকাল (বুধবার) ঘোষিত সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের ফলে বন্দরবাসী এখন বৈষম্যের শিকার হতে যাচ্ছে।

“বন্দরের নিজস্ব নানা সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পানি ও গ্যাসের সংকট, ভাঙাচোরা সড়ক, এবং শীতলক্ষ্যা নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানা থেকে ভয়াবহ পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি। এ অবস্থায় এসব সমস্যা সমাধানে বন্দরবাসীকে নারায়ণগঞ্জ শহর বা সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির ওপর নির্ভর করতে হবে। আবার একই সাথে আশঙ্কা থাকে যে, বন্দরে ২ জন সাংসদ এবং প্রতিমন্ত্রী মর্যাদার একজন মেয়র থাকার ফলে রাজনৈতিক জটিলতা বাড়বে। সুতরাং আমি বন্দরবাসীর সাথে এই বৈষ্যমের বিরোধিতা করি এবং দাবি জানাই বন্দরের সিটি কর্পোরেশনের এলাকা এবং বন্দরে উপজেলাকে একই সাথে রাখতে হবে।”

সুজন আরও লেখেন, “বিভাজন করে বন্দরবাসীকে নিজস্ব জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা কোনভাবেই সমর্থন করি না।”

তবে, এ নিয়ে এখনও ‘ভাবনা’ নেই বলে জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার আমীর মোমিনুল হক সরকার। তিনি বলেন, “আমরা এখনও চিন্তা-ভাবনা করিনি। আমাদের সামনের প্রোগ্রাম নিয়ে একটু ব্যাস্ত সময় পার করছি।”

এলাকা বন্টনের বিষয়টিকে আবার ইতিবাচকভাবে দেখছেন ইসলামী আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ মহানগর শাখার সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ। তিনি বলেন, “ভোটের জন্য মনে হয় ভালো হবে। তবে, বন্দর উপজেলা দু’টি ভাগ হয়ে যাবে এর মাধ্যমে।”

জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক শওকত আলী বলেন, “যেভাবে সুপারিশ করা হয়েছে এবং নারায়ণগঞ্জের মানচিত্র যেটা সেখানে দেখলাম, এখানে গুরুত্বপূর্ণ কোন পরিবর্তন ঘটবে না। স্থানীয়ভাবে বন্দরে যে পাঁচটি উপজেলা সেখানের জনগণের মূলত কাজগুলো নারায়ণগঞ্জেই পরিচালিত হয়। এখন সোনারগাঁয়ের সাথে যদি সংযুক্ত করা হয়, তাহলে তাদের মদনপুরের দিকে যেতে হবে। আমার কাছে মনে হচ্ছে এটি কিছুটা তাদের জন্য সমস্যার।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা জানি না এটা চূড়ান্ত হয়েছে কিনা। কিন্তু আমরা চাইব, এটা যেন আবার আগের মতোই করা হয় নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য।”

সর্বশেষ

জনপ্রিয়