ভাড়া না পেয়ে দোকানটি নিজেই চালাতে চেয়েছিলেন জাহাঙ্গীর

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বিএনপির কার্যালয় গড়ে তোলা দোকানঘরটির ভাড়া চেয়েও না পেয়ে সেখানে নিজেই মুদি মালামাল তুলে ব্যবসা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নিহত দোকান মালিক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। অভাবের সংসারে ছেলেকে বিদেশে পাঠাতে গিয়ে দোকানটি বন্ধক রেখে আড়াইবছর আগে টাকাও নিয়েছিলেন তিনি।
দেনার টাকা পরিশোধের তাগিদেই দোকানটি নিজে চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলে জানান নিহতের পরিবারের সদস্যরা।
কিন্তু, গত বুধবার সকালে ওই দোকানের বকেয়া ভাড়া চাওয়া নিয়ে দ্বন্দ্বে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের মারধরে প্রাণ হারান জাহাঙ্গীর।
স্ত্রী, দুই ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে জাহাঙ্গীর হোসেনের পরিবার। এক সময় বর্গাচাষী জাহাঙ্গীর বাজারের তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন, এক ছেলে বিদেশে থাকে। অপরজন মো. রাসেল স্থানীয় একটি তাঁত কারখানায় চাকরি করেন।
মো. রাসেল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “বাজারে দোকানটিতে আগেও আব্বু মুদির মালামাল তুলে বিক্রি করেছেন। দুই বছর আগে অসুস্থ হয়ে পড়ায় ব্যবসা বন্ধ করে দেন। পার্টি অফিস করার পরও ভাড়া না পাইয়া আব্বু দোকানটি আবার নিজেই চালানোর চিন্তা করছিলেন। ভাড়া না দিলে তার অংশটুকু ছাইড়া দিতেও কইছিলেন।”
জাহাঙ্গীর নিজেও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি জাতীয়তাবাদি মৎস্যজীবী দলের মাহমুদপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সহ সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন। যদিও তার পরিবারের সদস্যরা বলছেন, জাহাঙ্গীর রাজনৈতিক কোনো পদে ছিলেন তা জানতেন না।
গত বছরের আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আড়াইহাজারের সালমদী বাজারের তিনটি দোকানঘর একত্র করে গড়ে তোলা হয়েছিল স্থানীয় বিএনপির একটি কার্যালয়। তিনটি দোকানঘরের একটি ছিল মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের।
বিএনপির এ কার্যালয়টি গড়ে তুলেছিলেন মাহমুদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য তোতা মিয়া প্রধান। তার বাড়িও ওই বাজারের পাশেই।
জাহাঙ্গীরের ছেলে রাসেল বলেন, “ভাড়া না দেওয়ায় গত তিনমাস ধইরা তোতা মিয়ারে দোকান ছাড়তে বলতাছিলাম। গতকাল (বুধবার) সকালে আমি আর আব্বু দোকানের শাটারের কাম করাইতাছিলাম। আমি আব্বুরে রাইখা যাওয়ার ঘন্টাখানেক পরই শুনতে পারি তোতা মিয়া ও তার লোকজন আব্বুরে পার্টি অফিসের শাটার ফালাইয়া পিটাইছি। আমি তার লাশ পাই হাসপাতালে।”
জাহাঙ্গীর হোসেনের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার সালমদী নয়াপাড়া গ্রামে। বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্তের পর বিকেল চারটার দিকে তার বাড়িতে মরদেহ পৌঁছায়। পরে আছর নামাজের পর স্থানীয় একটি কবরস্থানে তাকে দাফন করার কথা জানান ছেলে রাসেল।
এদিকে, বুধবার দিবাগত রাতে (আরলি বৃহস্পতিবার) নিহতের স্ত্রী সেলিনা বেগম বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় বিএনপি নেতা তোতা মিয়া প্রধান, তার ছেলে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক খোকন প্রধান, আরেক ছেলে মাহমুদপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য রাসেল প্রধান, ভাই বেনু প্রধান, ভাতিজা আলম প্রধান ও সাদ্দাম হোসেনসহ ৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৮ থেকে ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এদের মধ্যে তোতা, খোকন, রাসেল, আলম ও সাদ্দামকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদ থেকেও বহিষ্কারের কথা গতরাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বিএনপি।
তবে, জাহাঙ্গীর হত্যা মামলায় বৃহস্পতিবার রাত আটটা পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার নাসির উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “আসামিদের গ্রেপ্তারের পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।”