জোরালো হচ্ছে সেলিম ওসমানের গ্রেপ্তারের দাবি
প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। জুলাই আন্দোলনের এসব মামলায় সরাসরি নাম থাকলেও তাকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি প্রশাসন। বিভিন্ন সময় জাতীয় পার্টির এই নেতাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানালেও সম্প্রতি এ দাবি জোরালো হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে সে ‘পলাতক’ হলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার দাবি, তিনি দেশে আছেন। এমনকি নারায়ণগঞ্জে নিয়মিত এসে তার ব্যবসায়িক কার্যক্রমও পরিচালনা করছেন।
রাজনৈতিক নেতাদের অভিযোগ, জুলাই আন্দোলনের একাধিক মামলায় সরাসরি নাম থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন তাকে গ্রেপ্তার করছে না। যার পেছনে রয়েছে শক্তিশালী কোনো শক্তি। কেউ কেউ এটাও দাবি করেছেন, সেলিম ওসমানের আশ্রয়দাতা একজন প্রভাবশালী বিএনপি নেতা। ওই নেতা নারায়ণগঞ্জের একটি আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীও। বিএনপির ওই নেতার সহযোগিতায় সেলিম ওসমান প্রায়ই নারায়ণগঞ্জে আসেন, এমনকি অফিসও করছেন। যার জন্য তারা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন তারা।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ওসমান পরিবারের সদস্য শামীম ওসমান, যিনি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন, তিনি ও তার সহযোগীরা নারায়ণগঞ্জে আন্দোলনকারীদের উপর সশস্ত্র হামলা চালায়। যদিও গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শামীম ওসমান ও তার সহযোগীদের অনেকেই দেশ ছেড়ে পালান। আত্মগোপনে ছিলেন সেলিম ওসমানও। তিনি আত্মগোপনে থেকেই ব্যবসায়ী সংগঠন বিকেএমইএ’র সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগের চিঠি পাঠান।
চলতি বছরের শুরুর দিকে ‘সেলিম ওসমান বাংলাদেশে আছেন’ দাবি করে তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এক দলীয় অনুষ্ঠানে “সেলিম ওসমান খুনি” মন্তব্য তিনি বলেন, “জুলাই আন্দোলনে একাধিক মামলার আসামি সেলিম ওসমান। এই খুনি সেলিম ওসমান এখনো বাংলাদেশে রয়েছে, তাকে গ্রেপ্তার করুন।”
ওই মাসের শেষের দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় সেলিম ওসমানের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বক্তব্য দেন তিনি। একইভাবে বিভিন্ন সময়, সভায় তিনি জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের কাছে সেলিম ওসমানের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে আসছেন।
সর্বশেষ গত ৯ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় একই দাবি জানান তিনি।
‘সেলিম ওসমান অরাজাকতা সৃষ্টি করিদের অর্থদাতা’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “নারায়ণগঞ্জ যারা মশাল মিছিল করে অরাজকতা সৃষ্টি করছে তাদের অর্থদাতা সেলিম ওসমান ও তার সাথে জড়িত বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এই অর্থদাতাদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।”
এসপি ও ডিসির কাছে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “যারা ফ্যাসিস্টদের অর্থদাতা তারা এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে। গার্মেন্টসে এসে অফিস করছে এবং মুক্তিযোদ্ধা নামধারী কিছু লোক সেলিম ওসমানের সঙ্গে আঁতাত করে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে শহরে অরাজকতা সৃষ্টি করার জন্য অর্থ যোগান ও বিভিন্ন রকম উস্কানি দিচ্ছে।”
সম্প্রতি সেলিম ওসমানের গ্রেপ্তারের দাবি জানান জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠনের নেতা শওকত আলী। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে জুলাই আন্দোলনে হামলা ও হত্যার অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলার আসামি হয়েও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান বিনা বাধায় ‘অফিস করছেন এবং ব্যবসা পরিচালনা করছেন’ দাবি করেন তিনি। সেলিম ওসমানের ‘শেল্টারদাতা’ হিসেবে বিএনপির প্রার্থীকে অভিযুক্ত করলেও ওই প্রার্থীর নাম স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেননি এনসিপি নেতা শওকত আলী।
বিভিন্ন সময় সেলিম ওসমানের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও নাগরিক নেতারা।
তবে, গত রোববার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের এক আলোচনা সভায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী বলেন, “একজন দোসর নাকি আমাদের এলাকায় এসে ব্যবসা-বাণিজ্য করতেছে। এমনটা অনেকে বলতেছেন। এই তথ্যটা সঠিক না। এইখানে এসে ব্যবসা-বাণিজ্য করবে, এই সুযোগ কিন্তু নাই। হয়তো তিনি এলাকার বাইরে থেকে প্যাট্রোনাইজ করতে পারেন, কিন্তু নারায়ণগঞ্জে এসে করার কোনো সুযোগ নাই। উনি যদি আমাদের নজরে আসেন, তাহলে অ্যারেস্ট হয়ে যাবেন।”
এমনকি সোমবার রাত দশটার দিকে ফতুল্লায় সেলিম ওসমানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উইজডম অ্যাটায়ার্সে অভিযান চালায় পুলিশ। কিন্তু সেখানে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।





































