১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৭:৪৩, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

আপডেট: ১৭:৫০, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

‘হোন্ডা বাহিনীর মহড়া’ নিরাপত্তা শঙ্কায় গণসংহতির প্রার্থী অঞ্জন দাস

‘হোন্ডা বাহিনীর মহড়া’ নিরাপত্তা শঙ্কায় গণসংহতির প্রার্থী অঞ্জন দাস

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে নিরাপত্তা শঙ্কার কথা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে গণসংহতি আন্দোলনের মনোনীত প্রার্থী অঞ্জন দাস।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ ও আশঙ্কার কথা তুলে ধরেন।

লিখিত বক্তব্যে অঞ্জন দাস বলেন, দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর সোনারগাঁ ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় গণসংযোগ ও মতবিনিময় সভা করতে গিয়ে এলাকাবাসীর কাছ থেকে চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব ও মাদকের বিস্তারের অভিযোগ শুনেছেন। তিনি বলেন, “পুরোনো বন্দোবস্তই নতুন করে বহাল রাখা হয়েছে, যা সাধারণ মানুষকে হতাশ করছে। জনগণ এই ব্যবস্থার পরিবর্তন চায়।”

বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, গত ২২ নভেম্বর সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়ায় গণসংযোগ চলাকালে বিএনপির ১৫ থেকে ২০টি মোটরসাইকেল বহর তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের চেষ্টা করে। “এই ঘটনা বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলের হেলমেট বাহিনীর কথা মনে করিয়ে দেয়,” বলেন তিনি।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, গত ১৩ ডিসেম্বর রাতে নির্বাচনী কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে গণসংহতি আন্দোলন সোনারগাঁ থানা শাখার সদস্য সচিব মোবাশ্বির হোসেন-এর ওপর ২০ থেকে ২৫ জন অজ্ঞাত সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা চালায়। এই ঘটনায় দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি তিনি দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

অঞ্জন দাস বলেন, সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন এলাকায় সশস্ত্র অবস্থায় লোকজনের আনাগোনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, অথচ প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, “গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কার, নিরাপদ নির্বাচন এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার দাবিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু নির্বাচন তফশিল ঘোষণার পরদিনই ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদী-এর ওপর গুলি চালিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনা আমাদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”

প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “যদি একজন সংসদ সদস্য প্রার্থীর নিরাপত্তা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে সাধারণ জনগণ কতটা নিরাপদ- তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়।” তিনি ওসমান হাদীর ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার এবং এর নেপথ্যে থাকা মদদদাতাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। পাশাপাশি ১৩ ডিসেম্বর ঢাকার উত্তরায় ইনকিলাব মঞ্চের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগও করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর সব রাজনৈতিক দলের সমর্থনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি কিংবা গণহত্যাকারীদের বিচারে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। এছাড়া মাজারে হামলা ও মব ভায়োলেন্স বন্ধে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে অঞ্জন দাস জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে নিরাপদ ও অংশগ্রহণমূলক করতে সরকার ও প্রশাসনের প্রতি কঠোর ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের দাবি জানান।

গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “প্রার্থী হিসেবে আমি নিজেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার এলাকায় বালুমহল, চাঁদাবাজি ও ভূমিদস্যুতার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাঁরা দাঁড়াবে, তাঁদের টার্গেট করবে—এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত।”

তিনি জানান, মোবাশ্বির হোসেনের ওপর হামলার ঘটনায় গত ১৪ ডিসেম্বর সোনারগাঁ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা গণসংহতি আন্দোলনের যুগ্ম নির্বাহী সমন্বয়কারী আলমগীর হোসেন আলম, মহানগর নির্বাহী সমন্বয়কারী পপি রাণী সরকার, জেলা নারী সংহতির আহ্বায়ক নাজমা বেগম, বাংলাদেশ যুব ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন, সোনারগাঁ থানা গণসংহতি আন্দোলনের আহ্বায়ক মোমেন হাসান প্রান্ত ও সদস্য সচিব মোবাশ্বির হোসেন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি সাইদুর রহমান, যুব ফেডারেশন জেলা প্রচার সম্পাদক সাকিব হাসান সানি, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা গণসংহতি আন্দোলনের আহ্বায়ক জিয়াউর রহমানসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়