মাসুদুজ্জামানকে ঠেকাতে একমঞ্চে মনোনয়ন বঞ্চিতরা
নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদকে ঠেকাতে একমঞ্চে বসে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ওই আসনে মনোনয়নবঞ্চিত পাঁচ প্রত্যাশী। ‘মাসুদুজ্জামান কোনো সময় বিএনপির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না’ অভিযোগ করে মনোনয়ন পুনঃমূল্যায়নের দাবি জানান তারা।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা। এ সময় বক্তব্য রাখেন এ আসনে বিএনপির তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, প্রাইম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু জাফর বাবুল ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আবুল কাউসার আশা।
সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, “প্রার্থী ঘোষণার পর আমরা যারা নারায়ণগঞ্জ পাঁচ আসনে, মহানগরে রাজনীতি করি, নেতাকর্মী, সমর্থক এবং ভোটারবৃন্দ অত্যন্ত অবাক হয়েছি। কেউ চিন্তা করিনি, এ ধরণের কেউ বিএনপির প্রার্থী হতে পারে। যাকে প্রার্থী করা হয়েছে তার সাথে এ আসনের নেতাকর্মীরা পরিচিত নয়। তাকে কোনদিন আমরা আমাদের দলের কোন কাজে-কর্মে কোনদিন পাই নাই।
মনোনীত র্প্রাথী পরিবর্তন করে এ আসনে বিএনপির পরীক্ষিত নেতাকর্মীরে মধ্য থেকে মনোনয়ন দেয়ার আবেদন জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিব এবং দলের স্থায়ী কমিটির সকল সদস্যের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
মাসুদুজ্জামান কোনো সময় বিএনপি করেননি অভিযোগ করে তিনি বলেন, “তার সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি, সে কোন সময় বিএনপি করে নাই। গত ১৫ বছর উনি ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ব্যবসায়িক সুবিধা, ব্যাংকের মালিকানা নিয়েছে। বিভিন্ন নির্বাচনী জনসভা, রাজনৈতিক কার্যক্রমে সে অংশগ্রহণ করেছে। একটি নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় আমরা চাই, তাকে পরিবর্তন করে ধানের শীষের প্রার্থী এমন কাউকে দেওয়া হোক, যে গত ১৫ বছর অন্তত বিএনপি করেছে। বিএনপির নাম মুখে নিয়েছে, রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে, মামলা খেয়েছে, জেল খেটেছে। যারা বিএনপিকে ভালোবাসে, দুঃসময়ে বিএনপি ছেড়ে চলে যাবে না।
আবুল কালাম বলেন, “আমরা একটা ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী হতে চাই। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব বলেছিলেন, আগামী নির্বাচনটি অত্যন্ত কঠিন হবে। আমাদের ১৭-১৮ বছরের নির্যাতন সহ্য করার অধ্যায় রয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে আমরা যেভাবে মামলার শিকার হয়েছি তৃণমূল পর্যায় থেকে আমরা সকলেই এর অংশীদার। বুঝতে হবে, গত ১৭ বছর যে দলের অস্তিত্ব রক্ষা করেছি অংশগ্রহণের মাধ্যমে, আজকে আমাদের অস্তিত্বটা মূল্যায়ন কি পেতে পারি কিনা। যদি আমাদের ত্যাগী নেতৃবৃন্দদেরকে সঠিকভাবে সম্মানিত, মূল্যায়ন করা না হয় তাহলে রাজনীতি কিন্তু অত্যন্ত কঠিন দিকে চলে যাবে। কারণ পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা যদি যথাযথ স্থানে যথাযথভাবে সম্মানিত না হয়। তাদের যে অনাগ্রহ থেকে আগামী দিনে রাজনীতিতে শূণ্যতা সৃষ্টির পায়তারা দেখা দিবে।
এই নির্বাচন তার শেষ নির্বাচন হতে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের জনগণ কখনো ভুল করে নাই। তিন তিনবার আমাকে নির্বাচিত করেছেন। তার মানে হল এই যে বিএনপিকে জনগণ ভালোবাসে। আমি যে কথা বলি অতীতে যারা যেভাবে রক্ষা করেছি ইনশাল্লাহ আগামী দিন আপনাদের সঙ্গে সাথী নিয়ে সেই কথাটি ইনশাআল্লাহ রক্ষা করব।”
আবু জাফর বাবুল বলেন, “অপ্রত্যাশীতভাবে একজনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। যিনি এ দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। দুই মাস আগে থেকে আবেদন করে তিনি সদস্য হয়েছে এবং মনোনয়ন পেয়েছেন। এতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। দেখতে পাচ্ছি, প্রত্যেকটা নেতাকর্মী ভোটারের রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এইভাবে যদি চলে, আমি জানি না আগামীতে আমাদের প্রত্যাশা কি। নারায়ণগঞ্জে প্রার্থী এবং জয়লাভ, দুটাই আমাদের প্রত্যাশা। একটা অপরিচিত মানুষ, যে বিএনপি করে না, মানুষ তাকে ভোট দিবে না। আমরা নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন হারাতে চাই না।”
আবু ইউসুফ খান টিপু বলেন, “ঘোষণার ব্যাপারে আমাদের বলার কিছু নাই। তবে আবদার করে বলব নারায়ণগঞ্জ বিএনপিকে, পাঁচ আসনকে বাঁচাতে হলে পুণঃমূল্যায়ন করে আমাদের মধ্য থেকে মনোনয়ন দিন। তাহলে একটি ভালো ফলাফল ও বিজয় উপহার দিতে পারবো।”
আবুল কাউসার আশা বলেন, “ছাত্রদলের একজন সর্বকনিষ্ঠ সদস্যও বিভিন্ন মেয়াদে কারা বরণ করেছেন, মামলার আসামি হয়েছে। আমাদের পরিবারগুলোও সাফারার হয়েছে। বিভিন্নভাবে একসাথে কাঁধে কাধ মিলিয়ে আন্দোলন সংগ্রামে একত্রিতভাবে ছিলেন। আমাদের মধ্যে থেকে কাউকে যদি মনোনয়ন দেয়া হয় তাহলে কিন্তু তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ করা থাকবে।
এ সময় তারা মাসুদুজ্জামানের মনোনয়ন বাতিল করে তাদের মধ্য থেকে কাউকে মনোনয়ন দেয়া হলে সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে নির্বাচনে কাজ করার অঙ্গিকার করেন।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনির হোসেন খান, নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির ও সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার প্রধান, বন্দর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নামুল হক রানা, মহানগর বিএনপির সদস্য ডা. মজিবুর রহমান, অ্যাড. রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বাহিরে দল ও দলের অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দদের দেখা যায়নি সংবাদ সম্মেলনে। উপস্থিত ছিলেন না থানা কমিটির শীর্ষ নেতারাও।





































