মহানগর বিএনপি আহ্বায়ক সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে মামলা
নারায়ণগঞ্জ জেলা জজ আদালত চত্বরে এক মামলার বাদী ও তার পরিবারের সদস্যদের উপর হামলা ও মারধরের ঘটনায় বিএনপি নেতাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা নিয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাতে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয় বলে জানান ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন।
মামলায় মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খানকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। তার নির্দেশে অপর আসামিরা আদালত চত্বরে হামলা চালায় ববে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন বাদী রাজিয়া সুলতানা।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের একজন। ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে মেয়র পদপ্রার্থী হন৷
তার আগে ২০১১ সালে সাত খুন হত্যা মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী হয়ে দেশব্যাপী আলোচনায় আসেন৷
হামলা চালিয়ে হত্যাচেষ্টার উদ্দেশ্যে গুরুতর জখমের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাখাওয়াতের ঘনিষ্ঠ অনুসারী তিন আইনজীবী- অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম, মো. আল আমিন ও বিল্লাল হোসেন, সাখাওয়াতের সহকারী (মুহুরি) হিরণ বাদশা ছাড়াও ইসমাইল, শাহ আলম, টিটু এবং রাসেল বেপারীকে আসামি করা হয়েছে।
এছাড়াও হামলায় অজ্ঞাত আরও ৪ থেকে ৫ জন অংশ নিয়েছিল বলেও অভিযোগ রাজিয়ার।
গত রোববার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনের সামনে শহরের কালিরাবাজারের স্যানেটারি ব্যবসায়ী ইরফান মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যজরা হামলার শিকার হন। এতে ইরফান ছাড়াও তার স্ত্রী ও দুই সন্তান আহচ হন।
তাদের মারধরের একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ঘটনার দিন বিকেলে ফতুল্লা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন রাজিয়া। কিন্তু অভিযোগে সাখাওয়াত হোসেন খানের নাম থাকায় সেটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করতে পুলিশ গড়িমসি করছিল বলে অভিযোগ করেছিলেন ওই নারী।
সাখাওয়াত হোসেনের পক্ষ থেকেও একাধিক ব্যক্তি মামলা না করতে চাপ এবং হুমকি দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ করেন রাজিয়ার বড়ছেলে পেশাদার বক্সিং খেলোয়াড় মোহাম্মদ জিদান।
সোমবার রাত পর্যন্তও মামলাটি রেকর্ড না হওয়ায় ক্ষুব্দ রাজিয়া তার সন্তানদের নিয়ে থানায় অবস্থানের সিদ্ধান্ত নেন।
তার থানায় অবস্থানেরও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা শুরু হয়। পরদিন রাতে পুলিশ মামলাটি রেকর্ড করে।
যদিও মামলা রেকর্ডে দেরি হওয়ার ব্যাপারে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাসিনুজ্জামান বলেন, “আদালত চত্বরে ঘটনাটি খুবই স্পর্শকাতর, তাই বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক তদন্ত, ভিডিও যাচাই-বাছাই করে তারপর মামলা রেকর্ড করেছি।”
তবে এ মামলায় বুধবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার নেই বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
এদিকে, রাজিয়া সুলতানা মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, তার স্বামী ইরফান মিয়া অপর এক ব্যবসায়ী ইসমাইলের কাছে স্যানেটারি পণ্য বিক্রির ২৫ লাখ টাকা পাওনা। গত এক বছর যাবৎ তিনি এই বকেয়া পরিশোধ করছেন না, উল্টো তাদের হুমকি দেন। এই ঘটনায় কয়েকমাস আগে নারায়ণগঞ্জের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলাও করেন।
মামলাটি বিবাদী ইসমাইলের পক্ষে বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান লড়ছেন বলে জানান ভুক্তভোগী পরিবার।
ওই মামলায় রোববার আদালতে হাজিরা থাকায় বাদী ও তার পরিবারের সদস্যরাও সেখানে যান। আদালত প্রাঙ্গণে বাদীপক্ষের লোকজনকে দেখতে পেয়ে সাখাওয়াত হোসেনের নির্দেশে তার অনুসারী আইনজীবী ও সহকারী মিলে হামলা চালান বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন রাজিয়া।
এদিকে, মারধরের ঘটনার একাধিক ভিডিও মুহুর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে ইরফান ও তার পরিবারের সদস্যদের মারধর করা কয়েকজন ব্যক্তির মধ্যে সাখাওয়াত হোসেনের ঘনিষ্ঠ অনুসারী খোরশেদ আলম, আল-আমিন এবং মুহুরি হিরণ বাদশাকেও দেখা যায়।
যদিও এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন দাবি করে বিএনপি নেতা সাখাওয়াত হোসেন বলেছিলেন, “আমি ঘটনার সময় কোর্টে ছিলাম। পরে গিয়ে এই ঘটনার কথা শুনেছি এবং ভিডিও দেখেছি। আমি ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই, তার প্রমাণ, ভিডিওতেও আমাকে দেথা যায় না।”
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়াতে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে বিতর্কিত করতে এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত দেখাতে চাচ্ছেন বলেও দাবি সাখাওয়াতের।
তবে, অপর অভিযুক্ত অ্যাডভোকেট মো. আল-আমিন পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেন, “কয়েকজন ব্যক্তি মুহুরি হিরণ ভাইকে মারধর করতেছিল। এইটা দেইখা আমি একবার তাদের থামাইছিও। পরে তারা আমার উপরও চড়াও হয়।”
সাখাওয়াত হোসেনের পক্ষে বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালত চত্বরে মানববন্ধনও করেছেন তার অনুসারী আইনজীবীরা।
এদিকে, রোববারের ঘটনায় সোমবার ফতুল্লা মডেল থানায় আরেকটি লিখিত অভিযোগ দেন এসএম আশরাফুজ্জামান নামে আরেক ব্যক্তি। তিনি বিবাদী ইসমাইলের ভাই। তার দাবি, ইরফান ও তার পরিবারের সদস্যরা আদালত চত্বরে তাদের উপর হামলা চালান।
তবে, এ অভিযোগটি এখন পর্যন্ত মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়নি বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাসিনুজ্জামান। তিনি বলেন, “অভিযোগটি যাচাই-বাছাই চলছে। তদন্তের পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”





































