মিছিলে না যাওয়ায় দিনমজুরকে মারধরের অভিযোগ জামায়াত কর্মীর বিরুদ্ধে

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় জামায়াতে ইসলামীর মিছিলে না যাওয়ায় দলটির এক কর্মীর বিরুদ্ধে এক দিনমজুরকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ভুক্তভোগী দিনমজুর আব্দুল হামিদ তুষার থানায় লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন বলে জানান সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাশেদুল হাসান খান।
অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম রাশেদুল ইসলাম (৩৫)। তিনি স্থানীয়ভাবে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী বলে পরিচিত।
তার বিরুদ্ধে হামিদের অভিযোগ, গত শুক্রবার রাশেদুল ইসলাম ও তার অনুসারী কয়েকজন মিলে উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের মেঘনা শিল্পনগরী এলাকার প্রতাপেরচর গ্রামে হামিদকে মারধর করেন।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ এলাকার কোনাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ২৭ বছর বয়সী আব্দুল হামিদ তুষার পিরোজপুর ইউনিয়নের প্রতাপেরচর এলাকায় হারুন মিয়ার বাসার ভাড়া বাসায় থাকেন।
লিখিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, তিনি গত ৯ মাস ধরে লোকবল সাপ্লাইয়ের কাজে নিয়োজিত জামায়াত নেতা রাশেদুল ইসলামের অধীনে চুক্তিভিত্তিক কাজ করছিলেন। গত কয়েক দিন যাবৎ শরীর অসুস্থ থাকায় তিনি বাসায় ছিলেন। শুক্রবার সকালে উপজেলার মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় পিআর-সহ ঘোষিত পাঁচ দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর একটি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সেই মিছিলে অংশগ্রহণের জন্য জামায়াত নেতা রাশেদুল শুক্রবার সকালে তুষারের বাসায় গিয়ে তাদের সাথে মিছিলে যাওয়ার কথায় অপারগতা জানালে রাশেদুল, হাবিব ও তাদের বাহিনী তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এক পর্যায়ে লোহার তৈরি সিলাইরেন্স দিয়ে তার মাথায় আঘাত করলে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তার ডাক-চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যার পর লাশ গুম করার হুমকি দিয়ে রাশেদুল ও তার বাহিনী পালিয়ে যাওয়ার পর স্থানীয়রা তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যায়।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ফ্রেশের (কেমিক্যাল) লোকবলের কন্ট্রাক্টর রাশেদুল ইসলামের হাত ধরেই ফ্রেশে লোকবল প্রদান করা হয়। তার কথামতো না চললে কিংবা তার নির্দেশনা অনুযায়ী মিটিং মিছিলে না গেলেই চাকরি থেকে বের করে দেয়, মারধর করে। তার একটা সন্ত্রাসী বাহিনীও রয়েছে।
মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় জামায়াতের সমাবেশে যোগদানের জন্য একাধিক দিনমজুরকে জোরজবরদস্তি করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে রাশেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী তুষার বলেন, “ঘটনার পর আমাকে এখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য হুমকি দেয় জামায়াত নেতা রাশেদুল। যদি না যাই তাহলে আমার হাতে-পায়ের রগ কেটে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলারও হুমকি দেয়। রাশেদুল আমাকে মারধর করে বলেন, আমি জামায়াত নেতা মেঘনাঘাটে তোর কোন বাপ আছে নিয়ে আসিস। আমি এখানকার কন্ট্রাক্টর। আমার পেছনে অনেক লোক আছে তুই আমার বিষয়ে কিছুই জানিস না।”
অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামের কর্মী রাশেদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি এ বিষয়ে কিছু বলবো না এখানে বাড়ির মালিক ও আমার এখানকার বড় ভাই আছে তারা বিষয়টি দেখতেছে। তবে মারধর আমি করি নাই। এখানকার লোকজন করেছে।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সে গত ৫ দিন ধরে কাজে যায় না। তাই জিজ্ঞাস করতে এসেছিলাম। সে প্রতিনিয়ত স্থানীয়দের সাথে মাদক সেবন করে কিন্তু কাজে যায় না। তাই এসে জিজ্ঞাসা করার এক পর্যায়ে তর্কাতর্কি হয়।”
রাশেদুল ইসলাম জামায়াতে ইসলামীর কোনো পদে না থাকলেও তিনি দলটির সমর্থক জানিয়ে বলেন, “আমি জামায়াতের কোনো পদে নাই, তবে জামায়াত শিবিরকে সাপোর্ট করি। বিভিন্ন সময় মিটিং মিছিলে লোক নিয়ে যাই।”
সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাশেদুল হাসান খাঁন জানান, “এ বিষয়ে থানায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”