আন্দোলনের হুঁশিয়ারি ইসলামী আন্দোলনের

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন, প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রসংস্কার, খুনিদের দৃশ্যমান বিচার এবং মেট্রোরেল প্রকল্পে নারায়ণগঞ্জকে যুক্ত করার দাবিতে গণসমাবেশ করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ মহানগর শাখা এ গণসমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ইসলাম শক্তি এখন প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। ইসলামপন্থীরা বুঝেছে যে, অতীতে তাদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে এবং আমাদেরকে ক্ষমতার স্বার্থে ব্যবহার করে তারা বারবার জনগণেরে সাথে প্রতারণা করেছে। আমরা আর এটা হতে দিব না। আগামী নির্বাচনে সকল ইসলামপন্থী শক্তিসহ যারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে এবং রাজ পথে থেকে ফ্যাসিবাদকে হটানোর জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে, সকল দেশ প্রেমিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ হবো।
তিনি বলেন, আমরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছি। আমরা এটি চাইনি, একপক্ষ অতীত আঁকড়ে ধরতে চায়, বাহাত্তরের সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থা ধরে রাখতে চায়, সংস্কার চায়। কিন্তু দেশ নতুনভাবে এগিয়ে যাক এটি তারা চায় না, তারা একটি পক্ষ। আর আমরা যারা ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে রাজ পথে ছিলাম আমরা মনে করি বাহাত্তরের সংবিধান মুক্তি দিতে পারে নাই।
তিনি আরও বলেন, সংস্কারের মূল জায়গা হলো নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার। কারণ অতীতে ১২টি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে প্রত্যেকটি নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন আছে। তবে কিছু কিছু নির্বাচন তুলনামূলক ভালো হয়েছে কিন্তু সেই ভালো নির্বাচন দিয়ে আমরা ভালো সরকার পাইনি। ভালো মানুষকে আমরা সংসদে দেখতে পারি নাই। কারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ভালো মানুষ পার্লামেন্টে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, কালো টাকা ও পেশী শক্তি যাদের আছে তারাই নির্বাচিত হবে।
ভালো মানুষ যাতে ক্ষমতায় যেতে পারে, জনগণের সত্যিকার প্রতিনিধিরা যেন রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারে এবং শতভাগ ভোটারের ভোট যেন মূলায়ন করা হয় এজন্য আমরা ‘পিআর’ পদ্ধতি নির্বাচন চেয়েছিলাম। এখন আমরা যারা ‘পিআর’ নির্বাচন চাই, আমরা নাকি দেশ বিরোধী, দেশ বিরোধী কারা এটা মানুষ কিন্তু জেনে গেছে। আগামী নির্বাচনে জনগণ প্রমাণ করবে কারা দেশের জন্য নিরাপদ আর কারা ভয়ংকর। এজন্য আমরা চাচ্ছি একটি সুষ্ঠু গ্রহণ যোগ্য নির্বাচন। আমরা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আদায় করবো ইনশাআল্লাহ। দেশের প্রয়োজনে আমরা আবারও নতুন আন্দোলনে নামবো। ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আপেক্ষ করব। এর মধ্যে যদি সরকার সংস্কারের ব্যাপারে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে এবং সংস্কার আলোতে ‘পিআর’ পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের দিকে না যায় তাহলে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে আমরা যারা দেশ প্রেমিক, পিআর ও জনগণের পক্ষের শক্তি রয়েছি তারা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে নামবো ইনশাআল্লাহ।
প্রধান বক্তা দেলাওয়ার হোসাইন সাকী বলেন “ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ক্ষমতার রাজনীতি করে না, জিঘাংসার রাজনীতির চর্চা করে না। আদর্শিক রাজনীতি করা হলো আমাদের কাজ। আমরা মানুষকে স্বাধীনভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে দিতে চাই, কোন চাঁদাবাজের স্থান আমাদের এখানে নেই। শুধু এমপি হওয়ার জন্যই যদি আন্দোলন করতাম তাহলে এই অফার বহুবার আমাদেরকে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে কোন রাজনীতি করতে চাই না।”
সভাপতির বক্তব্যে মহানগরী সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ বলেন, “অনেকে বলে পি আর খায় না মাথায় দেয়? আমরা স্পষ্ট বলতে চাই, পি আর এখন জনগণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। পি আরের বিরুদ্ধে কথা বললে জনগণ আপনাদেরকে মেনে নিবে না। যারা ১৬ বছর অন্যায়ভাবে মানুষকে হত্যা করেছে, গুম করেছে এবং ৫ আগস্টের পর দেশ ছেড়ে পালিয়েছে তাদের বিচার হওয়ার পূর্বে কোনো নির্বাচন দেখতে চাই না।”
গণসমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সেক্রেটারি সুলতান মাহমুদের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) মুফতি দেলাওয়ার হোসাইন সাকী, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপকমিটির সম্পাদক হারুনুর রশিদ, মহানগর সহ-সভাপতি নুর হোসেন, জয়েন্ট সেক্রেটারি ডা. সাইফুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা শামসুল আলম, প্রচার ও দাওয়াত সম্পাদক বিলাল খান, অর্থ সম্পাদক ইসমাইল প্রমুখ।