০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২১:৫৬, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

তিন আসনের সীমানা নির্ধারণ: স্বাগতের পাশাপশি আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

তিন আসনের সীমানা নির্ধারণ: স্বাগতের পাশাপশি আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

নারায়ণগঞ্জের তিনটি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয় রাজনীতিকরা। তবে, কারও কারও মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। 

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে নারায়ণগগঞ্জ তিন, চার ও পাঁচ আসনে সীমানায় পরিবর্তন এসেছে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে যুক্ত হয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের দশটি ওয়ার্ড। আগে কেবল সোনারগাঁ উপজেলা এ আসনে যুক্ত ছিল।

এদিকে, সিটি কর্পোরেশনের দশটি ওয়ার্ড নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে চলে গেলেও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সদর উপজেলার গোগনগর ও আলীরটেক ইউনিয়ন। এ দু’টি ইউনিয়ন আগে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সঙ্গে যুক্ত ছিল।

অন্যদিকে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বাকি ১৭টি ওয়ার্ড এবং বন্দর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদীয় এলাকা বলে বিবেচিত হবে।

এর আগে বন্দরকে ভাগ করে দু’টি আসনÑ নারায়ণগঞ্জ-৩ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাবের ঘোর বিরোধীতা করেছিলেন স্থানীয় রাজনীতিকরা। তারা নির্বাচন কমিশনে লিখিতও দিয়েছিলেন, অংশ নিয়েছিলেন ইসির ডাকা গণশুনানিতেও। আপত্তির মুখে নির্বাচন কমিশনও তাদের কারিগরি কমিটির সুপারিশ পুনর্বিবেচনা করে।

নুতন সীমানা অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১১ থেকে ২৭ নম্বর ওয়ার্ড এবং বন্দর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এলাকা হিসেবে বিবেচিত হবে। ইসির কারিগরি কমিটির প্রস্তাবে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নকে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সঙ্গে যুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু এমনটা করা হলে বন্দরবাসীর ভৌগলিক ও প্রশাসনিক জটিলতায় পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। ফলে বিরোধীতা করেছিলেন সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারাও।

বন্দরকে অবিভক্ত রাখার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান। তিনি বলেন, “বন্দরকে বিভক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছিলাম। আজকে বন্দরকে একসাথে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে, এজন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।”

তবে, গোগনগর ও আলীরটেক ইউনিয়নকে আলাদা করে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সঙ্গে যুক্ত করার সিদ্ধান্তকে ‘অপ্রত্যাশিত’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এ নেতা। তিনি বলেন, “আলীরটেক ও গোগনগরকে চার আসনের সঙ্গে যুক্ত করার বিষয়টি অপ্রত্যাশিত। আমরা চাই আগের সীমানাতেই রাখা হোক এই দুইটি ইউনিয়নকে। আমরা এ বিষয়ে ইসিকে অবহিত রাখার চেষ্টা করবো।”

এদিকে, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকাকে বাদ এবং সেটিকে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে যুক্ত করার সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ।

তিনি বলেন, “সিদ্ধিরগঞ্জকে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাথে যুক্ত করার ফলে এই এলাকার জনমতের বিপরীত প্রতিফলন ঘটেছে। জনগণের আকাঙ্ক্ষা ছিল আগের সীমানা অনুযায়ী সিদ্ধিরগঞ্জ নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনেই বহাল থাকা। এতে প্রশাসনিকভাবেও একটা ভারসাম্য থাকতো। আশা করি, ইসি জনমতের দিক বিবেচনা করবে। আমরা এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকেও অবহিত করবো।”

তবে, নির্বাচন কমিশনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ও মডেল গ্রুপের কর্ণধার মাসুদুজ্জামান মাসুদ। তিনি আলীরটেক ও গোগনগর ইউনিয়নকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে রাখলে ভাল হতো বলে মন্তব্য করেছেন। অবহেলিত আলীরটেক ও গোগনগর ইউনিয়ন উন্নয়নবঞ্চিত হবে বলে মনে করেন। 

বন্দরকে অবিভক্ত রাখার সিদ্ধান্তে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ। তবে সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১০টি ওয়ার্ডকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে বাদ দিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে যুক্ত করার সিদ্ধান্তে ‘নাখোশ’ বলে জানান তিনি।

মাসুম বিল্লাহ বলেন, “সিদ্ধিরগঞ্জকে ভেঙে তিন আসনের সঙ্গে যুক্ত করা ঠিক হয়নি। এখন আর সিদ্ধান্ত পাল্টানোর সুযোগ নেই। কিন্তু এতে ক্ষোভ প্রকাশ করছি।”

এদিকে, বন্দরকে অবিভক্ত রাখার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অনেকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর ও সাবেক যুবদল নেতা মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ইসির প্রজ্ঞাপনের নারায়ণগঞ্জ অংশটি তুলে ধরে লিখেছেন, “বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে শুনানি করে জয়ী হয়েছি। বন্দর উপজেলা নারায়ণগঞ্জ-৫ এ থাকলো।”

মহানগর বিএনপির সদস্য অ্যাডভোকেট শরীফুল ইসলাম শিপলু লিখেছেন, “নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বন্দরকে অবিভক্ত রাখার আন্দোলনে যেসব রাজনৈতিক নেতাদের পাশে পাইনি তাদেরকেও ধন্যবাদ।”

“আবারো নারায়ণগঞ্জের মানুষের বিজয় অর্জিত হয়েছে। সকলের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা”, নিজের ফেসবুক পেজে লিখেছেন গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন।

এর আগে ২৬ আগস্ট নির্বাচন কমিশনে গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রেজাউল করিম, জামায়াত ইসলামীর মহানগর কমিটির সাবেক আমীর মাওলানা মাঈনুদ্দিন আহমাদ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি ও কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক কাউন্সিলর আবুল কাউসার আশা, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মাজেদুল ইসলাম, বিএনপির মহানগর আহবায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট শরীফুল ইসলাম শিপলু, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি, সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালামের কন্যা অ্যাডভোকেট শামসুন নূর বাঁধন প্রমুখ।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়