২৭ আগস্ট ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ:

প্রকাশিত: ১৯:৪০, ২৩ আগস্ট ২০২৫

নতুন ‘গডফাদার’ হতে চাওয়া ব্যক্তিদের সাবধান করলেন রফিউর রাব্বি

নতুন ‘গডফাদার’ হতে চাওয়া ব্যক্তিদের সাবধান করলেন রফিউর রাব্বি

নারায়ণগঞ্জে নতুন করে যারা ‘গডফাদার’ হতে চান তাদের সাবধান করে দিয়ে নারায়ণগঞ্জ যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের আহ্বায়ক ও নাগরিক আন্দোলনের অন্যতম নেতা রফিউর রাব্বি বলেছেন, “শামীম ওসমানরা নাই, গডফাদার নাই বলে আপনারা যা ইচ্ছা তাই নতুন করে তৈরি করবেন, সেই সুযোগ পাবেন না।”

শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে বাসভাড়া বৃদ্ধি ও পরে সে সিদ্ধান্ত স্থগিত করার প্রসঙ্গে সংগঠনটির ডাকা সংবাদ সম্মেলনে এই কথা বলেন তিনি।

শুরুতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে বাসভাড়া নিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তিনি।

পরে রাব্বি বলেন, “আমাদের পাঠ করা এই ধারণাপত্রটি অন্য রকম হওয়ার কথা ছিল। আমরা কঠোরতম পদক্ষেপ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু জেলা প্রশাসক গতকাল (শুক্রবার) তার সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে সেই জায়গা থেকে সরে এসে আমাদের ধারণাপত্র উপস্থাপন করলাম। যে ধারণা উপস্থাপন করলাম সেটির জানান দিচ্ছি।”

“এখানে একটি বিষয় আমরা স্পষ্ট বলতে চাই- আমাদের জেলা প্রশাসকরা মনে করেন, তারা বিভিন্ন জেলার জমিদার। এবং জেলার অন্যান্য নাগরিকরা হচ্ছে প্রজা। আমাদের স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, কিছু সাংবাদিক জেলা প্রশাসক আসার সাথে সাথে ফুল ও ফুলের তোরা দিয়ে এমন একটি অবস্থা তৈরি করেন যে, জেলা একটি ফেরেশতাকে সেখানে পেয়েছে। তখন প্রতিযোগিতা শুরু হয় কে কীভাবে তার কাছ থেকে সুযোগ সুবিধা নিবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকদের ভিতরেও ধারণা তৈরি হয় যে, তারা নারায়ণগঞ্জের এমন একজন জ্ঞানী ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তি, এবং এমন একজন জমিদার যে, তারা যখন যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। এবং যা ইচ্ছা তা করার অধিকার রয়েছে, এবং জেলাবাসী তা মানতে বাধ্য।”

‘জেলা প্রশাসকদের এই জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি গণবিরোধী, জনবিরোধী, স্বাধীন বাংলাদেশের এবং চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের চিন্তার পরিপন্থি’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

রফিউর রাব্বি বলেন, “আমরা আমলাদের সবসময় দেখেছি যে তারা কীভাবে দুর্নীতি করে। শেখ হাসিনা শাসন আমলে তার অর্থমন্ত্রী বলেছেন, কানাডায় যে বেগমপাড়া তৈরি হয়েছে, তার অধিকাংশ আমলাদের। কিন্তু তারা আমলাদের দুর্নীতি প্রকাশ করে নাই। কারণ আমালাদের মাধ্যমে টিকে থেকে তাদের দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও বর্বরতা অব্যাহত রেখেছে।”

তিনি রাজনীতিক ও অন্য সব পেশাজীবীদের মতো জেলা প্রশাসন ও পুলিশের মধ্যেও স্বচ্ছতা বাস্তবায়নের দাবি জানান।

“এই স্বচ্ছতা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমাদের সমাজ সঠিক পথে অগ্রসর হবে। জেলা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসনের লোকজনও বিভিন্ন জায়গায় কে, কোথায়, কী করছেন, তার রিপোর্ট আপনাদের কাছে যেমন আছে, আমাদের কাছেও আছে। গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও পুলিশ প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ কে, কী করছে সকলের তথ্য রয়েছে। সুতরাং আপনারা নারায়ণগঞ্জে যা ইচ্ছে তা করে ফেলবেন এই দৃষ্টি ভঙ্গি পরিবর্তন করেন”, যোগ করেন রাব্বি।

তিনি আরও বলেন, “আমরা কিন্তু শামীম ওসমানের বর্বরতা, জাহেলিয়াতের মোকাবেলাও করেছি। নতুন করে আবার যারা গডফাদার হতে চাচ্ছেন, মাফিয়াতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছেন, আবার আপনারা গলাবাজিও করেন- চাঁদাবাজি কোথাও হচ্ছে না! আমরা নারায়ণগঞ্জে বাস করি, আমরা জানি কোথায়, কীভাবে চাঁদাবাজি হচ্ছে। পুলিশ, প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার যারা আছে, তারাও জানে। আপনারা সাবধান হয়ে যান।”

তিনি বলেন, “শামীম ওসমানরা নাই, গডফাদার নাই বলে আপনারা যা ইচ্ছা তাই নতুন করে তৈরি করবেন, সেই সুযোগ পাবেন না।”

শুক্রবার বিকেলে পরিবহন মালিকরা এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের হিসেব অনুযায়ী ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে বাসভাড়া ৬১ দশমিক ৩৬ পয়সা হয় বলেও দাবি করেন।

শনিবার সংবাদ সম্মেলনে এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে রফিউর রাব্বি বলেন, “বাস মালিক যারা ৬১ টাকা দেখাচ্ছেন, তারা এটা ১০০ টাকাও দেখাতে পারেন। ওসমান পরিবারের রাজত্বকালেও আমরা তা দেখেছি। আজকে যারা পরিবহন সেক্টরে নেতা রয়েছেন, এরাই সে সময় নেতা ছিলেন। এবং র‌্যাবকে চিঠি দিয়েছিলেন, নাসিম ওসমান, সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমানকে কত টাকা চাঁদা তারা দেয়। সুতরাং এই সমস্ত হিসাব এখন উপস্থাপন করলে চলবে না।”

“তারা যদি ধর্মঘট করতে চায়, সেই অধিকার তাদের রয়েছে। সেক্ষেত্রে এখানে প্রশাসন রয়েছে, সরকার রয়েছে, সেক্ষেত্রে তারা কি ভূমিকা পালন করবে সেইটা তাদের বিষয়। কিন্তু আমরা বলতে চাই, এই সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য জেলা প্রশাসক গত ২০ তারিখ এই রকম একটা জনবিরোধী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।”

সাংবাদিকদেরও সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আমরা নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিকদের চেহারা-চরিত্র আমরা জানি। এই সাংবাদিকরাই বিভিন্ন সময় সাহায্য-সহযোগিতা করেছে। কিন্তু এই জেলা প্রশাসক আসার আগেই নারায়ণগঞ্জের কিছু পত্র-পত্রিকা মানবিক ডিসি, মানবিক ডিসি, এই সমস্ত বলে আপনারা তার স্পর্ধ্বা ও ঔদ্ধত্য বৃদ্ধি করেছেন। এই বিষয়ে আপনারা সতর্ক থাকবেন।”

সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক অভিযোগ করেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সভায় সাংবাদিকদের উপস্থিতি ‘নিষেধ’ বলেও জানানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে রফিউর রাব্বি বলেন, “সভায় সাংবাদিকরা থাকতে পারবেন না, এমন স্পর্ধ্বা উনি কীভাবে দেখান। ওসমান পরিবারের সময়, আওয়ামী লীগের সময় শুনেছি যে, জেলা প্রশাসকরা বলেছেন, মিটিংয়ে সাংবাদিকরা থাকতে পারবেন না। কেন থাকতে পারবেন না? সেখানে কি জঙ্গি বা কোনো গোপন সংগঠনের সভা হচ্ছে? একটা জেলার কার্যক্রম ও উন্নয়নের জন্য তারা সভা করবেন, সেখানে কেন সাংবাদিকরা থাকতে পারবেন না? আমরা তার এই দৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্যের নিন্দা জানাই।”

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রথীন চক্রবর্তী, সিপিবির জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক দিপু, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস, বাসদের জেলা সদস্য সচিব আবু নাইম খান বিপ্লব, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি মাহমুদ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের মহানগরের আহ্বায়ক নিয়ামুর রশীদ বিপ্লব, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মনি সুপান্থ, সাধারণ সম্পাদক দীনা তাজরীন, উপদেষ্টা ভবানী শংকর রায়, সামাজিক সংগঠন সমমনার উপদেষ্টা দুলাল সাহা প্রমুখ।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়