২৪ মে ২০২৫

প্রকাশিত: ১৭:৩৮, ৬ মার্চ ২০২০

আপডেট: ১৮:০২, ৬ মার্চ ২০২০

ত্বকী হত্যা

সাত বছরেও শেষ হয়নি তদন্ত, গ্রেফতার আসামিরা জামিনে

সাত বছরেও শেষ হয়নি তদন্ত, গ্রেফতার আসামিরা জামিনে

সৌরভ হোসেন সিয়াম (প্রেস নারায়ণগঞ্জ): বাবা রফিউর রাব্বিকে শায়েস্তা করতেই হত্যা করা হয়েছে তার ছেলে নারায়ণগঞ্জের মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীকে। হত্যাকান্ডের এক বছরের মাথায় এমনটাই জানিয়েছিল তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব। সাবেক সাংসদ নাসিম ওসমানের পুত্র এবং বর্তমান সাংসদ আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমানের নির্দেশ এবং নেতৃত্বে এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে বলেও জানায় র‌্যাব। অচিরেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথাও জানিয়েছিল সংস্থাটি। তবে সেই প্রতিবেদন আর আলোর মুখ দেখেনি। হত্যার ঘটনার দীর্ঘ সাত বছরেও তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়নি।

তবে তদন্তকার্য এখনও চলমান জানিয়ে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল ইমরান উল্লাহ সরকার বলেন, ‘বদলিজনিত কারণে বহুবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করতে হয়েছে। তদন্তকার্য কিন্তু চলমান আছে। খুব শীঘ্রই আমরা তদন্ত শেষ করতে পারবো বলে মনে করছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনো কিছুতে প্রভাবিত না হয়ে নিরপেক্ষভাবে আমরা তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। অতি শীঘ্রই এটা শেষ হবে এবং আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’

২০১৩ সালের ৬ মার্চ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়ক থেকে নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। ওইদিন সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন পিতা রফিউর রাব্বি। দুই দিন পর ৮ মার্চ সকালে শহরের পাঁচ নম্বর ঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যার শাখা খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার হয়। ওইদিন রাতে অজ্ঞাত আসামি করে সদর থানায় মামলা করা হয়। পরে ১৮ মার্চ সাংসদ শামীম ওসমান, তাঁর ছেলে অয়ন ওসমান, জেলা যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা জহিরুল ইসলাম পারভেজ ওরফে ক্যাঙারু পারভেজ, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি রাজীব দাস, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, সালেহ রহমান সীমান্ত ও রিফাতকে দায়ী করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপারের কাছে একটি অবগতিপত্র দেন রফিউর রাব্বি। এ ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতারও করে র‌্যাব। এদের মধ্যে ইউসুফ হোসেন লিটন ও সুলতান শওকত ভ্রমর ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেয়।

২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন রফিউর রাব্বি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন একেএম শামীম ওসমান। এছাড়া ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী বিভিন্ন পরিবহনের মালিকেরা ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন। রফিউর রাব্বি এই চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। এসব কারণেই বাবার প্রতি ক্ষুব্দ হয়ে তাকে শায়েস্তা করতে ছেলেকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়। ত্বকী হত্যাকান্ডের প্রথম বর্ষপূর্তিতে র‌্যাবের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমে এসব তথ্য তুলে ধরেন।
ওই সময় র‌্যাব আরও জানায়, সাংসদ শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমানের নির্দেশে এবং প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে সহযোগীদের নিয়ে ত্বকীকে হত্যা করা হয়। পরে লাশ ফেলা হয় শীতলক্ষ্যা নদীতে। অচিরেই এই হত্যাকান্ডের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার থাকলেও দীর্ঘ সাত বছরেও তা সম্ভব হয়নি। এদিকে গ্রেফতার আসামিরাও জামিনে বেরিয়ে এসে এখন পলাতক।

ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বির অভিযোগ, নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবার এই হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত বলেই এর বিচার হচ্ছে না। সংসদে ওসমান পরিবারের পাশে থাকার কথা উল্লেখ করে দেওয়া বক্তব্যের পর থেকেই তদন্ত বন্ধ রয়েছে। আর তদন্ত কি হবে? র‌্যাব তো তদন্ত শেষ করে সংবাদ সম্মেলনে কারা, কীভাবে ত্বকীকে হত্যা করেছে তা সবই জানিয়েছে।

তিনি বলেন, ত্বকী হত্যার বিচার হবেই। এই সরকার থাকতে হোক কিংবা পরেই হোক। দৃষ্টান্তমূলক বিচার হবে।

ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিতে দীর্ঘ সাত বছর শহরে আলোকশিখা প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালন করছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। প্রতি মাসের ৮ তারিখ এই কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মসূচি থেকে ত্বকী হত্যার বিচার দাবি করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।

ত্বকী হত্যার বিচারের দাবি করে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করেছি এবং করছি। এই হত্যার বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে মানবিক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়