অপরাধীদের শাস্তি দিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে বর্তমান সরকার
বাসদের প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক, দেশের বিশিষ্ট বামপন্থি চিন্তাবিদ খালেকুজ্জামান বলেন, ‘২৪ এর ছাত্র শ্রমিক জনতার গণ অভ্যুত্থানে দুই হাজারের বেশি শহীদি আত্মদানে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতন ঘটেছে। কিন্তু ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বহাল রয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেও আমরা দেখি একদল সাম্প্রদায়িক দূর্বৃত্ত মাজার মন্দির আক্রমণ-ভাংচুর, প্রথম আলোর কার্যালয়সহ বিভিন্ন পত্রিকা অফিসে হামলা-ভাংচুর, মবকিলিং ঘটাচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভাংচুর-লুটপাট শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের মত ঘটনা ঘটছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এইসব ঘটনায় সম্পৃক্ত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে বর্তমান সরকার।
বাসদের ৪৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ১০৭ তম বার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে শুক্রবার বিকাল ৩ টায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অনুষ্ঠিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এই উপলক্ষে শহরে লাল পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গণসংগীত পরিবেশন করে।
বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার আহবায়ক নিখিল দাসের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, কমিউনিস্ট পার্টি নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সদস্যসচিব আবু নাঈম খান বিপ্লব, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক ১৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, বাসদের জেলা কমিটির সদস্য, এস এম কাদির।
খালেকুজ্জামান আরও বলেন, উচ্চ নিত্যপণ্যের দামে মানুষের জীবন বিপর্যস্ত। সরকার সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না। দেশের ২৬ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তায় ভুগছে। বকেয়া মজুরির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ মিছিলে ফ্যাসিস্ট সরকারের মতোই গুলি চালিয়ে প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। এটি কোনভাবে মেনে নেয়া যায় না। বর্তমান সরকার ১১টি সংস্কার কমিটি গঠন করেছে, এটি ইতিবাচক দিক। কিন্তু অতীতের সরকার যেমন উন্নয়ন ও গণতন্ত্র পরস্পর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ছিল, ঠিক তেমনই বর্তমান সরকারও সংস্কার এবং নির্বাচনকে পরস্পর মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। আমি সরকারকে আহবান জানাই প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রমের সাথে সাথে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। নাহলে দেশের অস্থিতিশীলতা বাড়তেই থাকবে।
ফিরোজ বলেন, এখন কেউ কেউ ‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ও ‘৭২ এর সংবিধানকে বাতিল করতে চায়। এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ এদের পরিহার করতে হবে। প্রয়োজন ‘৭২ এর সংবিধানের সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করা। ‘৭১এর মুক্তিযুদ্ধ এবং ‘৯০ ও ‘২৪ এর গণ অভ্যুত্থান একই সূত্রে গাঁথা। ‘৭১ এর সাম্যের চেতনা ও ‘২৪ এর বৈষম্যহীন চেতনার আলোকে বৈষম্যমূলক পুঁজিবাদীব্যবস্থাকে উচ্ছেদ করে বৈষম্যহীন সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা নির্মাণের সংগ্রামকে বেগবান করতে হবে।
অন্যান্য নেতৃবৃন্দের বক্তব্যে জেলার সংকটের বিষয়গুলি যেমন, শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা দূষণমুক্ত করা, যানজট নিরসনের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া, ট্রেন ও বগির সংখ্যা বাড়ানো, গ্যাস ও পানির সংকট নিরসন, নারায়ণগঞ্জে পাবলিক বিশ^বিদ্যালয় স্থাপন, ওষুধের দাম, পরীক্ষার ফি ও ডাক্তারের ভিজিট কমানো, গ্রাম ও শহরের শ্রমজীবীদের রেশন প্রদান ইত্যাদি দাবিসমূহ উঠে আসে।