পূজায় জমজমাট মিষ্টান্নের ব্যবসা

শারদীয় দুর্গাপূজা ঘিরে উৎসবের আমেজে ভরে উঠেছে শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জ। মণ্ডপে ঢাক-ঢোল, উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনি আর ঢাকির কাঁসার সুর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই শহরের প্রতিটি গলিতে ছড়িয়ে পড়েছে মিষ্টান্নের ঘ্রাণ। বিশেষ করে উৎসবকে কেন্দ্র করে লাড্ডু ও মিষ্টান্নের দোকানগুলোতে বেড়েছে ক্রেতাদের চাপ।
পূজাতে অতিথিদের আপ্যায়ন ও প্রসাদের জন্য লাড্ডু, সন্দেশ, রসমালাই, চমচম, কালোজামসহ বিভিন্ন মিষ্টান্নের চাহিদা থাকে পুরো উৎসব জুড়ে। মিষ্টান্নের এই চাহিদা পূরণে নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জ, কালিরাজার, চাষাড়া, বঙ্গবন্ধু সড়ক থেকে শুরু করে শহরের অলিগলি- সব জায়গার মিষ্টির দোকানগুলোতে এখন মিষ্টান্নে ভরপুর।
মিষ্টান্নের দোকানগুলোতে চলছে এখন রাত-দিন ব্যস্ততা। বিশেষ করে নগরীর ১ নম্বর রেলগেটের নিউ মিষ্টি মুখ, নবাব সিরাজ উদ-দৌলা সড়কের আদি আদর্শ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, বঙ্গবন্ধু সড়কের উকিল পাড়ার জগৎ বন্ধু মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, স্বর্ণপট্টি মোড়ের দীপা সুইট মিটসহ বিভিন্ন এলাকায় পূজাকে কেন্দ্র করে অস্থায়ী দোকানগুলোতে চলছে পূজা কেন্দ্রিক ব্যবসা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন যে পরিমাণ মিষ্টি বিক্রি হয়, পূজার সময় তা বেড়ে দাঁড়ায় বহুগুণ। বিশেষ করে এগুলো এখন পূজার প্রসাদ আর আনুষ্ঠানিকতার অপরিহার্য অংশ। প্রতিটি মণ্ডপ থেকে অর্ডার আসছে লাড্ডু, মিষ্টি, সন্দেশ, চমচমসহ নানা মিষ্টান্নের।
দোকানগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি ঘিয়ের লাড্ডু বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকা, তেলের লাড্ডু বা বেসন লাড্ডু ৩৫০-৩৮০ টাকা, বিভিন্ন ধরণের সন্দেশ ৩০০-৮০০ টাকা, চমচম ৩২০-৩৬০ টাকা, কালোজাম মিষ্টি ৩৫০-৩৮০ টাকা, সাদা মিষ্টি ৩২০-৩৬০ টাকা, কালো মিষ্টি ৩৫০-৩৮০ টাকা।
নারায়ণগঞ্জের পুরোনো মিষ্টি ব্যবসায়ী আদি আদর্শ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী মলয় কুমার মোদক বলেন, “পূজা উপলক্ষে মিষ্টান্নের চাহিদা বেশি থাকে। যার মধ্যে লাড্ডু বেশি বিক্রি হয়। পূজা এসে পড়েছে, তাই দোকানে চাপও বাড়ছে। সামনের দিনগুলোতে আরো বাড়বে বলে আশা করি।”
মিষ্টির দোকানের এক কর্মচারী বলেন, “পূজার সময় ক্রেতাদের চাহিদার জন্য রাতভর বানানো হয়। যদিও কষ্ট হয়, কিন্তু ভালো মজুরি মেলে। আমাদের জন্য এটা বাড়তি আনন্দ। বছরের এই সময়টার অপেক্ষায় থাকি মালিকের কাছ থেকে বাড়তি বোনাসসহ আলাদা একটা পারিশ্রমিকের জন্য।”
নিউ মিষ্টি মুখের কর্মচারী অসীম ঘোষ বলেন, “পূজাকে কেন্দ্র করে ক্রেতারা দোকানে আসছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্ডার আসছে। ক্রেতাদের চাহিদা পূরণে আমরা সারাদিনই বানাচ্ছি।”
লাড্ডু কিনতে আসা অর্পণ রায় বলেন, “পূজার আসল আনন্দটা তখনই সম্পূর্ণ হয়, যখন দেবীকে লাড্ডু নিবেদন করা হয় আর সবাই মিলে একসঙ্গে সেটা খাওয়া হয়। এই ভাগাভাগির মধ্যেই পূজার আনন্দ।”
আরেক ক্রেতা সুস্মিতা বণিক বলেন, “একসময় পূজার সময় বাড়িতে পরিবারের নারীরাই হাতে লাড্ডু তৈরি করতেন। সময় পাল্টেছে, শহরে এখন বড় বড় দোকানে বিক্রি হওয়ায় কেউ আর আগ্রহ দেখিয়ে বানান না। কিন্তু কেউ কেউ শখ করে নিজেরা বানায়। তবে পূজায় লাড্ডু ছাড়া কল্পনা করা যায় না।”
ব্যবসায়ীরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জের বাইরে থেকেও বহু মানুষ আসছেন অর্ডার করার জন্য। এর মধ্যে অনেকে আগেই বলে রেখেছেন। ঢাকাসহ আশেপাশের অঞ্চলের মানুষ নারায়ণগঞ্জে আসছেন শুধু এখানে তৈরি লাড্ডুর স্বাদ নিতে।
মিষ্টান্নের বাজার শুধু ব্যবসায়ীদের জন্য নয়, কর্মসংস্থানের বড় একটি সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। পূজার মৌসুমে দোকানগুলোতে অস্থায়ীভাবে বাড়তি কর্মী নেওয়া হয়। কেউ প্রসাদ প্যাকেট তৈরিতে যুক্ত, কেউ আবার ডেলিভারির কাজে।
শারদীয় দুর্গাপূজায় যেমন দেবীকে অর্চনা ভক্তদের দেয় পূর্ণতা, তেমনি লাড্ডু ও মিষ্টি ছাড়া পূজা থেকে যায় অপূর্ণ। এই লাড্ডু শুধু আপ্যায়ন বা দেবী ভক্তির প্রতীক নয়, ঐতিহ্যের ধারকও।