০৭ মে ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২১:৪৪, ৬ মে ২০২৫

আপডেট: ২১:৫৬, ৬ মে ২০২৫

যানজটের শহরে নিত্যদিনের ভোগান্তি

যানজটের শহরে নিত্যদিনের ভোগান্তি

নারায়ণগঞ্জ শহরে চলাচল যেন প্রতিদিন এক যন্ত্রণার নাম। যানজট যেন রুটিনভিত্তিক দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে নগরবাসীর জন্য। প্রশাসনের নানা উদ্যোগ থাকলেও তা বাস্তবায়নে ঘাটতির কারণে সমস্যার সমাধান মিলছে না। ফলে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী—সবার মূল্যবান সময় যানজটে নষ্ট হচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে কর্মজীবনে।

বিশেষ করে শহরের ২ নম্বর গেট রেলক্রসিং এলাকায় প্রতিনিয়ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এখানে ইজিবাইক চালকরা মূল সড়কের ওপরেই যাত্রী ওঠানামা করান, আবার ঢাকা-মুখী বাসগুলোও চলন্ত পথে থেমে যাত্রী তোলে। পাশাপাশি অবৈধ অটো ও সিএনজি স্ট্যান্ড দুটি লেনের এক লেন প্রায় দখলে নিয়ে নেয়, ফলে সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়ে।

এছাড়া বঙ্গবন্ধু সড়কের নিতাইগঞ্জ থেকে মণ্ডলপাড়া পর্যন্ত রাস্তার পাশে সারি সারি ট্রাক পার্ক করে রাখা হয় সারাক্ষণ, যা সড়কের অর্ধেকজুড়ে স্থান দখল করে রাখে। মণ্ডলপাড়া থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সড়কের বিভিন্ন বহুতল ভবন ও শপিংমলের সামনে ব্যক্তিগত গাড়ি ও পণ্যের গাড়ি অবৈধভাবে পার্কিং করা হয়। এর মধ্যে উকিলপাড়া এলাকায় হোসিয়ারি কারখানার সামনে নিয়মিত মালামাল লোড-আনলোডের জন্য রাস্তা দখল করে গাড়ি রাখা হয়।

চাষাঢ়া মোড়ে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনেও একই অবস্থা। রোগী ও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত গাড়ি এবং ওষুধ কোম্পানির কর্মীদের বাইক রাস্তায় রেখে যাতায়াত পুরোপুরি বিঘ্নিত করে।

অন্যদিকে, চাষাঢ়া কেন্দ্রস্থলের সামনে এবং খাজা সুপার মার্কেটের পাশেও রয়েছে অবৈধ অটো, সিএনজি ও লেগুনা স্ট্যান্ড। পুরো সড়কজুড়ে যাত্রী ওঠানামা করানো হয় খোলামাঠে, যা প্রতিনিয়ত যানজটের অন্যতম কারণ।

বর্তমানে ড্রেনেজ উন্নয়ন কাজের জন্য বাসগুলো শহরে প্রবেশ করছে বিকল্প রুট নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সড়কের পরিবর্তে সরাসরি বঙ্গবন্ধু সড়ক হয়ে। দুই পাশে ফুটপাত থাকা সত্ত্বেও সেখানে মানুষ হেঁটে চলতে না পেরে সড়কেই হাঁটছেন। এর ফলে বাসগুলোর গতি কমে যাচ্ছে, সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানবাহনের সারি।

শহরের রাস্তায় অনুমোদনহীন বা রুট পারমিটবিহীন বাসও যাত্রী তুলছে, যা ট্রাফিক ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। পাশাপাশি, সড়কে ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ইজিবাইক চলাচল করছে, যা যানজটকে আরও তীব্র করছে।

সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ফুটপাতজুড়ে থাকা অবৈধ দোকান। পথচারীরা বাধ্য হয়ে মূল সড়ক দিয়ে হাঁটছেন, ফলে যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।

সমাধানের জন্য নগরবাসীর দাবি, চাষাঢ়া ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মোড় থেকে অবৈধ অটো ও সিএনজি স্ট্যান্ড উচ্ছেদ, অবৈধ ফুটপাত দখলদারদের সরিয়ে পথচারীদের হাঁটার সুযোগ সৃষ্টি এবং নিয়ন্ত্রিত ট্রাফিক ব্যবস্থার কার্যকর বাস্তবায়ন।

নারায়ণগঞ্জ শহরের দীর্ঘদিনের যানজট সমস্যার মূল কারণ সদিচ্ছার অভাব—এমন মন্তব্য করেছেন সাংবাদিক আফজাল হোসেন পন্টি। তিনি বলেন, “নারায়ণগঞ্জে এই যানজটের সমস্যা দীর্ঘদিনের। কিন্তু এটা সমাধানের বিষয় হলো আপনি সমাধান চান কিনা। আমার অভিজ্ঞতায় মনে হয়েছে কেউই এই সমস্যার সমাধান চায় না। না জনপ্রতিনিধিরা, না প্রশাসন।” তিনি আরও বলেন, “এই শহরে যানজট কমানো কঠিন কিছু না। যদি আমাকে বলা হয়, আমি কাউকে উচ্ছেদ না করে, কাউকে বিতাড়িত না করে তিনদিনেই অর্ধেক যানজট কমিয়ে দিতে পারবো। মূল সমস্যা ব্যবস্থাপনার যার চরম অভাব রয়েছে।”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, যানবাহন খাতের মূল অংশীদার বাস চালক, মালিক, অটো চালক, গ্যারেজ মালিকদের কখনোই আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। অথচ, “তাদের নিয়ে বসলে সমস্যা দ্রুত সমাধান করা সম্ভব।” রমজান মাসের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “রমজানে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সড়ক বন্ধ ছিল, অটো ও হকারের চাপ ছিল অনেক বেশি, অথচ তখন স্বস্তিতে চলাচল করা গেছে। কারণ ছিল সদিচ্ছা এবং অর্থ, বিকেএমইএ ও চেম্বার টাকা দিয়েছে, স্বেচ্ছাসেবক দিয়েছে, পুলিশিং করেছে। তখন স্বস্তি এসেছে।” তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা শহরবাসী কর দেই, প্রশাসনের বেতন দেই, তাহলে তাদের কর্তব্য পালনে কেন আবার আমাদের বাড়তি টাকা দিতে হবে? এর মানে দাঁড়ায় এটা ইচ্ছাকৃত। প্রশাসনের ইচ্ছাকৃত উদাসীনতায় মানুষ যানজটে ভোগান্তিতে পড়ছে।”

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কেন্দ্রীয় সদস্য আহমেদুর রহমান তনু বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ শহরে যানজট অন্যতম বড় সমস্যা, যা সমাধান করতে হলে প্রশাসনের সদিচ্ছা এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। তিনি জানান, গত রমজানে চেম্বারের একটি দল নিয়ে পরিকল্পিত ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শহরের যানজট অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছিল—যা একটি সফল উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, শহরে অবৈধ স্ট্যান্ডগুলোকে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে এবং ট্রাফিক বিভাগকে আরও কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এছাড়া ড্রেনেজের কাজের জন্য শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বন্ধ থাকায় বঙ্গবন্ধু সড়কে চাপ বেড়েছে। কিন্তু ড্রেনের কাজটি দুই পাশে এলোমেলোভাবে ও ধীরগতিতে চলছে, যা যানজটকে আরও দীর্ঘায়িত করছে। তিনি মত প্রকাশ করেন, যদি এই কাজটি পরিকল্পিত ও নিয়ন্ত্রিতভাবে করা হয়, তাহলে যানজট অনেকটাই হ্রাস পাবে।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়