কদমরসুল সেতু নিয়ে মতবিনিময় সভা: “সেতু চাই, ভোগান্তি নয়”

নারায়ণগঞ্জের বন্দর ও সদর উপজেলার মধ্যকার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে শীতলক্ষ্যা নদীর উপর নির্মাণাধীন বহুল আকাঙ্ক্ষিত কদমরসুল সেতুর কাজ বিঘ্নিত না করার দাবি উঠেছে। একইসাথে এই সেতুর কাজ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে জনদুর্ভোগ যাতে সৃষ্টি না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখার কথা বলেছেন বক্তারা।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নগরীর আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগারের পরীক্ষণ হলে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তারা।
নারায়ণগঞ্জ নাগরিক আন্দোলন আয়োজিত এ সভা বিকেল পাঁচটায় শুরু হয়ে তিনঘন্টা চলে। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, নাগরিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা অংশ নেন এবং তাদের অভিমত ব্যক্ত করেন।
স্বাগত বক্তব্যে নাগরিক আন্দোলনের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, কদমরসুল সেতু নিয়ে বিভিন্ন মত তৈরি হয়েছে। এ কারণে এ সভার আয়োজন করা হয়েছে, যাতে সকলে তাদের মতামত ব্যক্ত করতে পারেন এবং একটি সুনির্দিষ্ট সমাধান যাতে বেরিয়ে আসে।
কদমরসুল সেতু প্রকল্প নিয়ে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে সংগঠনের পক্ষ থেকে আলোচনা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সেতুটির নকশায় পশ্চিমপাড়ের ঢালটি যেভাবে নামানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এতে নগরীর বিদ্যমান যানজট আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।
এ সময় সেতুটির নকশায় কিছু পরিবর্তন আনলে এই সমাধান সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন রাব্বি।
“বন্দরের সাথে শহরবাসীকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর জন্য কেউ কেউ চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমরা স্পষ্টভাবে বলছি, আমরা সেতুটি হোক এটি অবশ্যই চাই কিন্তু সেতুটি যাতে নতুন করে জনদুর্ভোগ তৈরি না করে সেদিকে খেয়াল রেখে কাজ করতে হবে। যাতে দুই পাড়েন মানুষই উপকৃত হন। আইভী (সাবেক মেয়র) এই সেতুটি যখন করতে চেয়েছিলেন তখন শামীম ওসমান এটাকে আটকাতে দপ্তরগুলোতেও গিয়েছিল।”
তিনি আরও বলেন, “নারায়ণগঞ্জের সংকট আমাদের পীড়িত করে বলেই বিভিন্ন সময় আমরা এসব নিয়ে কাজ করেছি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা সফল হয়েছি। সম্মিলিত প্রচেষ্টাই এই সফলতা এনে দিয়েছে। আমরা চাই সেতুর কাজও যাতে বিঘ্নিত না হয় এবং একইসাথে এইটা বাস্তাবায়ন হলে কোনো দুর্ভোগও যাতে সৃষ্টি না হয়।”
সভায় অন্য বক্তারাও সেতুটির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, “এটি শহর ও বন্দরের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন। সেতু মানুষের কাজে আসবে বলেই পরিকল্পনা করা হয়। পুরো সেতুটি নিয়ে কোনো আপত্তি নেই, কেবল পশ্চিমপাড়ের র্যামটি নিয়ে আপত্তি। পূর্বপাড়ে সেতুর কাজ চলমান রেখেই নকশায় কিছুটা পরিবর্তন আনা যায়।”
এ সেতুটির জন্য আগেও একটি নকশা করা হয়েছিল, প্রয়োজনে পুরোনো নকশাটিকেও আমলে নেওয়া যেতে পারে বলেও মত দেন অনেকে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিক, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম, নারায়ণগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল হক রুমন রেজা, ইসলামী আন্দোলনের মহানগর শাখার সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন, ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক শওকত আলী ও আহমেদুর রহমান তনু, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের সভাপতি নূরউদ্দিন আহমেদ, নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক দিপু, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মনি সুপান্থ, সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর রায়, জিয়াউল ইসলাম কাজল ও প্রদীপ ঘোষ বাবু, সাবেক কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস, মহিলা পরিষদের জেলা সভাপতি রিনা আহমেদ, কালিরবাজারের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন নাগরিক আন্দোলনের নেতা ধীমান সাহা জুয়েল।
কদমরসুল সেতু সদর ও বন্দর উপজেলাকে সংযুক্ত করার কথা থাকলেও শীতলক্ষ্যার দুই পাড়ের মানুষের নিত্যদিনের যাতায়াতে এখনও কোনো সুফল আসেনি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
২০১৬ সালে সিটি নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিশ্রুতি দেন তৎকালীন মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। ২০১৭ সালে সিটি করপোরেশন সেতুর পরিকল্পনা নেয় এবং কদমরসুল দরগাহের নামে নামকরণের সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৮ সালের অক্টোবরে একনেক সভায় প্রকল্পটি ৫৯০ কোটি টাকায় অনুমোদন পায় এবং ২০২২ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য ধরা হয়। তবে রেলওয়ে, বিআইডব্লিউটিএ, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের জমি-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে কাজ আটকে যায়।
দীর্ঘ ছয় বছর স্থবির থাকার পর ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৭৩৫ কোটি টাকা, নকশায়ও পরিবর্তন আনা হয়। অবশেষে জটিলতা কাটিয়ে দরপত্র শেষে গত জুলাই মাসে পূর্বপাড়ে প্রকল্পক্ষেত্র প্রস্তুতের কাজ শুরু করে বাস্তবায়নকারী সংস্থা এলজিইডি।