১৫ অক্টোবর ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২০:০৫, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

৬৮-এ পা দিলেন রফিউর রাব্বি

৬৮-এ পা দিলেন রফিউর রাব্বি

নারায়ণগঞ্জে নাগরিক আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বির আজ জন্মদিন। ১৯৫৮ সালের ১৪ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ শহরের আমলাপাড়ায় তার জন্ম। ৬৮ বছর বয়সী রফিউর রাব্বি বিগত বছরগুলোতে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, ভূমিদস্যু ও দখলদারের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে আজীবন লড়াকু এ ব্যক্তি তার আপোসহীন চরিত্রের কারণে সারাদেশের মানুষের কাছে পরিচিত।

রফিউর রাব্বির বাবা প্রয়াত ডা. শাহাদাত হোসেন ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। তার মায়ের নাম আনোয়ারা হোসেন। নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুলে মাধ্যমিক শেষ করে তিনি ভর্তি হন সরকারি তোলারাম কলেজে। পরে তিনি চারুকলা ইনস্টিটিউট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। এছাড়া, কিউবার ইস্কুয়েলা সুপিরিয়র নিকোয়েলাপেজ হাভানাতেও পড়াশোনা করেছেন।

কিশোর বয়স থেকেই শিল্প-সাহিত্য-লেখালেখির সাথে যুক্ত ছিলেন। ৭০ দশকে প্রথমে বামপন্থী ছাত্র রাজনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হন রফিউর রাব্বি। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও তিনি রাজনীতি নিরপেক্ষ নন। সমাজের ক্রিয়াশীল অনিবার্য দ্বান্দ্বিক পরিবর্তনের প্রতি বরাবরই তিনি আস্থাশীল।

তবে এ পরিচয়ের বাইরেও তার আরো অনেক পরিচয় আছে। রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত না থেকেও জন্মস্থান নারায়ণগঞ্জকে ঘিরেই রয়েছে তার অদম্য আকাক্সক্ষা। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন একটি বাসযোগ্য সন্ত্রাসমুক্ত নিরাপদ নারায়ণগঞ্জ গড়তে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধেও সোচ্চার কণ্ঠ ছিলেন রাব্বি। এজন্য তাকে নানা হামলা-মামলারও সম্মুখীন হতে হয়েছে। হারিয়েছেন নিজের বড় ছেলে মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীকে।

২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে নগরবাসীর স্বার্থে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ‘গডফাদার’ খ্যাত শামীম ওসমানের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে কাজ করেন রফিউর রাব্বি। ওই বছরই নারায়ণগঞ্জে পরিবহন মাফিয়াদের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলনেরও নেতা ছিলেন। ওই সময় পরিবহন সিন্ডিকেট ছিল শামীম ওসমান ও তার পরিবারের সদস্যদের দখলে। এরই জেরে ২০১৩ সালের ৬ মার্চ বাসার অদূরে বঙ্গবন্ধু সড়ক থেকে অপহরণের পর হত্যা করা হয় রফিউর রাব্বির ছেলে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীকে। দুইদিন পর তার মরদেহ মেলে শীতলক্ষ্যা নদীর শাখা কুমুদিনী খালে।

ত্বকী হত্যার জন্য রফিউর রাব্বি ও তার পরিবারের সদস্যরা শামীম ওসমান ও তার পরিবারের সদস্যদের অভিযুক্ত করেন। এক যুগ পেরিয়ে গেলেও এই মামলার কোনো বিচার এখনও হয়নি। তবে বিগত কয়েক বছরে এই মামলার সঙ্গে জড়িত ওসমান পরিবার ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছেন।

সন্তানকে হারিয়েও দমে যাননি রফিউর রাব্বি। দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে ঐক্য গড়ে তুলতে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ গড়ে তোলেন তিনি। এছাড়া, তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি, যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটি, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক আন্দোলনসহ অসংখ্য সামাজিক সংগঠনের সংগঠক তিনি।

প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর রফিউর রাব্বির জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, নাগরিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণের ব্যক্তিবর্গ। ফেসবুক একাউন্টে ছোটছেলে রাকিব মুহাম্মদ সাকির বানানো নিজের একটি ছবি শেয়ার করে রাব্বি লিখেছেন, ৬৮’র যাত্রী।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়