বড় শোডাউনে মাঠের শক্তি জানান দেবে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নারায়ণগঞ্জে প্রথমবারের মতো বড় জনসমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি। এ সমাবেশকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ করা গেছে। সমাবেশ সফল করার জন্য তারা ব্যাপক প্রস্তুতিও নিয়েছেন। এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে মূলত নিজেদের শক্তির প্রদর্শন করবে বিএনপি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদও জানিয়েছেন এ সমাবেশে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হবে আশাবাদ তার। এতে দলীয় নেতা-কর্মীদের বাইরেও জনসাধারণেরও উপস্থিতি ঘটবে বলে জানান এ নেতা।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আয়োজনে মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দুইটার দিকে এই জনসমাবেশ শুরু হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধের দাবি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা ও ফ্যাসিবাদ মোকাবিলার দাবিতে দেশব্যাপী বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
শহরের মিশনপাড়া এলাকায় নবাব সলিমুল্লাহ সড়কের উপর ইতোমধ্যে অস্থায়ী মঞ্চও প্রস্তুত করা হয়েছে। সন্ধ্যায় সমাবেশস্থল পরিদর্শনও করেছেন জেলা বিএনপির নেতারা।
দলটির নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনকালে নারায়ণগঞ্জে সভা, সমাবেশ করার তেমন সুযোগ পায়নি বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। যেকোনো কর্মসূচী পালনে নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছেন তারা। কখনো প্রশাসনিক তো কখনো আবার আওয়ামী দলীয় নেতা-কর্মীদের। যার ফলে বিএনপি কর্মসূচি পালন করতে পারলেও তা করতে হয়েছে স্বল্প পরিসরে। তবু মূল শহরে বড় ধরনের আয়োজন করতে পারেননি তারা। এমনকি প্রধান সড়কে প্রতিবা কর্মসূচিতেও বাধা পেয়েছেন তারা। বাধ্য হয়ে কখনো প্রেসক্লাবের পিছনে আবার কখনো ভাষা সৈনিক সড়কে কর্মসূচি পালন করেছেন।
বিগত সময়ে এমনও লক্ষ্য করা গেছে, কর্মসূচির মাঝেই পালাতে হয়েছে নেতা-কর্মীদের। পুলিশের বাধা, ধাওয়া, লাঠিচার্জের মুখোমুখিও হয়েছেন তারা। নারায়ণগঞ্জে বিএনপির কর্মসূচিতে গুলি চালানো এবং হতাহতের ঘটনাও দেখা গেছে। তবে জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বিএনপির এ পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর কোনো বাধা ছাড়াই ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আওয়ামী শেখ হাসিনা সরকার পতন ও নতুন কমিটি গঠনের পর এ প্রথম একটি বড় জনসমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির নেতারা। আর তাই এ সমাবেশকে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করবেন দলটির নেতারা। নতুন কমিটিও সমাবেশ সফল করার মধ্য দিয়ে কেন্দ্রে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে চায়। তাই সমাবেশকে কেন্দ্র করে দলটির সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দিপনা ও প্রস্তুতি দেখা গেছে।
সমাবেশ সফল করার জন্য গত ১৯ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) জেলা বিএনপির সকল অঙ্গসংগঠনর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের অংশগ্রহণে সিদ্ধিরগঞ্জের নয়াআটি মুক্তিনগর মতবিনিময় সভা করেছে জেলা আহ্বায়ক কমিটি। এছাড়া প্রত্যেক উপজেলা, থানা পর্যায়েও প্রস্তুতি সভা করতে দেখা গেছে।
এদিকে সমাবেশ সুশৃঙ্খল রাখার জন্য সকল ইউনিটের নেতাকর্মীকে বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছে জেলা কমিটি। নির্দেশনাগুলো হলো, সমাবেশ শুরুর পূর্বেই সমাবেশ স্থলে প্রবেশ ও শেষ পর্যন্ত অবস্থান করা, ব্যক্তিগত ছবি যুক্ত ব্যানার ফেস্টুন বা প্ল্যাকার্ড বহন না করা, ব্যক্তিগত শ্লোগান দেওয়া যাবে না, অতিথি ব্যতিত মঞ্চ ও মঞ্চের নিরাপত্তা বলয়ের প্রবেশ , নারী সহকর্মী এবং অতিথিদেরকে আসন গ্রহনে সহায়তা করা। শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকদেরকে আন্তরিক আচরণ করার অনুরোধ করা হয়েছে।
প্রস্তুতি বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, ‘এ জনসভাকে সাধারণ জনসভা হিসেবে মানুষ দেখছে না। গত ১৫ বছর নারায়ণগঞ্জে আমরা সমাবেশগুলো করেছি কিন্তু ভয়ে ভয়ে, সীমিত সময়ে জন্য। সমাবেশে নেতাকর্মীদের আসতে বাধা দেয়া হতো, পুলিশ এবং ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের বাধাগ্রস্থ করতো। আগামীকাল সমাবেশ হবে সম্পূর্ণ ভয়মুক্ত, স্বাধীন দেশে। জনসভাকে কেন্দ্র করে আমারা দেখছি নারায়ণগঞ্জে প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। এই জনসভাকে ঘীরে সকলে উৎসুক। আমাদের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ এ সমাবেশে অংশগ্রহণ করবে। মানুষ জানাতে চায় আগামীদিনে বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে কিভাবে দেশ পরিচালনা করবে। সেই বার্তা এখান থেকে তারা নিতে আসবে। জনসভায় প্রধান অতিথি থাকবেন মির্জা আব্বাস। ইনশাল্লাহ আগামীকালের জনসভা হবে নারায়ণগঞ্জে সর্বকালের বৃহৎ জনসভা। এর মধ্যে আমরা কোনো বড় জনসভা করি নাই। কারণ ৬ মাস হয়েছে ফ্যাসিবাদ সরকারের পতন হয়েছে। আগামীকাল যে জনসভা করবো সেটি হবে, বৃহৎ জনসভা। এর মধ্যে আমরা আর কোনো বড় জনসভা করিনি। জনসভাকে ঘীরে বিএনপি নেতাকর্মীরা উৎসুক হয়ে আছে।’
‘দীর্ঘদিন পর জনসভার আয়োজন করতে পেরে প্রাণ খুলে নিশ্বাস নিতে পারছেন’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর নারায়ণগঞ্জে আমরা এমন একটি জনসভা করছিল। মনে হচ্ছে, প্রাণ খুলে নিশ্বাস নিতে পারছি। কারণ গত ১৫ বছর আমরা নিশ্বাস নিতে পারি নাই। এখানে মুক্ত বাতাশ গ্রহণ করবে। নারায়ণগঞ্জ সন্ত্রাসমুক্ত হয়েছে এ মেসেজ যাবে। অন্যান্য জেলার মানুষ জানতো, নারায়ণগঞ্জ একটি সন্ত্রাসের জনপদ, গডফাদারের জনপদ। আগামীকালের জনসভা থেকে আমরা মেসেজ দিতে চাই সারাদেশে, নারায়ণগঞ্জ একটি শান্তির জনপদ। এ জনপদে আর কোনো গডফাদারের জন্ম হবে না। নেতাকর্মী ও আমাদের প্রমাণ করবো বিএনপির হাতে নারায়ণগঞ্জ সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়।’
‘এটি ঐতিহাসিক জনসভায় রূপ নিবে’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘লক্ষাধিক মানুষ এখানে আসবে আমরা ধারণা করছি। এখানে শুধু আমাদের নেতাকর্মীরাই আসবে না সাধারণ মানুষের মধ্যে আগ্রহ দেখছি। প্রচারণা মাইক যে এলাকায় গিয়েছে মানুষ এসেছে, জানতে চেয়েছে কে আসবে। তাদের মধ্যে যে আগ্রহ দেখা গেছে তাতে মনে হয়েছে, সাধারণ মানুষও আসবে।’
কিছুদিন আগে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় আমীরের উপস্থিতি নারায়ণগঞ্জে বিশাল সমাবেশ করেছে তারা। জাতীয় রাজনীতিতে জামায়াত বিএনপির বাক যুদ্ধের মধ্যে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির সমাবেশের দিকে তাকিয়ে আছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। একসময়ের বিএনপির অন্যতম ঘাঁটি নারায়ণগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ দিয়েই প্রমাণিত হবে বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় তাদের শক্তি কতটুকু।