০৭ অক্টোবর ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ:

প্রকাশিত: ২১:৪৫, ৬ অক্টোবর ২০২৫

আপডেট: ২১:৫৬, ৬ অক্টোবর ২০২৫

গাজী টায়ারসে আগুন: এখনও দপ্তরে দপ্তরে ঘুরছেন নিখোঁজদের স্বজনরা

গাজী টায়ারসে আগুন: এখনও দপ্তরে দপ্তরে ঘুরছেন নিখোঁজদের স্বজনরা

রূপগঞ্জের গাজী টায়ারস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিখোঁজ ১৮২ জনের মধ্যে রয়েছে রূপসীর সিনথিয়া শিকদারের দুই ভাই ও বোন জামাতার নামও। তাদের খোঁজে গত একবছর পুলিশ, প্রশাসন ও সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন তিনি।

সোমবার (৬ অক্টোবর) দুপুর ১টায় ফের নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আসেন প্রিয়জনের খোঁজের আশায়।

এ সময় সিনথিয়া শিকদার বলেন, “গত এক বছর ধরে আমরা দৌড়াদৌড়ি করছি। জেলা প্রশাসকের কাছে আসলে তিনি বলে সেনাবাহিনীর কাছে যেতে, সেখান থেকে বলে আবার জেলা প্রশাসকের কাছে আসতে। সর্বশেষ রূপগঞ্জ থানার ওসি আমাদের থেকে দুই মাসের সময় নেয় যে, নিখোঁজদের তথ্য দিবেন তিনি। দুইমাস পেরিয়ে গেলে ওসি বলেন যে, আমরা সব তথ্য ডিসি অফিসে দিয়েছি আপনারা ওখানে যোগাযোগ করেন এবং যা করার ডিসি স্যার করবে। তাই আজ আসছি।”

সিনথিয়া শিকদারের মতো গাজী টায়ারসের ঘটনায় নিখোঁজ অনেকের স্বজন এসেছেন জেলা প্রশাসকের কাছে। তাদের মধ্যে একজন গুলজার খাঁ। তার বড় ভাই আলামিন এখনো নিখোঁজ। গুলজার খাঁ অভিযোগ করে বলেন, “আমরা ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর কাছে গেছি। তারা বলছে, যাদের উদ্ধার করা হইছে তাদের পুলিশের কাছে দিয়ে দিসে। আপনারা থানায় যোগাযোগ করেন। কিন্তু আমরা তো আমাদের লোক পাইতাসি না। আমাদের লোকগুলো যদি জেলে দিয়ে দিত, আমরা ভাবতাম ৫ বছর পরে হলেও জীবিত আমাদের কাছে আসবে। কিন্তু কেউ তো আমাদের লোকের খোঁজ দিতাসে না। আমরা কই যামু!”

নিখোঁজদের স্বজনরা দুপুর থেকে অপেক্ষা করলেও জেলা প্রশাসকের সাথে তাদের সাক্ষাৎ হচ্ছিল না। এক পর্যায়ে তাদের জেলা পুলিশ সুপারের কাছে পাঠানো হলেও তারা ফের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে অপেক্ষা করতে থাকেন। এরই মধ্যে অনেকে হতাশ হয়ে ফিরে যান। টানা সাড়ে ৪ ঘণ্টা অপেক্ষার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় জেলা প্রশাসকের সাথে সাক্ষাৎ করেন তারা। এ সময় জেলা প্রশাসকের কাছে তাদের নিখোঁজ প্রিয়জনদের সন্ধানের আকুতি জানান।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, “গাজী টায়ারসের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অনেকেই নিখোঁজ রয়েছে। এ ঘটনায় একটি তদন্ত হয়েছে, প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এরপরও নিখোঁজদের পরিবারগুলো আমাদের কাছে এসেছিল। তখন আমি পুলিশ বাহিনীর সাথে কথা বলি, তাদের দাবি বিষয়ে আমাদের করণীয় নিয়ে। পুলিশ বাহিনী এ বিষয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করছে।”

তিনি আরও বলেন, “তদন্তের পরে এ বিষয়ে আমাদের কোনো কার্যক্রম নেই। নিখোঁজের স্বজনরা লিখিত দিয়েছিল, তার প্রেক্ষিতে নিখোঁজদের খোঁজার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ বিভাগকে চিঠি দিয়েছিলাম। তাদের খোঁজার আরও সুযোগ থাকলে সেগুলো যেন তারা দেখে। এর বাইরে আমাদের কাছে কোনো আপডেট নাই।”

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ২৫ অগাস্ট ভোরে ঢাকায় গ্রেপ্তার হন তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী। ওইদিন দুপুরে রূপগঞ্জের রূপসীতে গাজী টায়ারস কারখানায় লুটপাট চালায় দুর্বৃত্তরা। ব্যাপক লুটপাটের মধ্যে রাতে কারখানায় আগুন দেওয়া হয়। ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যায় একটি ছয়তলা ভবন। টানা পাঁচ দিন চেষ্টার পর ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা সেই আগুন নেভাতে সক্ষম হয়।

সেই রাতে যারা ওই কারখানায় গিয়েছিলেন, তাদের অনেকে নিখোঁজ হন। পরদিন সকাল থেকেই নিখোঁজদের স্বজনরা কারখানার ফটকে জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে প্রশাসন স্বজনদের কাছ থেকে নিখোঁজদের ছবি ও তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র রেখে নাম নিবন্ধন শুরু করে।

ওই ঘটনায় অন্তত ১৮২ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছিল জেলা প্রশাসন। যা পরে তাদের তদন্ত প্রতিবেদনেও উঠে আসে। পরে প্রশাসনের এক শুনানিতে ক্ষুব্ধ স্বজনরা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে ঢুকে পড়ে এবং হতাহতদের মাথার খুলি, হাড়গোড় উদ্ধার করেন।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়