সিদ্ধিরগঞ্জে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে পিটিয়ে হত্যা

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে একটি রেডিমিক্স সিমেন্ট কারখানার গাড়িতে ঢিল মারায় এক যুবককে আটকে রেখে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে আদমজী এলাকায় ক্রাউন সিমেন্টের রেডিমিক্স কংক্রিট কারখানার ভেতরেই তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহত যুবকের নাম সাজ্জাদ হোসেন। ৩০ বছর বয়সী যুবক আদমজীর নয়াপাড়া এলাকার মুরগি বিক্রেতা কামাল হোসেনের ছেলে।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাসিনুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, “রাত আনুমানিক সাড়ে তিনটার দিকে ক্রাউন সিমেন্টের একটি গাড়িতে ঢিল মারে। এতে গাড়ির গ্লাস ভেঙে গেলে ড্রাইভার, হেলপার, রাতের শিফটের কারখানায় কর্মরত লোকজন ধরে কারখানার ভেতর নিয়ে আসে এবং রাতে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। নির্যাতনের এক পর্যায়ে সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে সে মারা যায়।”
সিমেন্ট কারখানার লোকজনই সকালে সাজ্জাদকে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
এদিকে সাজ্জাদ “মানসিক ভারসাম্যহীন” জানিয়ে তার মামা আল আমিন হোসেন বলেন, সে প্রায় সময় রাতের বেলা রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়।
“আমাদের এলাকাতেই ফ্যাক্টরি। দশ মিনিটের হাঁটা পথ। সাজ্জাদ তো পাগলের মতো, এলাকার সবাই জানে। রাতে ঈদগাহের সামনের রাস্তায় ক্রাউন সিমেন্টের গাড়িতে ঢিল দিছিলো। এই কারণে ওরে ধইরা কারখানার ভেতরে নিয়া রাতভর পিটাইয়া মারছে।”
চার ভাই বোনের মধ্যে বড় সাজ্জাদ নবম শ্রেণির পর পড়াশোনা ছেড়ে দেন। তার বাবা কামাল এলাকায় এলাকায় ঘুরে ঘুরে মুরগি বিক্রি করেন। পরিবারের বড় সন্তানকে হারিয়ে শোকাহত সাজ্জাদের বাবা-মা।
তার চা দোকানি মামা আল আমিন বলেন, “ওরে নাকি ছিনতাইকারী বইলা কারখানার ভেতরে নিয়ে পিটাইছে। কিন্তু এলাকার সবাই জানে যে, ও পাগল কিসিমের মানুষ। ওরে ঘরে বাইন্ধাও রাখা যায় না, নিজের মনে ঘুইরা বেড়ায়। সেই পোলাডারে মাইরা ফেললো!”
মরদেহ উদ্ধারের আগ পর্যন্ত সাজ্জাদের ঢিল মারা, তাকে ধরে কারখানায় নিয়ে মারধরের কথা জানতেন না পরিবারের লোকজন। সকাল নয়টার দিকে সাজ্জাদের এক বন্ধুর কাছে জানতে পারেন— ক্রাউন সিমেন্ট কারখানার ভেতরে সাজ্জাদকে পিটিয়ে মারা হয়েছে।
আল আমিন বলেন, “আমি গিয়া লাশ পাই নাই। আগেই হাসপাতালে নিয়ে গেছে শুনি। ওরে রাতে যখন ধইরা নেয় তখন এক সিএনজি ড্রাইভার নিষেধ করছিল যে, ও পাগল, ওরে নিয়া কী করবা? কিন্তু কেউ শোনে নাই।”
“আমাগো বাড়ি তো পাশেই, ঢিল মারছে, আমাগোরে জানাইলেও হইতো”, বেদনার সুরে বলেন সাজ্জাদের মামা।
এদিকে, মরদেহ উদ্ধারের পর দুপুরে কারখানাটির অন্তত ১০ জন কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। ওই সময় সেখানে এলাকাবাসী উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং আটকদের উপর চড়াও হন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসিনুজ্জামান বলেন, “ছিনতাইয়ের কোনো বিষয় আমরা পাইনি। এটি একটি হত্যাকাণ্ড, আমরা সেভাবেই তদন্ত করছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত হিসেবে সন্ধিগ্ধ সিমেন্ট কারখানার গাড়ি চালক, তার সহযোগী, নিরাপত্তাকর্মীসহ ১০ জনকে আটক করেছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ভিক্টিম পরিবার মামলা করলে পরবর্তী আইনগত প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে।”
এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা হবে বলেও জানান তিনি।