গরিবের ঈদ আনন্দ ফুটপাতে

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: আয়শা আক্তার (১৯)। একজন গৃহকর্মী। ফতুল্লার চাঁদমারী নতুন কোর্টের পাশেই তার বাড়ি। স্বামী-স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ছোট্ট একটি পরিবার। স্বামী ইলিয়াস রিকশাচালক, তবে তালের মৌসুম থাকায় এখন তালের ব্যবসা করছেন। বড় ছেলে এবার পাশের একটি স্কুলে শিশু শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। আয়েশা দুটি বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে মাসে প্রায় ৩ হাজার টাকা উপার্জন করেন। ঈদ উপলক্ষে কিছু টাকা বোনাসও পেয়েছেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনের সম্মিলিত আয়ের একটি বড় অংশ নিয়ে ছেলে ফরিদ ও মেয়ে রেবেকাকে নিয়ে চাষাঢ়া এসেছেন ঈদের কেনাকাটা করতে। বিবি রোডের হকারদের থেকে বেছে, দর কষাকষি করে কিনে নিচ্ছেন ছেলে-মেয়ের কাঙ্খিত ঈদ পোশাক। ৪ বছরের ছোট্ট রেবেকার পোশাকের সঙ্গে চাই পুতির মালা আর ছেলের বায়না ঘড়ি, চশমা। মা আয়েশা সান্তনা দেবার চেষ্টা করলেও তাতে মানতে রাজি নয় ছোট্ট শিশু দুটি।
আয়শা প্রেস নারায়ণগঞ্জকে জানান, পরের বাসায় কাজ করে আর স্বামীর অল্প উপার্জনে খুব কষ্টে ঘর চলে। নিজে না খেয়ে অন্যের বাড়ি থেকে নিয়ে আসা খাবার ছেলে-মেয়েকে খাওয়াই। বোনাস পাইছি মাত্র এক হাজার টাকা। এই দিয়ে কোনো মতে ছেলেমেয়ের জন্য কেনাকাটা করছি। মার্কেটের দোকানগুলোতে অনেক দাম, এতো দাম দিয়া জামা কেনা সম্ভব না। যদিও ইচ্ছা জাগে বড় বড় মার্কেটে যাই। কিন্তু সাহস পাই না। তাই হকার মার্কেটেই আমাদের কেনাকাটা। হকার মার্কেটগুলা আছে বইলা আমরা কেনাকাটা করতে পারতাসি। মেয়ের জন্য একটি পুতির মালাও কিনবো, ছেলের চশমা কেনার টাকা হলেও হবে না ঘড়ি কেনার টাকাও লাগবে।
সাবরিনা রহমান একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। জামান টাওয়ারের সামনের ফুটপাতে বাসা এক হকার থেকে জামা কিনছেন। হকার মার্কেট থেকে কেন কেনাকাটা করছেন জানতে চাইলে সাব্রিনা রহমান বলেন, শো-রুম থেকে কিনতে গেছে এই একি পণ্য অধিক দাম নেবে। এতো দাম দিয়ে কেনার থেকে হকার মার্কেট থেকে কেনাকাটা করা অনেক ভালো। তবে এবছর হকার মার্কেটেও অনেক দাম রাখছে।
ক্রেতা সমাগম দেখে খুশী হকাররা। বিক্রিও অনেক ভালো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। তবে অধিক দামের অভিযোগে হকারা দোষ দিচ্ছেন মেয়র সেলিনা হায়াত আইভিকে। তারা বলছেন, মেয়র আপা আমাদের ফুটপাতে বসতে দিচ্ছে না। ১০ মিনিট পর পর পুলিশের ভয়ে দৌড়ে পালাচ্ছি। ১০ মিনিটে আর কতো বিক্রি করতে পাড়ি। এই ১০ মিনিটে যার থেকে যত বিক্রি করা যায় আর কি।
আয়শা ও সাবরিনার মতো এমন হাজারো নিন্ম আয়ের মানুষের ভরসা ফুটপাত। এখান থেকেই রং বেরংয়ের জাম-কাপড়, জুতা , চুড়িসহ নানা ঈদ বস্ত্র কিনছেন। সাধ থাকলেও সাধ্য নেই। তাই সামান্য আয়ের টাকায় ঘুরে ঘুরে কিনছেন প্রিয়জনের মুখে হাসি ফুটাতে। মোটকথা খেটে খাওয়া গরিব, শ্রমজীবী, মধ্যবিত্ত মানুষের ঈদ কেনাকাটা মানেই হকার্স মার্কেট। সল্প আয়ের মধ্যে পরিবারের সবার চাহিদা মতো পোশাক কিনতে তাদের একমাস ভরসা এই হকার মার্কেট। তাই প্রতিবছর হকার মার্কেটগুলোতে ভিড় জমার বিভিন্ন পেশার শ্রমজীবী মানুষ।
প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম