ফুটবল ইতিহাসে উজ্জ্বল এক তারকার নাম মুন্না

প্রেস নারায়ণগঞ্জ ডটকম: মোনেম মুন্না, বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে উজ্জ্বল এক তারকার নাম। ১৯৬৮ সালের ৯ জুন নারায়ণগঞ্জে তার জন্ম। ছোটবেলা থেকে ফুটবলের প্রতি ছিল তার ভীষণঝোঁক। খেলতেনও বেশ ভাল। পরিশ্রমী এবং আত্মপ্রত্যয়ী ফুটবলার হিসেবে ছিলেন অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে। নিজের প্রতি তার এতটাই বিশ্বাস ছিল যে, তাকেড্রিবল করে স্ট্রাইকার পার হতে পারবে না। তার শক্তিশালী ট্যাকলের স্বাদ পায়নি, এমন সাবেক ফরোয়ার্ড পাওয়া খুবই দুষ্কর। এই উপমহাদেশের জনপ্রিয় ফুটবলআইকনে পরিণত হয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের সন্তান। ক্রীড়ামোদীরা তাই ভালবেসে তাকে ‘কিং ব্যাক’ হিসেবে সম্মানিত করেছিল।
মুন্না প্রথম নজর কাড়েন বাংলাদেশের জাতীয় দলের বিরুদ্ধে এক প্রীতি ম্যাচে অংশ নিয়ে। নারায়ণগঞ্জের জেলা দলের হয়ে মুন্না নজরকাড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন।তার খেলা দেখে জাতীয় দলের সিনিয়র ফুটবলাররা মুগ্ধ হয়ে যান। সেসময় মুন্নার বয়স ছিল মাত্র ১৪।
১৯৮০-৮১ সালে পায়োনিয়ার ডিভিশনে গুলশান ক্লাবের হয়ে নাম লেখান, আর এর মধ্য দিয়ে প্রতিযোগিতামূল ফুটবলে মুন্নার অভিষেক ঘটে। পরের বছর যোগদেন দ্বিতীয় বিভাগের দল শান্তিনগর। ১৯৮৩ সালে দ্বিতীয় বিভাগের দল মুক্তিযোদ্ধাতে যোগ দেন। ঐ বছর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দ্বিতীয় বিভাগ চ্যাম্পিয়নহয়ে প্রথম বিভাগে উঠে আসে। ১৯৮৬ সালে এক মৌসুমের জন্য যোগ দেন ব্রাদার্স ইউনিয়নে। সে সময়ে ব্রাদার্সের হয়ে তার দুরন্ত পারফরম্যান্সের জন্য নজরেপড়েন আবাহনীর কর্মকর্তাদের। ফলে ১৯৮৭ সালে যোগ দেন ঢাকার ফুটবল ক্লাবের অন্যতম এক পরাশক্তি আবাহনী ক্রীড়া চক্রে।
সত্তর ও আশির দশককে বাংলাদেশের ফুটবলের ইতিহাসে স্বর্ণযুগ বলা চলে। সেসময়ের বাংলাদেশ ফুটবল লীগের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দল আবাহনী ও মোহামেডানের দ্বৈরথদেখার জন্য ৯০ মিনিটের সারা বাংলাদেশ তখন থমকে যেতো। বাংলাদেশের মানুষ আবাহনী ও মোহামেডান এই দুই দলে বিভক্ত হয়ে পড়তো।
এই দুটি দলের জন্য দেশের মানুষ এতটাই আবেগতাড়িত হয়ে পড়তো যে, পছন্দের দল না জিতলে বিপক্ষ দলের সমর্কদের সাথে হাতাহাতি থেকে শুরু করেঅনেক সময় রীতিমতো ভয়ঙ্কর ধরনের সংঘাতে রূপ নিতো।
আবাহনীর হয়ে বাংলাদেশের ফুটবল লীগে দাপটের সাথে খেলতে খেলতে মুন্না নাম লেখান ভারতের অন্যতম খ্যাতিমান ফুটবল ক্লাব ইস্টবেঙ্গলে । ১৯৯১ ও১৯৯৩ এই দুই মৌসুম এই দলের হয়ে খেলেছেন। এই সময়ে দলকে লীগ শিরোপা ও ফেডারেশন কাপ জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন মুন্না। সক্ষম হন ইস্টবেঙ্গল সমর্থক এবং ফুটবলপ্রিয় বাঙালিদের মন জয় করে নিতে। তাই ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের ‘হল অব ফেম’-এ মোনেম মুন্নাকে জায়গা দিতে দুবার চিন্তা করতেহয়নি ক্লাবটিকে।
মোনেম মুন্নার খেলা দেখে একসময়ের বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের জার্মান কোচ অটো ফিস্টার বলেছিলেন “He was mistakenly born in Bangladesh”। বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে সেরা ডিফেন্ডারদের একজন বলে গণ্য করা হয় তাকে। তার হাত ধরে ফুটবলের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশপেয়েছিল একাধিক সাফল্য।
১৯৯৯ সালে তিনি কিডনী রোগে আক্রান্ত হন। ২০০০ সালে কিডনী প্রতিস্থাপনের পর কিছুদিন বেঁচে ছিলেন। ২০০৫ সালের ২৬ জানুয়ারি গুরুতর অসুস্থ হয়েঢাকার একটি হাসপাতালে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
নারায়ণগঞ্জের এই ফুটবলারের কীর্তি এই দেশবাসী ও পুরো উপমহাদেশের নিকট আজীবন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। বর্তমানে বাংলাদেশের ফুটবলের বেহাল দশা উত্তরনে মোনেম মুন্নার মত খেলোয়ার তরুনদের জন্য অনুকরণীয়।
প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম