০২ জুন ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৩:০১, ৩১ মে ২০২৫

আপডেট: ২৩:১৭, ৩১ মে ২০২৫

জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকীতে ৩০ হাজার মানুষের গণভোজ

জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকীতে ৩০ হাজার মানুষের গণভোজ

মধ্যবয়সী নুরুল আমিন। পেশায় ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক নুরুল সাধারণ দুপুরের খাবার সড়কের পাশের কোনো সস্তা খাবার হোটেলে সারেন। তবে শনিবার (৩১ মে) দিনটি ছিল ব্যতিক্রম। এদিন তার মধ্যাহ্নভোজে ছিল চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবান।

বিশাল মাঠজুড়ে শামিয়ানার ভেতর থেকে বেরিয়ে এক তৃপ্তির ঢেকুর তুলে নুরুল বলেন, “আমরা নদীভাঙা মানুষ গো ভাই। রিকশা চালাই, জীবন চলে। আয়োজন কইরা খাওন অয় না। নিজেরে আইজকা সাব সাব মনে হইলো।”

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি মাঠে গণভোজের আয়োজন করা হয়। রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির এ আয়োজনে ৩০ হাজার মানুষের মধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থা রাখা হয়।

জমিদারবাড়ির সুবিশাল মাঠে শামিয়ানার ভেতরে একের পর এক বৈঠক চলে। প্রতি বৈঠকে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানের স্বাদ নিয়েছেন নুরুলের মতো কয়েকশ’ মানুষ।

স্থানীয়রা বলছেন, রূপগঞ্জের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ গণভোজের আয়োজন ছিল এটি। বিগত কয়েক বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে রাজনৈতিক বাস্তবতার কারণে ঘরোয়া আয়োজনের মধ্য দিয়েই শেষ হতো জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী।
বরং এসব দিবসে বিএনপির নেতারা থাকতেন ‘দৌড়ের উপর’ বলছিলেন স্থানীয় এক চা বিক্রেতা।

খাবারের পদে তিন ধরনের মাংসের পাশাপাশি চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সবজি ও ডাল ছিল জানিয়ে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন বলেন, “৩০ হাজার লোকের গণভোজের আয়োজন আমরা করেছি। ঐতিহ্যবাহী মেজবানের জন্য আমরা চট্টগ্রাম থেকে ৪৫ জন রাধুনি নিয়ে এসেছিলাম। গতরাত থেকে তারা খাবার রান্না করেছেন। ৫ শতাধিক বিএনপির নেতা-কর্মী ভলেন্টিয়ার হিসেবে খাবার পরিবেশনে ছিলেন।”

শুধু ভোজের আয়োজনই নয়, বৃষ্টির বাধায় একদিন পিছিয়ে করা এই আয়োজনে হাজারো কোরআনে হাফেজকে নিয়ে করা হয় একশ’ কোরআন খতম। এছাড়াও চিত্রাঙ্কন, কুইজ, রচনা, আবৃত্তি, কুরআন তিলাওয়াত প্রতিযোগিতা ও বইমেলার আয়োজন ছিল শুক্রবার।

শনিবার এসব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু। উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকনও।

এ সময় রূপগঞ্জ উপজেলার কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনাও প্রদান করা হয়।

মাঠের এক পাশে ছিল ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প। সঙ্গে অ্যাম্বলেন্স সুবিধাও। এই ক্যাম্পে কয়েকশ’ শিশু, নারী ও পুরুষ বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা পরামর্শ নেওয়ার পাশাপাশি বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষাও করিয়েছেন অনেকে।

শিশুকন্যার চর্মরোগের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে আসেন আয়েশা আক্তার। মুড়াপাড়া গ্রামেই বাড়ি তার। তিনি বলেন, স্বল্প আয়ের সংসারে কন্যাকে ভালো চিকিৎসক দেখানোর সুযোগ হয় না। বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পাবেন জেনে কন্যাকে নিয়ে এসেছেন তিনি।

বিনামূল্যে রক্তদান কার্যক্রমের মাধ্যমে ৬ বছর বয়সী এক থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুকেও রক্তের যোগান দেওয়া হয় এই মেডিকেল ক্যাম্প থেকে।

দলীয় প্রধানের শাহাদাতবার্ষিকীর এ আয়োজনে তরুণদের প্রতি বিশেষ নজর ছিল বিএনপির। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া এবং পড়াশোনা শেষ করে চাকরি প্রত্যাশী তরুণদের জন্য ছিল ‘জব ফেয়ার’। এতে দেশের প্রতিষ্ঠিত অন্তত ছয়টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তাদের কাছে অনেকেই চাকরি-বিষয়ক পরামর্শ নেন। চাকরির প্রত্যাশায় জমা দেন জীবনবৃত্তান্তও।

বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান আরএফএল’র সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) সাকিব হোসেন বলেন, “অনেক তরুণ- যারা পড়াশোনা সবে শেষ করেছেন কিংবা পড়াশোনা করছেন- এসে কথা বলেছেন। সিভি জমা দিয়েছেন, কেউ কেউ নম্বর নিয়ে গেছেন। আমরাও স্কিলফুল তরুণদের খুঁজছি। এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে একটা যোগসূত্র স্থাপন করা হয়েছে। যারা সিভি জমা দিয়েছেন তাদের ব্যাপারে আলোচনা করে আমাদের ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী মিলে গেলে পরবর্তীতে কন্ট্যাক্ট করা হবে।”

‘জব ফেয়ার’র মতো এই আয়োজন আরও করা উচিত বলে মনে করেন মুড়াপাড়া বাসিন্দা আলিফ আহমেদ। সবেমাত্র এমবিএ শেষ করা এ তরুণ বলেন, “রাজনৈতিক কোনো প্রোগ্রামে এই রকম জব ফেয়ারের আয়োজন আমি কখনও দেখিনি। যারা অনার্স-মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে তাদের জন্য এইটা একটা ভালো সুযোগ। শিক্ষিত তরুণদের এই ধরনের ভালো পজিশনে যদি দেওয়া যায় তাহলে একদিকে বেকারত্ব কমবে এবং অন্যদিকে সমাজে মাদকের চাহিদাও কমে আসবে।”

আয়োজন নিয়ে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু বলেন, “বিগত ১৭ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার চেয়েছিল জিয়াউর রহমানের নামটি যেন ইতিহাস থেকে মুছে যায়। কিন্তু মানুষের মনে এই নামটি যে রয়ে গেছে তারই প্রমাণ আজকের এই দৃশ্য। হাজার হাজার মানুষ এইখানে এসেছে। আমরা একইসাথে জিয়াউর রহমানের নাম যেন তরুণ প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছায় সে চেষ্টাও করেছি।”

রূপগঞ্জের নব্বই শতাংশ মানুষ বিএনপি রাজনীতিতে যুক্ত বলে দাবি করে এ রাজনীতিক বলেন, “অথচ বিগত দেড় যুগ বিএনপির লোকজন ঘরে থাকতে পারেনি। কোনো আয়োজন করতে গেলেই ১৪৪ ধারা জারি হতো। মানুষ এই জাহেলিয়াত থেকে মুক্তি পেয়েছে।”

সর্বশেষ

জনপ্রিয়