ঝুট ব্যবসায়ীদের আহাজারিতে ভারী হচ্ছে চাঁদমারীর বাতাস (ভিডিওসহ)

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নগরীর জেলা পরিষদের পার্শ্ববর্তী চাঁদমারী বস্তির এক অংশে দীর্ঘদিন যাবত গার্মেন্টস থেকে আনা জুটের ব্যবসা করে আসছে জামালপুর থেকে আগত অর্ধ শতাধিক মানুষ। একটি পুকুরের উপর ঘর তুলে গুদাম করে ব্যবসা করে আসছেন তারা। যাদের জীবিকার প্রধান মাধ্যম এই গুদামগুলো। কিন্তু আগুনে পুড়ে গেছে সব।
সামনেই গ্রীষ্মকাল। তাই প্রতিটি ব্যবসায়ী গ্রীষ্মের পোশাক তৈরির জন্য ধার করে গার্মেন্টস থেকে কিনেছিলেন লাখ লাখ টাকার জুট। এ ঝুট থেকে কাপড় বেছে বিক্রি করবেন ছোট ছোট হোসিয়ারি কারখানাগুলোতে। প্রতি কেজি কাপড় বিক্রি হবে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। আশানুযায়ী বিক্রি হলে পরে ধার শোধ করার পর যা থাকবে তাতেই সংসারের আনুসাঙ্গিক খরচ চলবে। এ আশায় বুক বেধে ছিলেন গুদাম মালিকরা। কিন্তু কে জানতো লভ্যাংশ তো দূরে থাক হারাতে হবে পুঁজিটুকুও।
রবিবার (২০ জানুয়ারি) ভোর রাতে নগরীর চাদঁমারী বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। বস্তির যে অংশে আগুন লাগে সেখানে প্রায় ৭১টি গুদাম ঘর ছিল। প্রত্যেক গুদাম মালিক প্রায় দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকার কাচামাল মজুদ রেখেছিলেন গ্রীষ্মের জন্য। কিন্তু ছোট্ট একটি আগুনের ফুলকি থেকে সারা বস্তি ছড়িয়ে আগুন গ্রাস করে নিয়েছে সেই ক্ষুদ্র ব্যসসায়ীদের স্বপ্নগুলোকেও।
রবিবার দুপুরে বস্তির আগুনে পুড়ে যাওয়া স্থান দেখা যায়, আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে ছাই হয়ে গেছে পুরো বস্তি। চারিদিকে শুধু ছাই আর ছাই। পুড়ে যাওয়া ছাইয়ের স্তুপ থেকে অবশিষ্ট কাপড় খুঁজে খুঁজে বের করছেন অনেক গুদাম মালিক। কোমর পানিতে নেমে, পানির নিচ থেকে বের করছেন অবশিষ্টগুলো। কিন্তু অবশিষ্ট যে কিছুই নেই। তবুও পোড়া কাপড় কেটে কেটে ছোট ছোট খন্ড কাপড় বের করছেন তারা, হয়তো এখানে কিছু ভালো কাপড় থাকতে পারে সে আশায়।
পুকুরের মাঝে কোমর পানিতে দাঁড়িয়ে অবশিষ্ট তুলছেন শাহ্ জালাল। পুকুরের পাড়ে বসে আছে তার ৬ বছরের ছোট্ট ছেলে মাসুম। এবার ক্লাস ওয়ানে পড়ে সে। মাসুমকে প্রশ্ন করলে সে বলে, ‘রাতে আমার বাবার গুদাম আগুনে পুড়ে গেছে। আমার বাবা এখন পানির নিচ থেকে কি যেন তুলছে। আমি তার সঙ্গে যেতে চেয়ে ছিলাম। কিন্তু বাবা পুকুরে নামতে মানা করেছে তাই এখানে বসে আছি।’
পানি থেকে উঠে শাহ্ জালাল বলেন, ‘এখানে আমার একটি গুদাম ছিলো। অনেক কষ্টে গুদামটি করেছিলাম। গুদামে আমার প্রায় দেড় লাখ টাকার মাল ছিলো। কিন্তু আগুনে সব চলে গেল।’
তিনি আরো বলেন, ‘আগুনে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তেমন কিছু আর বাকি নাই। তারপরও পানিতে পড়ে যাওয়ায় কিছু কাপড় বেঁচে গেছে। এখন আমরা সেগুলোই খুঁজে বের করছি। এ কাপড়গুলো শুকিয়ে গাড়ি মোছার কাজে ব্যবহারের জন্য বিক্রি করা যাবে।’
শাহ জালালের মতো আরেকজন ব্যবসায়ী মমিনুল ইসলাম। ছাইয়ের স্তুপ থেকে অবশিষ্ট তুলছেন। কাপড়ের পোড়া অংশ কেটে ফেলে দিয়ে খন্ড খন্ড কাপড় বাছাই করে নিচ্ছেন। মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমার গুদামে প্রায় ৫ লাখ টাকার মালামাল ছিলো। গ্রীষ্মের জন্য কিনেছিলাম। পোড়া কাপড়গুলো থেকেই অবশিষ্ট বের করছি। এ টুকরো, টুকরো কাপড় গাড়ি মোছার কাজে ব্যবহারের জন্য ১০ থেকে ১২ টাকা কেজিতে বিক্রি করবো। স্বাভাবিকভাবে এ কাপড়গুলো কেজি প্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করা যেতো।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার মতো এমন অনেকেই ধার করে মালামাল গুদামে তুলে ছিলো। সাবার গুদামেই লাখ লাখ টাকার মাল ছিলো। ক্ষয়ক্ষতি হিসেব করলে ৭১ টি গুদাম মালিকের প্রায় ৩ কোটির টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম