খেলার মাঠ নেই ৫৫ স্কুলে !

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: কামশাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র রাহীদ। দিন-রাত বই-পুস্তকে মগ্ন থাকতে হয়। খেলার সময় বলতে বিকেলে কিছুটা সময় মেলে। কিন্তু এ সময়টাতেও সে খেলতে পারে না। স্কুলে খেলার মাঠ না থাকায় তাকে বাড়িতে বসেই অলস সময় কাটাতে হয়। বইয়ের ধকল সইতে সইতে এখন তার হাসফাস অবস্থা। অনেক সময়ই সে বিষন্নতায় ভুগে। শুধু রাহীদ নয়। রূপগঞ্জের ৫৫টি স্কুলে খেলার মাঠ না থাকায় ছাত্র-ছাত্রীরা খেলাধূলা ও চিত্তবিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিদ্যালয়গুলোতে ভবন থাকলেও টিফিন বিরতি কিংবা অন্য সময়েও ক্লাসে বসেই ছাত্র-ছাত্রীদের সময় কাটাতে হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলায় ১১৪টি স্কুলের মধ্যে ৫৫ টি স্কুলে খেলার মাঠ নেই। বাকীগুলোতে মাঠ থাকলেও খেলাধূলায় উৎসাহ দেওয়ার লোক নেই। বরং অনেক স্কুলের খেলার মাঠ প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের কামশাইর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে কোনো খেলার মাঠ নেই। দক্ষিণ পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে রয়েছে এক চিলতে ছোট পরিসরে জায়গা। ভুলতা ইউনিয়নের ভুলতা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে তিল ধারণের ঠাই নেই। কিন্তু খেলার মাঠ বলে কিছু নেই। এই অবস্থা রূপগঞ্জের ৫৫টি স্কুলে। আবার অনেক স্কুলে নামেমাত্র মাঠ থাকলেও বছরের ছয় মাস পানিতে ডুবে থাকে। এছাড়া উপজেলার বেশ কিছু স্কুলের খেলার মাঠ আশপাশের প্রভাবশালীরা দখলে নিয়েছে। নগরপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ স্থানীয়দের সহযোগীতায় গাজী নুর মোহাম্মদ নামে এক ব্যবসায়ী দখলে নিয়ে বাড়িঘর নির্মাণ করেছে। আশপাশের বাড়ির মালিকরাও কৌশলে মাঠ দখলে নিচ্ছে। শুধু তাই নয়। খেলার মাঠের উপর দিয়ে রাস্তা যাওয়ার ফলে সংকুচিত হয়ে আসছে খেলার মাঠ।
সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষক, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও এলাকার লোকজন জানান, মাঠের অভাবে বিদ্যালয়গুলোতে বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা সম্ভব হয় না। এতে করে শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল কর্মকান্ড থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
কথা হয় ভুলতা স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, মাঠির অভাবে স্কুলগুলোর ছাত্র-ছাত্রীরা প্রস্তুতি নিতে পারে না। এতে উপজেলা পর্যায়ের কোনো খেলাধূলায় অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয় না। অনেক স্কুলের নিজস্ব ভবন ছাড়া সামান্য জায়গাও নেই। এমনকি জাতীয় সংগীত গাওয়ার জন্য কোনো স্থান নেই।
কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও সমাজসেবক মাসুম আহম্মেদ বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধূলা খুবই প্রয়োজন। খেলাধূলায় মন ভালো থাকে। বুদ্ধির বিকাশ ঘটে। প্রত্যেক স্কুলে খেলার মাঠ প্রয়োজন।
কামশাইর স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মতিন ভূইয়া বলেন, কামশাইর জনবহুল এলাকা। কয়েক’শ ছাত্র-ছাত্রী। অথচ সামনে খেলার মাঠ নেই। ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলের ছাদে গিয়ে ঝুকি নিয়ে লাফালাফি করে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার খালেদা বেগম বলেন, অনেক স্কুলে খেলার মাঠ নেই এটা সত্য। কিন্তু আমাদেরতো কিছু করার নেই। তবে যেসব স্কুলের খেলার মাঠ দখল হয়ে গেছে তা উদ্ধারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম