১৭ জুন ২০২৫

প্রেস নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২২:০৯, ১৬ জুন ২০২৫

২ যুগেও হয়নি চাষাঢ়ায় বোমা হামলার বিচার

২ যুগেও হয়নি চাষাঢ়ায় বোমা হামলার বিচার

১৬ জুন, ২০০১। শনিবার। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামছে। চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগ অফিসে তখন নেতাকর্মীদের আনাগোনা, ব্যস্ততা আর রাজনৈতিক আলোচনার মধ্যেই হঠাৎ নেমে আসে বিভীষিকার অন্ধকার। একের পর এক বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে নারায়ণগঞ্জ শহর। বোমার গর্জনে মুহূর্তেই স্তব্ধ হয়ে যায় চারপাশ। রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আওয়ামী লীগের ২০ নেতাকর্মী, আহত হন অর্ধশতাধিক। আহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন সংসদ সদস্য শামীম ওসমানও।

নৃশংস সেই হামলার ২৪ বছর পেরিয়ে গেছে আজ। কিন্তু এত বছরেও হয়নি বিচার, হয়নি দোষীদের শাস্তি৷ দীর্ঘসূত্রতার বেড়াজালে আটকে থাকা এই মামলায় অবশেষে আগামী ১ আগস্ট রায়ের দিন নির্ধারণ করেছে বিচারিক আদালত।

দীর্ঘ তদন্তের পর চার্জশিট
ঘটনার পর মহানগর আওয়ামমী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন। মামলায় তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারসহ ২৭ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। তৈমুর আলম ওই সময় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন৷

কিন্তু ২০০৩ সালে তদন্ত শেষে বলা হয়, এদের কেউই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। মামলা থেকে এজাহারে অভিযুক্তদের অব্যাহতি দিতে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে আবেদন করে পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা৷

অভিযুক্ত বিএনপি নেতাদের মামলা থেকে বাদ দিয়ে এ প্রতিবেদন যখন জমা পড়ে তখন রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল বিএনপি৷

ওই সময় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, তার ভাই জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য নাসিম ওসমান ও সেলিম ওসমানসহ ৫৮ জনকে আসামি করে আরেকটি পাল্টা মামলা হয়৷ মামলার বাদী হন বোমা হামলায় নিহত এক চা দোকানি হালিমা বেগমের ছেলে আবুল কালাম৷ পরে উচ্চ আদালতে এ মামলাটি খারিজ হয়ে যায়।

দীর্ঘদিন মামলাটি হিমাগারে থাকার পর আওয়ামী লীগ সরকারে আসলে ২০০৯ সালে আদালতের আদেশে পুনরায় তদন্ত শুরু করে সিআইডি। ২০১৩ সালে দু’টি মামলায় মোট ৯৪৭ পৃষ্ঠার চার্জশিট জমা দেয় তারা। এতে ছয়জনকে অভিযুক্ত ও ৩১ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

চার্জশিটে নাম আসে—ক্রসফায়ারে নিহত যুবদল ক্যাডার মমিনউল্লাহ ডেভিডের ভাই শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান (অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত), জঙ্গি নেতা ওবায়দুল্লাহ রহমান, তার ভাই ভারতের দিল্লি কারাগারে আটক আনিসুল মোরসালিন, মুহিবুল মুত্তাকিন এবং সাবেক কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকুর।

তবে ২০২০ সালে আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান চার্জশিট নিয়ে প্রশ্ন তোলেন৷ তিনি বলেন, “চার্জশিটে এমন অনেকের নাম আছে, যারা ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয়। আবার প্রকৃত অপরাধীরা বাদ গেছে।”

যাদের জীবন থেমে গেছে সেদিনই
ঘটনার দিন চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে সভা চলছিল৷ বিকেলে শুরু হওয়া সভাটিতে দলটির বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন৷

সেদিন বোমা হামলায় প্রাণ হারান: ছাত্রলীগ নেতা সাইদুল হাসান বাপ্পী, তোলারাম কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস আকতার হোসেন, সংগীতশিল্পী মোশাররফ হোসেন মশু ও নজরুল ইসলাম বাচ্চু, আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন ভাসানী, এ বি এম নজরুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাইদুর রহমান সবুজ, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী পলি বেগম, কবি শওকত হোসেন মোক্তার, চা দোকানি হালিমা বেগম, যুবলীগ কর্মী নিধু রাম বিশ্বাস, রাজিয়া বেগম, আব্দুস সাত্তার, এনায়েতউল্লাহ স্বপন, স্বপন রায়সহ বিশজন৷

তৎকালীন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান গুরুতর আহত হন। তার ব্যক্তিগত সহকারী চন্দন শীল ও যুবলীগ কর্মী রতন দাস দুজনই হারান পা, পঙ্গুত্ব বরণ করেন চিরতরে।

নিহত পলি বেগমের মেয়ে শাহিদা আক্তার ঝুমা বলেন, “আমার মা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে রাজনীতি করে প্রাণ দিয়েছেন। আমাদের ব্যবহার করেছে সবাই, কিন্তু কেউ কোনো খোঁজ নেয়নি। মা হারানোর পর ২০১৩ সালে বাবাকেও হারিয়েছি। এখন আমরা দুই বোনও অসুস্থ, কিন্তু দেখার মতো কেউ নেই।”

দীর্ঘ সময় পরও কি ন্যায়বিচারের অপেক্ষার অবসান ঘটবে, প্রশ্নও রাখেন ঝুমা৷

তবে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাবলিক প্রসিকিউটর (ভারপ্রাপ্ত) একেএম ওমর ফারুক নয়ন জানিয়েছেন মামলাটির রায়ের দিন ধার্য হয়েছে৷

“এই মামলায় ১৯ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। বাদী, তদন্ত কর্মকর্তা, চিকিৎসকসহ মূল সাক্ষ্যগুলো সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ১ আগস্ট রায়ের দিন নির্ধারিত রয়েছে”, বলেন তিনি৷

সর্বশেষ

জনপ্রিয়