মাওলানা আউয়ালের ১০ অভিযোগের জবাব দিলেন আইভী

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধে আজ শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ওলামা পরিষদের ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেছে হেফাজতে ইসলামের নেতারা৷ মেয়রের বিরুদ্ধে মসজিদ ও মাদরাসা ভাঙার যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে সেসব খোলাসা করে পূর্বেই গণামাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছিলেন মেয়র আইভী৷ ওই বক্তব্যে জেলা হেফাজতে ইসলামের আমীর ও ডিআইটি মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুল আউয়ালের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করেই তার বক্তব্যের যুক্তি খন্ডন করেছিলেন সিটি মেয়র৷ এরপরও শহরে তার বিরুদ্ধে হেফাজতের প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক নিয়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনা৷ নগরবাসী মনে করে, এই সমাবেশের পেছনে অন্য ধরনের উদ্দেশ্য রয়েছে৷ এদিকে এই সমাবেশ ও পূর্বে মাওলানা আউয়ালের বক্তব্যে তোলা অভিযোগের বিষয়ে প্রত্যেকটি পয়েন্ট ধরে পুনরায় ব্যাখ্যা দিয়েছেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী৷
১. মাওলানা আব্দুল আউয়াল সাহেবের বক্তব্য:
এই নারায়ণগঞ্জের এক মেয়র আছে, এই মেয়রের একটা ছবি দেখছিলাম, উনি নাকি মন্দিরে যাইয়া- আমি ছবিটা আমাকে দেখাইছে, মন্দিরে যাইয়া সিন্দুর লাগাইয়া উনি প‚জা করতেছে; সেটা ভাইরাল হইছে ছবিটা, আমি দেখলাম কালকে। আশ্চর্য একজন মুসলমান নারী, নারায়ণগঞ্জের মেয়র হিসাবে তুমি দাবী কর। কিন্তু তোমার কি মন্দিরে গিয়ে সিদুর লাগাইয়া কও এভাবে ফুল লাগাইয়া হাতের মধ্যে চুড়ি লাগাইয়া, তুমি এভাবে মূর্তির সামনে এভাবে নমঃ নমঃ ভাব দিয়েছো। এডিকি কোন দিন মুসলমান সহ্য করতে পারে কোনদিন। তার অবস্থাটাও বুঝতে পারতেছি না।
বক্তব্যের খন্ডন:
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশ। আবহমান কাল থেকে এ দেশে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান নির্বিঘ্নে বসবাস করছে। নারায়ণগঞ্জও এর ব্যতিক্রম নয়। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র একজন মুসলিম নারী হলেও তিনি সকল ধর্ম-বর্ণ, শ্রেণী পেশার সকল মানুষের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। অবহেলিত নারয়ণগঞ্জের বৈপ্লবিক উন্নয়নের পাশাপাশি তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়নে ৫টি মসজিদ নির্মাণ, ঈদগাহ, মন্দির এবং গীর্জার সংস্কার ও উন্নয়নসহ হিন্দুদের শ্মশান, মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের কবরস্থানের ব্যাপক সংস্কার ও উন্নয়ন করেছেন। উল্লেখ্য বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম একটি নির্দশন হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন মাসদাইরস্থ কেন্দ্রিয় সিটি কবরস্থান, মহাশ্মশান, খ্রিষ্টানদের কবরস্থান, মেনন সম্প্রদায়ের কবরস্থান একই স্থানে পাশাপাশি অবস্থিত। বিভিন্ন ধর্মের অনুষ্ঠানে তিনি সহযোগিতা ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করেন। যেমন: ঈদ উপলক্ষে ঈদগাহে নামাজের ব্যবস্থা ও আলোকসজ্জাকরণ, দূর্গা পূজায় বিসর্জনের স্থানে প্যান্ডেল তৈরী, বড় দিন উপলক্ষে গীর্জায় রং ও আলোকসজ্জাকরণ ইত্যাদি। তিনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে ২০০৩ সাল হতে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান পরবর্তীতে ২০১১ সাল হতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে অদ্যবদি দায়িত্ব পালন করছেন। নির্বাচন কালীন সময়ে গণসংযোগ কালের একটি ছবি নিয়ে মন্তব্য করা উদ্দেশ্য প্রনোদিত। মহান আল্লাহ্ পবিত্র কোরআন শরীফে ঘোষনা করেছেন- “সত্য সমাগত এবং মিথ্যা দূরীভূত, নিশ্চয়ই মিথ্যা বিলীন হয়েছে” (সূরা- বণি ইসরাইল, আয়াত-৮১)।
২. মাওলানা আব্দুল আউয়াল সাহেবের বক্তব্য:
ঐ দিকে আমাদের, এই বিশেষ করে, আরে কি গোরস্থান, মাসডাইর গোরস্থানের এইখানে একটা দীর্ঘদিনের একটা মাদ্রাসা ছিল; মাদ্রাসাটা ভেঙ্গে দিছে। মসজিদটা ভাইঙ্গা সে একটা মসজিদ করছে। কইরা সে মসজিদের মধ্যে তার মন মতে বেদাতী ইমাম ঢুকাইছে। আমাদের দীর্ঘ বছরের যে হক ইমাম ছিল, ইমামটাকে উচ্ছেদ করেছে। সেখানে তারা বলছেন যে, মাদ্রাসাটা সে নিজেস্ব অর্থায়নে করে দিবে। এত বছর হয়ে গেল এখন পর্যন্ত মাদ্রাসাটা করে দিচ্ছে না। মসজিদ তার অধীনে।
বক্তব্যের খন্ডন:
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনাধীন কেন্দ্রীয় সিটি কবরস্থান, মাসদাইর সংলগ্ন একটি মসজিদ ও অনুমোদন বিহীন একটি মাদ্রাসা ছিল। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন মসজিদ ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সাথে কয়েক দফা আলোচনা করে নতুন ভাবে বৃহত আকারে মসজিদ নির্মাণ এবং মাদ্রাসাটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্তে একমত হন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ০৬/০৫/২০১০খ্রিঃ তারিখে তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার মাননীয় মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, কাউন্সিলর ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে ৪ তলা বিশিষ্ট মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিটি কবরস্থান জামে মসজিদটি শুভ উদ্বোধন করেন। আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বল্লিত মসজিদের ভিতরে একসাথে ৬ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে। মসজিদটি সুষ্টভাবে পরিচালনার জন্য পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যোগ্যতার ভিত্তিতে খতিব, ইমাম, মোয়াজ্জিন, খাদেম, নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ দেয়া হয়। উল্লেখ্য জামে মসজিদ হওয়ার জন্য জমি ওয়াক্বফ করা অপরিহার্য। সরকারী জায়গায় সরকারের অনুমতি ব্যতীত জামে মসজিদ বানানো শরীয়ত সন্মত নয়। মেয়র মাদ্রাসাটি নিজস্ব অর্থায়নে করার কোন অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতি কখনই করেননি। কেন্দ্রীয় সিটি কবরস্থান জামে মসজিদের ইমাম সম্পর্কে বেদাতী বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা শিষ্ঠাচার বর্হিভূত।
৩. মাওলানা আব্দুল আউয়াল সাহেবের বক্তব্য:
ইদানিং খবর পাইলাম বাগে জান্নাত একটা মাদ্রাসা মসজিদ এখানে, এটাকে ভাঙ্গার জন্য প্রথমে লোক পাঠাইছে, পরবর্তীতে সে নিজে যাইয়া এটা ভেঙ্গে দিবে, এটা সিটির জায়গার মধ্যে আছে, সেখানে শিশু পার্ক বানাবে। মসজিদ ভাইঙ্গা, মাদ্রাসা ভাইঙ্গা শিশু পার্ক।
বক্তব্যের খন্ডন:
প্রায় ৪০ বৎসর পূর্বে সাবেক নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মালিকানাধীন খানপুর ‘ম’ খন্ড মৌজাস্থিত সি.এস-২ খতিয়ানভূক্ত সি,এস-৩৮০, এস.এ-৮ খতিয়ানভ‚ক্ত এস.এ দাগ-৫৪৭ আর.এস-৮ খতিয়ানভ‚ক্ত আর.এস-৬৬ দাগের ভূমিতে কিছু অংশে ছোট ছাপড়া ঘর নির্মাণ করে পথচারী ও এলাকাবাসী নামাজ আদায় করত। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে বাগে জান্নাত জামে মসজিদ কমিটি গঠিত হলে, কমিটির সভাপতি জনাব তারা মিয়া সর্দার বর্ণিত স্থানে ২৪০০ বর্গফুট ভূমিতে মসজিদ নির্মাণের অনুমতি চেয়ে সাবেক নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার নিকট আবেদন করেন। আবেদনটি নিয়ে তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার জমিজমা সংক্রান্ত উপ-কমিটির বিগত ০৪/০২/১৯৮৫ খ্রি. তারিখের সভায় আলোচনা হয় এবং বর্ণিত দাগে পরিমিত ভ‚মি মসজিদ কমিটির নামে বন্দোবস্ত দিতে উপ-কমিটি কর্তৃক সুপারিশ করা হলেও পরবতীর্তে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। বাগে জান্নাত জামে মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রে এ ধর্মীয় বিধান অনুসরণ না করে এক সময়ের প্রায় ৬.০০ শতাংশ ভুমির স্থলে বর্তমানে মসজিদ প্রায় ২০.০০ শতাংশ ও মাদ্রাসা প্রায় ১১.০০ শতাংশ যা প্রায় ৩১.০০ শতাংশ ভূমি দখলে রাখা হয়েছে। এক সময় শুধু মসজিদ নির্মাণের কথা বললেও সেখানে ইতোমধ্যে মাদ্রাসা ও দোকানঘর নির্মাণ করা হয়েছে, যা কোন ক্রমেই শরীয়ত সম্মত নয়। কারণ শরীয়তের বিধান মোতাবেক ভূমির মালিকের অনুমতি না নিয়ে কোথাও মসজিদ, মাদ্রাসা নির্মাণ করা যায় না। এ বিষয়ে বাগে জান্নাত মসজিদ কমিটির সাথে বিগত ২৩/০১/২০১২ খ্রিঃ তারিখে সভা হয়। সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক সিটি কর্পোরেশনের ২য় মাসিক সভায় বিবিধ-৭নং আলোচনান্তে মার্কেট কাম মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্তসহ মসজিদটি সিটি কর্পোরেশনের ও মসজিদ কমিটির যৌথ ততত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরবতীর্তে বাগে জান্নাত মসজিদ কমিটির সাথে গত ২৩/০১/২০২১ খ্রিঃ তারিখে সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনান্তে নিমোক্ত সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
(ক) ১৯৪ খানপুর ‘ম’ খন্ড মৌজাস্থিত ২ নং সি.এস খতিয়ানভুক্ত সি এস ৩৮০, এস এ ৮ খতিয়ানভূক্ত এস এ দাগ ৫৪৭ আর এস ৮ খতিয়ানভূক্ত আর এস ৬৬ দাগের ভ‚মিতে ১৭.০০ শতাংশ ভূমির উপর মসজিদ নির্মাণ করা হবে।
(খ) সিটি কর্পোরেশন ও মসজিদ কমিটির সদস্য এবং প্রকৌশলীদের সাথে আলোচনান্তে নীচতলায় মার্কেট নির্মাণের বিষয়ে পরবতীর্তে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
(গ) মসজিদ কমিটি দ্রুততার সাথে অনুমোদন বিহীন বর্ধিত ১১.০০ শতাংশের উপর নির্মিত বা বিদ্যমান মাদ্রাসাটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
(ঘ) মাদ্রাসাটি সরিয়ে নেয়ার পর সৃষ্ট উন্মুক্ত স্থানসহ পাশ্বর্বতী মাঠটি একত্রিত করে একটা দৃষ্টিনন্দন ক্ষুদ্র উন্মুক্ত পার্ক নির্মাণ করা হবে।
অথচ কোন ধরনের তথ্য যাচাই-বাছাই না করে আল্লাহ ঘর মসজিদে বসে এ ধরনের বক্তব্য প্রদান করা ইসলাম সম্মত কি?
৪. মাওলানা আব্দুল আউয়াল সাহেবের বক্তব্য:
ইদানিং আলোচনা শুনতেছি ইদানিং ডি.আই.টি মসজিদের সামনে দিয়া একটা শিক দিয়া একটা ফ্লাইওভার বানাবে। এই মসজিদে তার এই যে, রাসেল পার্কের এইখানে ফ্লাই-ওভার বানাবে লোক আইসা মেপে গেছে। জিজ্ঞেস করা হলো কি ব্যাপার, বলে যে এইখানে ফ্লাইওভার হবে। মসজিদের সামনে আমাদের আম গাছটা কাইটা ফ্লাইওভার বানাবে, এই দর্শনার্থী নারী-পুরুষ সব ঐ খান দিয়ে চলাচল করবে, আর মসজিদের মানুষ নিচে দিয়ে যাবে। বুঝতেছেন ব্যাপারটা, বুঝেন নাই এখনো। তার টার্গেট হলে ডিআইটি মসজিদটা সে নিয়ে যাবে। আসলে মসজিদ নেয়ার মানে তার টার্গেট হলো আমি এখানে কেনো আছি। এমনকি সে বলতেছিল যে, এই লোকটা মসজিদের সেক্রেটারী হয় কেমন করে। আমার সভাপতিকে বলছিল যে,উনাকে আপনারা সেক্রেটারী বানাইছেন, ইমাম আবার সেক্রেটারী কি করে হয়। তার মাথা তেলে-বাগুনে জ্বলতে শুরু করেছে। পরে উনি বলছিলেন যে, আমাদের কাছে গেজেট আছে, এটা গেজেট এ মাধ্যমে ফাউন্ডেশন থেকে আমরা গেজেট আনছি। কোন প্রতিষ্ঠানের প্রধান ঐটার সেক্রেটারী/সাধারন সম্পাদক হতে পারে। তার টার্গেটটা হলো এখন ডিআইটি মসজিদ; তাই না। এই মসজিদটাকে সে নিয়ে নিজের মন মতো বানাবে এবং আমাকে দুই-এক বার বলছিল যে, মসজিদটা আমাকে দিয়ে দেন। মসজিদ যে এই জনগন করছিল, আপনার কাছে ভালো লাগে না। আপনি মেয়র হওয়ার বহু আগে থেকে এখানে ডিআইটি মসজিদ, সে বলতেছিল রেলওয়ের জায়গা, রেলওয়ের জায়গা গুলোর মধ্যে আপনি যা মনে চায় তাই করতেছেন। ডি.আই.টি মসজিদটাকেও নিয়া আপনি যা মনে চায় তাই করবেন। ডি.আই.টি মসজিদ তো আপনার মেয়র হওয়ার আগে এই সম্পত্তিগুলো আপনি নেওয়ার আগে থেকে ডিআইটি মসজিদ এখানে সরকারী জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে; আপনার বাবার জায়গা না। এই জায়গা আপনার বাবার না।
বক্তব্যের খন্ডন:
পরিবেশবান্ধব ঘনসবুজ ঘেরা ছায়াঢাকা, নির্মল পানি সমৃদ্ধ লেক বেষ্টিত জিমখানাস্থ শেখ রাসেল পার্ক এখন নগরীর অন্যতম দর্শনীয় স্থান। এর আয়তন প্রায় ১৮ একর। বর্তমান লেকটি একদা পরিত্যাক্ত জলাশয়/ডোবা ছিল। প্রতিনিয়ত মানুষের বর্জ্য ফেলার কারণে লেকটি ডাম্পিং স্থান ও মশা মাছির প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়। এছাড়াও অবৈধ দখলের ফলে জিমখানা লেক এলাকার পাশে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনাগুলো মাদক ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ফলে লেক এলাকাটির আশেপাশে দ‚ষণ ও অসামাজিক কর্মকান্ডের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়। ২০১০ সালে ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান লেকটি বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ২০১১ সালে জিমখানা লেক খনন, সংস্কার ও সৌন্দর্য্য বর্ধনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ নয়নাভিরাম কাজটি শেখ রাসেল পার্ক হিসেবে নামকরণের জন্য গত ১৪/১১/২০১৭ তারিখে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টে আবেদন করলে ০৭/০৪/২০১৮ খ্রীঃ তারিখে অনুমোদন পাওয়া যায়। প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার বিপুল সংখ্যক লোক এখানে প্রকৃতির নির্মল পরিবেশ উপভোগ করার জন্য আগমন করে। শেখ রাসেল পার্কটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৫৭ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নগরীর পরিবেশ উন্নয়নসহ নগরবাসীর দীর্ঘ দিনের বিনোদন কেন্দ্রের চাহিদা পূরণ হবে। এছাড়া লেকটি অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি ধারণের জন্য সংরক্ষিত জলাধার হিসেবে কাজ করবে। অপরদিকে অগ্নিকান্ড নির্বাপনের জন্য পানি সরবরাহের একমাত্র প্রধান উৎস হিসেবে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। প্রায় মৃত জিমখানা লেকটিকে সংরক্ষণ ও সংস্কারের মাধ্যমে নগরবাসীর একঘেয়েমি জীবনযাপন পরিবর্তন ও প্রাণোজ্জল করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। অথচ এই পার্ক নিয়ে মাওলানা আব্দুল আউয়াল যে অসত্য ও শিষ্টাচার বর্হিভূত বক্তব্য দিয়েছেন তা অত্যন্ত আপত্তিকর। ডি আই টি মসজিদ ভাঙ্গার বিষয়ে কখনই কোন ধরনের বক্তব্য বা কোন আলোচনা করা হয়নি। মসজিদের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য আশেপাশের জায়গা উন্মুক্ত করে গাছ লাগানো হয়েছে এবং মসজিদের মুসল্লিরা যাতে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে এজন্য ওয়াকয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে।
৫. মাওলানা আব্দুল আউয়াল সাহেবের বক্তব্য:
এইখানে আপনি যে, আপনার বাবার জন্য একটা পাঠাগার বানাইছেন। সেখানে কত হাজার কোটি টাকা খরচ করছেন। ফুটপাত একটা দখল কইরা আপনি ফুটপাতকে পরিষ্কার রাখতে চান ফুটপাতটাকে দখল করে রাখছেন আপনি এইখানে। মানুষগুলি হাটতে পারতেছে না, মানুষগুলি রোডে দিয়ে হাটতে হয়; এই সমস্ত কাজগুলি আসলে আপনার উদ্দেশ্যটা কি? আপনার কি উদ্দেশ্য? আপনি কি চাচ্ছেন?
বক্তব্যের খন্ডন:
আলী আহাম্মদ চুনকা সিটি পাঠাগার ও মিলনায়তনটি নারায়ণগঞ্জ নগরীর ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন একটি প্রতিষ্ঠান, যা ১৯২৯ সালে পৌর পাঠাগার নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ পাঠাগারের জন্য ১৯৭১ সালে আলাদা ভবন নির্মাণ করা হয়, যা নগরবাসীর জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ গঠন ও দেশীয় সংস্কৃতি বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালান করে আসছে। সাবেক পৌরসভার চেয়ারম্যান আলী আহাম্মদ চুনকা পৌর পাঠাগারটি ১ম তলা থেকে ২য় তলায় উন্নীত করেন। ভবনটির ১ম তলায় লাইব্রেরী এবং ২য় তলায় ছিল মিলনায়তন। যেখানে নিয়মিত সংস্কৃতি চর্চা করা হতো। পৌর পরিষদের ০৩/০২/২০১০ খ্রি. তারিখে অনুষ্ঠিত ৮৪ তম মাসিক সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আলী আহাম্মদ চুনকা পৌর পাঠাগারের নকশার কাঠামো পরিবর্তন/পরিবর্ধন করণ পূর্বক যুগোপযোগী আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত অপেক্ষকৃত পরিবেশ বান্ধব বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও প্রাকৃতিক আলো বাতাস সম্পন্ন ইকো ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ০৫/০৫/২০১১ খ্রি. তারিখে কার্যাদেশ প্রদান করা হলেও জায়গা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ২৪/০২/২০১৭ খ্রি. তারিখে ০৬(ছয়) তলা বিশিষ্ট পাঠাগারটি প্রায় ২৬ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে কাজটি সম্পূর্ণ হয়। উল্লেখ্য সঠিক তথ্য না জেনে একজন আলেম হয়ে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পাঠাগার নির্মাণ করা হয়েছে তা বলা কতটুকু যৌক্তিক?
৬. মাওলানা আব্দুল আউয়াল সাহেবের বক্তব্য:
আপনি মাজার ওয়ালাকে জায়গা দিতে পারেন। এখানে মাজারটাকে ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে রাস্তা তৈরি করতে আইসা যখন সামনে মাজার পরে গেল তখন সে অফ হয়ে গেল। কারন মাজারে হাত দেয়া যাবে না। দেখলেন না এখানে মিন্নত আলী শাহ্ মাজারে রাস্তা যে, সোজা যাবে বলছিল ঐ পর্যন্ত আইসা অফ হয়ে গেল; এখন মাজারে হাত দেওয়া যাবে না। এখন করলেন মাজার ওয়ালাদের কিছুদিন আগের ৩শতাংশ জায়গা দিলেন, তারা এইখানে সব ওযুখানা করলেন। এরপর দিলেন আবার ৬শতাংশ জায়গা দিলেন তারা নিচতলা/দুতলা ৩ কোটি টাকা বেচে ফেলেছে। বেচে তাদেরকে এখানে করে দিচ্ছেন সবকিছু আমাদের সামনে যায়। আমাদের দক্ষিন পাশ্বে গাউছিয়া মাদ্রাসার সেখানের ৩৩শতাংশ জায়গা তাদেরকে দিয়ে দিলেন আপনি লেখে। তাদের এখানে বিল্ডিং করে দিবেন সবকিছু, তাহলে তাদের সাথে এত ভালো আচরন আর আমাদের সাথে এতো খারাপ আচরন কারনটা কি আপনার।
বক্তব্যের খন্ডন:
পাক-ভারত উপমহাদেশে আউলিয়া দরবেশগণই ইসলামের শান্তির বানী প্রচার করে মানুষকে মুসলমান বানিয়েছেন। আমাদের বাংলাদেশে হযরত শাহজালাল (রঃ), হযরত শাহপরাণ (রঃ) সহ অসংখ্য আউলিয়াকেরামের মাজার শরীফ রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নবী, ওলীদের মাজার শরীফ রয়েছে। আল্লাহর ওলীদের মর্যাদা সম্পর্কে পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহ ঘোষনা করেন- “জেনে নাও! নিঃসন্দেহে আল্লাহর ওলীদের কোন ভয় নেই, নেই কোন দুঃখ–কষ্ট। যারা ঈমান এনেছে এবং আল্লাহকে ভয় করেছে” (স‚রা ইউনুছ, আয়াতঃ ৬২-৬৩)। মহানবী (দ:) ইরশাদ করেছেন- “আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, যে আমার ওলীর সাথে শত্রুতা করে আমি তার সাথে যুদ্ধের ঘোষনা দিই। আমার বান্দাগণ ফরয কাজসম‚হ পালন করার মাধ্যমে আমার এতটা নৈকট্য অর্জন করেন যে, যার সাথে তুলনা করার মত দ্বিতীয় আমল নেই। (অপর বর্ণনায় আছে যে, আমার বান্দাগণ এমন কর্মের মাধ্যমে আমার ততোটা নৈকট্য অর্জন করা সম্ভব নয় যতোটা ফরয কর্ম আদায় করার মাধ্যমে সম্ভব।) এবং আমার বান্দা নফল ইবাদতসম‚হ আদায়ের মাধ্যমে আমার নৈকট্য অর্জন করে থাকে। এভাবে আমি তাকে আমার নিজের মাহবুব বানিয়ে নিই। আর যখন আমি প্রেমাস্পদ বানিয়ে নিই তখন আমি তাঁর কান হয়ে যাই যার মাধ্যমে সে শুনে, তাঁর চোখ হয়ে যাই যার মাধ্যমে সে দেখে, তাঁর হাত হয়ে যাই যার মাধ্যমে সে ধরে এবং তাঁর পা হয়ে যাই যার মাধ্যমে সে চলে। যখন সে আমার কাছে কিছু চায় তখন আমি তাঁকে অবশ্যই দিই। যখন সে আমার কাছে নিরাপত্তা চায়, আমি তাঁকে নিরাপদ রাখি। আমি কোন কাজ করতে কখনো তেমনি সংশয় করি না যেমন মুমিন বান্দার প্রাণ বের করার সময় সংশয় করে থাকি। কারণ যদি সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে, তবে আমি তাঁর অপছন্দটাকে খারাপ জেনে থাকি” (বুখারী শরিফ, হাদিস নং-৬৫০২)। অথচ তিনি একজন আলেম হয়ে মাজার সম্পর্কে যে ধরনের বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন তা বিকৃত মানসিকতার পরিচয়। ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসার জায়গা প্রসংঙ্গে সঠিক তথ্য না জেনে ভুল তথ্য উপস্থাপন করেছেন।
৭. মাওলানা আব্দুল আউয়াল সাহেবের বক্তব্য:
আসল হলো আপনি মাজার পন্থি, আপনি আসলে শিরিক পন্থি, আপনি ঠিকমতো নামাজ পরেন না। এই কারনে আপনি এ সমস্ত কাজ করতে পারতেছেন। আইভী আপনি মনে রাইখেন; আমি আব্দুল আউয়াল চলে যেতে পারি, এই জনগণ আপনাকে ছাড়বে না কোনদিন মনে রাখবেন। আপনি যা খুশি তাই করবেন, এটা হতে পারে না কোনদিন। ডি.আই.টি মসজিদ আপনার চোখের মধ্যে লাগছে না- আপনার চোখের শুল হইছে। আপনি কোরবানী করেন না; আপনি ১০ই মহরম গরু জবাই করেন, আপনি কোরবানীর দিন কোরবানী করেন না। আপনি তো সেই আইভী আপনার ইতিহাস উন্মোচন হচ্ছে, আপনি মনে রাখবেন, আমার ব্যাপারে কিছু আসে যায় না, আমাকে হত্যা করবা, ডি.আই.টি থেকে সরে যাই আপত্তি¡ নাই; নারায়ণগঞ্জবাসী তোমাকে ছাড়বে না, মনে রাখবেন। তুমি একটার পর একটা শুধু আমাদের উপরই নগ্ন হস্তক্ষেপ আমরা তোমার সতীনের ছেলে, আর তারা তোমার আপন ছেলে। তুমি মাজার ওয়ালাদের সবকিছু, রাস্তা করে দিচ্ছো, তুমি আমাদের বিশেষ করে কওমী অঙ্গনকে দেখতে পারো না।
বক্তব্যের খন্ডন:
মহানবী (দ:) বলেছেন- “যার জবান ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ নয় সে প্রকৃত মুসলমান নয়” (বুখারী শরিফ, হাদিস নং- ১১)। আর্ন্তজাতিকভাবে সমাদৃত অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন মেয়রকে হেয় প্রতিপন্ন করে মাজার পন্থি, শিরক পন্থি বলেছেন। মহানবী (দ:) বলেছেন- “যে ব্যক্তি আমার কবর (রওযা) মোবারক যিয়ারত করবে, তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে যাবে” (বায়হাকি শরিফ, হাদিস নং- ১০০৫৩ )। “ইতিপ‚র্বে আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন থেকে কবর যিয়ারত কর। কেননা যিয়ারতের মাধ্যমে (পরকালের কথা) স্মরণ হয়” (মেশকাত শরিফ, হাদিস নং- ১৬৭৭, ইবনে মাজাহ)। শিরক এর আবিধানিক অর্থ হলো অংশীদার বানানো। শিরক হলো আল্লাহর সত্তা, গুণাবলী এবং ইবাদতে কাউকে শরীক করা। কোন ব্যক্তি সম্পর্কে না জেনে ঢালাওভাবে তথ্য প্রমাণ ছাড়া জনসম্ম‚খে বলা ইসলাম সমর্থন করে কি? মেয়র নামাজ পড়েন না, কোরবানী দেন না। নামাজ- ফরজ, কোরবানী- ওয়াজিব। “কেউ অনু পরিমান ভাল কাজ করলে সে তা দেখতে পাবে এবং কেউ অনু পরিমান মন্দ কাজ করলে তাও সে দেখতে পাবে” (সুরা জ্বিলজাল- ৭-৮)। তিনি সম্ভান্ত্র মুসলিম পরিবারের সন্তান। তিনি ধর্মীয় বিধি-বিধান, নামাজ-রোজাসহ ইসলামের সকল আদেশ-নির্দেশ যথা সম্ভব পালনের চেষ্ঠা করেন। অথচ না জেনে এভাবে মসজিদে বসে অসত্য তথ্য প্রচার করার উদ্দেশ্য কি? মহরম উপলক্ষ্যে মানুষকে আপ্যায়ন করা শরীয়তে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। এই দিনকে স্মরণ করে মানুষকে খাওয়ানো একটি উত্তম কাজ। মহানবী (দ:) বলেছেন- “সবচেয়ে উত্তম কাজ হলো মানুষকে খাবার খাওয়ানো এবং পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেয়া” (বুখারী শরিফ, হাদিস নং- ১২)। অথচ একজন আলেম হয়ে সম্মানিত ব্যক্তির আমল-আখলাক সম্পর্কে যে ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন তা শরীয়তের দৃষ্টিকোন থেকে কতটুকু যৌক্তিক।
৮. মাওলানা আব্দুল আউয়াল সাহেবের বক্তব্য:
কিছু দিন আগে শুনেছি পাইকপাড়া গোরস্তানের এইখানে, সেইখানের কিছু যুবকেরা মহিলারা গোরস্তানে জিয়ারত করতে যেয়ে, তারা পিকনিকের মতো ঘুরে। তো সেইখানের কিছু যুবকসহ তারা বলছে যে, হাদিস নিছেন ইমাম সাহেবের থেকে যে মহিলাদের এভাবে কবরস্থানে যাওয়া এটা হাদিসে বৈধ নয়। এ জন্য হাদিস লেখে দলিল লেখে গেইটের মধ্যে লটকাইয়া দিছিল, উনি লোক পাঠাইয়া সেইগুলো ছিড়া ফেলছে এবং সেইখান থেকে ঐ কমিটির লোক ইমাম সাহেবকে ডাকাইছে; ডাকাইয়া বলছে যে, আমার এরিয়ার মধ্যে আমি যা মনে চায় তাই করব, আপনাকে এটা লটকাবার অধিকার কে দিল। এটা- সিটি হলো তার এরিয়া। তিনি কোরান-হাদিস মানতে চায় না। তিনি এগুলা ছিড়ে ফেলছে। তো তিনি কি চায়? তিনি কোরানের বিরোধে যাবে, হাদিস এর বিরোধে যাবে, নিজের অর্থাৎ তিনি মাজার ওয়ালা বানাইতে চায় নারায়ণগঞ্জ শহরটাকে, না। এটা হবে না কোন দিন।
বক্তব্যের খন্ডন:
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন সংবিধিবদ্ধ একটি রাষ্ট্রীয়য় প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এই প্রতিষ্ঠানটি “স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯” অনুযায়ী পরিচালিত হয়। এর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ও সম্পত্তি রক্ষাণাবেক্ষন করা সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব। সিটি কর্পোরেশনকে অবগত না করে কবরস্থানের অভ্যন্তরে অযাচিত হস্তক্ষেপ করা আইন সিদ্ধ নয়। এই সাইন বোর্ড নিয়ে এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে সিটি কর্পোরেশন সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। অথচ সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে উস্কানীমূলক বক্তব্য দেয়া দায়িত্বশীল ব্যক্তির আচরন নয়।
৯. মাওলানা আব্দুল আউয়াল সাহেবের বক্তব্য:
এই ইমামদারেরা ইমানের বলবল ঈমান হও। ডিআইটি মসজিদের উপর একটা হাত দিবে, একটা ইটার উপর হাত দিবে; তার কবর রচিত হবে এই বাংলার জমিনে, মনে রাখবেন। এত বড় সাহসী, ডিআইটি মসজিদ আজকে হইছে, এজন্য সকলের কাছে আমি উদাত্ত আহŸান করবো, ডি.আই.টি মসজিদের সামনে ফ্লাই-ওভার বানাবে এটা কোনদিন বাস্তবয়িত হইতে দিবো না, ইনশাল্লাহ্। আপনারা কি, কোন আন্দোলন যদি আসে, ডাক দেই আসবেন তো নাকি ইনশাল্লাহ্। মনে রাখতে হবে, কি আশ্চর্য এখানে সব কিছু এমনভাবে হয়ে যাচ্ছে, যেমনে মনে চায় তেমনে তিনি শহরটাকে সাযাইছে। সবকিছু চলতে পারে মাজার চলতে পারে সমস্ত রকমের সরকারীভাবে জায়গা দখল করে ক্লাব বানাইতে পারে, সবকিছু বানাইতে পারে, ইমামদার মুসলমানেরা নামাজ পরবে, ছেলেরা একটু কোরান পরবে এটা তোমার বরদাস্ত হচ্ছে না তুমি ভেঙ্গে দিচ্ছ। তাহলে তোমার উদ্দেশ্য ভালো নয়।
বক্তব্যের খন্ডন:
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সিটি এলাকায় ইতোমধ্যেই কয়েকটি মসজিদ নির্মাণ করেছেন এবং বেশ কয়েকটি মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। ডি আই টি মসজিদের অবস্থানটি শেখ রাসেল পার্ক সংলগ্ন হওয়ায় মসজিদের সৌন্দয্য বৃদ্ধির জন্য বৃক্ষরোপন ও মুসল্লিদের চলাচলের জন্য ওয়াক-ওয়ের কাজ চলমান রয়েছে। ডি.আই.টি মসজিদ ভাঙ্গার বিষয়ে কখনোই কোন কথা বলা হয়নি। অথচ যে বিষয়ে কোন ধরনের কথাই বলা হয়নি, সে বিষয়ে উদ্দেশ্য প্রনোদিত মনগড়া বক্তব্য প্রদান করা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা মাত্র। একজন আলেমের এ ধরনের কর্মকান্ড অশোভনীয়। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন “যারা আল্লাহর আয়াতসম‚হকে বিশ্বাস করেনা তারা তো শুধু মিথ্যা উদ্ভাবন করে এবং তারাই মিথ্যাবাদী” (সূরা- নাহল, আয়াত-১০৫)। মহানবী (দঃ) বলেছেন- “মিথ্যুক হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনবে তাই বলবে” (বুখারী শরিফ, হাদিস নং-০৫)।
১০. মাওলানা আব্দুল আউয়াল সাহেবের বক্তব্য:
তুমি এই দেশটাকে, তুমি এই দেশে ইন্ডিয়া বানাইতে চাও, এ দেশটাকে রয়েল (র এর) এজেন্ট বানাইতে চাও, এটা কোনভাবে বাস্তবায়ন হতে দেয়া যাবে না।
বক্তব্যের খন্ডন:
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও তাঁর পিতা প্রয়াত জননেতা আলী আহাম্মদ চুনকার দেশ ও দেশের মানুষের জন্য নিবেদিত প্রাণ হিসেবে সকলের নিকট সুপরিচিত। স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট সহচর মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রয়াত জননেতা আলী আহাম্মদ চুনকা ১৯৬৮ সালে শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৭৬ সালে শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ১৯৮০ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। একাধারে তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন আজীবন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে সর্বপ্রথম জনগণের সরাসরি ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৭৭ সালে তিনি পুনরায় নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। মাটি ও মানুষের সাথে তাঁর নিবিড় সম্পর্কের কারণে আমৃত্যু তিনি নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে মানুষের সেবা করেছেন। পিতার আদর্শকে লালন করে তারই কন্যা ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বিদেশে চিকিৎসা বিদ্যায় উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করেও মাটি ও মানুষের টানে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি ১৯৮৪ সালে নারায়ণগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটির সদস্য, ১৯৯৩ সালে নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদিকা, পরবর্তীতে সহ-সভাপতি হন। ২০১৬ সাল হতে অদ্যবধি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০০৩ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র এবং ২০১৬ সালে আবারো মেয়র নির্বাচিত হয়ে অদ্যবধি জনগণের সেবা করে যাচ্ছেন। অথচ মসজিদে বসে জুম্মার বয়ানে কি উদ্দেশ্য নিয়ে এ ধরনের বক্তব্য দিলেন তা বোধগম্য নয়। মহানবী (দঃ) বলেছেন- “সাবধান! তোমরা প্রত্যেকে একেকজন দায়িত্বশীল। আর তোমাদের প্রত্যেককেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে” (বুখারী শরিফ, হাদিস নং-২৫২৪)। ইসলাম শান্তির ধর্ম। যুগে যুগে সাহাবায়েকেরাম, আউলিয়াকেরামগণ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ইসলাম প্রচার ও প্রসার করেছেন। আলেমগণ হচ্ছেন নবীগণের উত্তরাধিকারী। অথচ একজন আলেম হয়ে জুম্মার বয়ানে তথ্যের সত্যতা যাচাই-বাছাই না করে নারায়ণগঞ্জ তথা দেশ-বিদেশে সম্মানিত ও জনপ্রিয় মেয়র’কে হেয় প্রতিপন্ন করে উস্কানিম‚লক, বিভ্রান্তিকর এবং কবর রচিত করার বক্তব্য দেয়ার উদ্দেশ্য কি?পবিত্র মিম্বারে বসে একজন খতিব সাহেব যে কোন মানুষকে কবর রচিত করার কথা বলতে পারে কি? বাংলাদেশ বিশ্ববাসীর কাছে উন্নয়ণের রোল মডেল হিসেবে পরিগণিত হয়েছে এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বিশাল উন্নয়ণ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে দেশে-বিদেশে সমাদৃত হয়েছেন। এই সময়ে তিনি কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এ ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন কিনা, তা তদন্ত হওয়া দরকার।
প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম