স্বামীরা মাদক মামলায় জেলে, ব্যবসা চালিয়ে গেছেন স্ত্রীরা

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: ফারজানা আক্তার সুমি, বয়স ৩৪। মাদক ব্যবসায়ী স্বামী জাবেদ মাদক ও মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় গত ৩ বছর যাবৎ জেল খাটছেন। স্বামী জেলে থাকলেও মাদক ব্যবসা চালিয়ে গেছেন সুমি। একইভাবে মাদক ব্যবসা চালাচ্ছিলেন আনোয়ার (৩৫) নামে আরেক নারী। তার স্বামী মাদক ব্যবসায়ী এনামুল হক জিয়াও এখন জেলে। কিন্তু স্বামীর অবর্তমানে দিব্যি মাদক ব্যবসা চালিয়ে গেছেন তিনি।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় এলাকায় র্যাব-১১ এর একটি অভিযানে গ্রেফতার হবার পর এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এর আগে বন্দরের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে রাফি ফিলিং স্টেশনের সামনে চেকপোস্ট বসিয়ে মাদক ব্যবসায়ী খাইরুল আমিনকে (২২) গ্রেফতার করে র্যাব। তার দেয়া তথ্যমতেই সুমি ও আনোয়ারাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত তিনজনের কাছ থেকে ৮ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় র্যাব-১১।
র্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-১১ এর একটি আভিযানিক দল সকাল ১০টায় বন্দরের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে রাফি ফিলিং স্টেশনের সামনে পাকা রাস্তার উপর চেকপোস্ট স্থাপন করে। চেকপোস্টে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশীকালে কক্সবাজার হতে ঢাকাগামী প্রেসিডেন্ট ট্রাভেলস স্লিপিং কোচ থেকে নেমে দ্রুত গতিতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সন্দেহভাজন হিসেবে খাইরুল আমিনকে আটক করা হয়। আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খাইরুল কথা ও আচরণে অসংলগ্নতা ও অস্বাভাবিকতা প্রকাশ পেলেও ইয়াবা পাচারের বিষয়ে সে অস্বীকার করে। জিজ্ঞাসাবাদে পরে সে স্বীকার করে যে উক্ত বাসে তার সিটের কেবিনের পাশের গ্লাস সংলগ্ন বাসের ফ্রেমের সাথে সাথে স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো চুম্বক দ্বারা ইয়াবা ট্যাবলেট আটকানো আছে। অতঃপর তার দেয়া তথ্য মতে অভিযান পরিচালনা করে ডিএমপির সায়েদাবাদ এলাকা হতে উক্ত বাসে তার সিটের কেবিনের বাম পাশের গ্লাস সংলগ্ন বাসের ফ্রেমের সাথে চুম্বক দিয়ে আটকানো ও স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো ৩টি পোটলা পাওয়া যায়। পরবর্তীতে উক্ত পোটলাগুলো খুললে ৩০টি পলিপ্যাকে রক্ষিত ৬ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব-১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন জানান, খাইরুলের দেয়া তথ্যমতে সানারপাড় এলাকা থেকে মাদক ব্যবসায়ী সুমি ও আনোয়ারাকে গ্রেফতার করা হয়। সুমির কাছ থেকে ১২শ’ পিস ও আনোয়ারার কাছ থেকে ৮শ’ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত খাইরুল আমিনের বাড়ি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ এলাকায়। সে দীর্ঘদিন যাবৎ অভিনব কৌশলে কক্সবাজারের টেকনাফ হতে বাসযোগে নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় অভিনব পন্থায় নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্য ইয়াবা ট্যাবলেট পাচার ও সরবরাহ করে আসছিল। তার বিরুদ্ধে হত্যা ও মাদক মামলা রয়েছে। প্রায় তিন বছর জেলে থেকে বছর খানেক পূর্বে জামিনে বেরিয়ে এসেছে সে।
র্যাব-১১ এর এই কর্মকর্তা আরও জানান, ফারজানা আক্তার সুমির স্বামী জাবেদের বাড়ি চট্টগ্রাম শহরে। স্বামী-স্ত্রী উভয়েই চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তাদের নামে মানি লন্ডারিং ও মাদক আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। ফারজানার স্বামী প্রায় ৩ বছর ধরে উক্ত মামলায় জেল হাজতে আছে। সুমিও উক্ত মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলার পলাতক আসামি। গ্রেফতারকৃত অপর আসামি আনোয়ারার স্বামী এনামুল হক জিয়ার বাড়ি কক্সবাজারে। তারাও স্বামী-স্ত্রী উভয়েই চিহ্নিত মাদক পাচারকারী। তাদের নামেও মাদক আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। আনোয়ারার স্বামী এনামুল হক জিয়াও বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে আরো স্বীকার করে যে, তারা পরস্পর যোগসাজসে দীর্ঘদিন যাবৎ মাদক ব্যবসা করে আসছে। তাদের একমাত্র পেশা ছিল মাদক ব্যবসা।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম