জিয়াকে ‘কুকুর’ গালি হজম করা দুই নেতাকে নিয়ে ঘুরছেন তৈমুর

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আমলে নারায়ণগঞ্জের যে কয় জন বিএনপির নেতা বিশেষ সুবিধাভোগ করেছেন তাদের মধ্যে আছেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজাদ বিশ্বাস ও বন্দরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল। বিএনপির নেতাকর্মী ও নারায়ণগঞ্জবাসী চেনেন তাদেরকে নারায়ণগঞ্জের একটি প্রভাবশালী পরিবারের `খাদেম` হিসেবে। `আওয়ামী লীগের দালাল` খ্যাত এই দুই নেতাকে নিয়েই নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার। এই দুই নেতার বিরুদ্ধে বিএনপির নেতাকর্মীদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ, একটি অনুষ্ঠানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে ‘কুকুর’ বলে গালাগাল করলেও নীরব ছিলেন তারা। প্রতিবাদ না করে উল্টো সেই অনুষ্ঠানে মুচকি হাসি দিতে দেখা গিয়েছিল এই দুই নেতাকে। এই দুই বিতর্কিত নেতাকে নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নামায় ক্ষুব্দ বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। রাজপথের আন্দোলন তো দুরের কথা বিএনপির মানববন্ধন কর্মসূচিতেও দেখা মেলে না এই দুই নেতার। তবে নেতাকর্মীদের অভিযোগ ওসমান পরিবারের কোন অনুষ্ঠান আবার মিস করেন না তারা।
২০১৫ সালের ১৬ জুন দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের উদ্যোগে জেলা পরিষদের মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমানকে ‘কুকুর’ বলে গালাগাল করেন প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা গোপীনাথ দাস। ওই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, আতাউর রহমান মুকুল। সেইদিন কোন প্রতিবাদ না করায় এই দুই নেতার উপর এখনো ক্ষুব্দ বিএনপির নেতাকর্মীরা। যে কারণে তৈমুর আলম খন্দকারের বাসায় সাম্প্রতিক এক অনুষ্ঠানে মহিলা দলের নেত্রী রহিমা শরীফ মায়া আজাদ বিশ্বাসের উপস্থিতিতেই বলেছিলেন, এই আজাদ বিশ্বাস আওয়ামী লীগের দালাল, শামীম ওসমানের দালাল। এমনকি এই বছরের ৬ জানুয়ারি রাতে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের লাইভ টকশোতে নারায়ণগঞ্জ মহিলা দলের নেত্রী ও সিটি কর্পোরেশনের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর আয়েশা আক্তার দিনা বলেন, জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটিতে দালাল হিসেবে আমি আজাদ বিশ্বাসকে বুঝিয়েছি। তিনি চিহ্নিত দালাল। এক্ষেত্রে তৈমূর ভাইয়ের উচিত হবে দল থেকে এ ধরনের দালালকে দূরে সরিয়ে রাখা।
সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস ২০০৯ সালে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। স্থানীয় সাংসদ শামীম ওসমানের আশীর্বাদে প্রায় ১৩ বছর ধরে তিনি এই পদে আছেন বলে অভিযোগ। ২০১৯ সালের ১৯ অক্টোবর বিকেলে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার দেলপাড়া মাঠে ডিএনডির মেগা প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তব্যে আজাদ বিশ্বাস সাংসদ শামীম ওসমানকে `আমার নেতা` বলে সম্বোধন করেন। এছাড়া বন্দরের শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে কান ধরে ওঠ-বসের ঘটনায় মহাজোটের এমপি সেলিম ওসমানের পক্ষে মানববন্ধন করেছিলেন তিনি। ২০১৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে নগরীর নবাব সলিমুল্লাহ সড়কে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমানের একটি সমাবেশেও উপস্থিত ছিলেন আজাদ বিশ্বাস। নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়েছিলেন এই আজাদ বিশ্বাস।
অপরদিকে আতাউর রহমান মুকুল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের পক্ষে কাজ না করলে নেতা-কর্মীদেরকে নারায়ণগঞ্জ শহর ছাড়া করার হুমকি দিয়ে নতুন সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। তিনিও আওয়ামী লীগের শাসনামলে টানা দুইবার বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার এই নির্বাচিত হওয়ার পেছনেও নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের আশীর্বাদ ছিল বলেই জানে শহরবাসী। তবে বরাবরই ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের সাথে সখ্যতা বজায় রেখে চলেন আতাউর রহমান মুকুল। ওসমান পরিবারের সাথে বিএনপি নেতা মুকুলের এ সখ্যতার ইতিহাস অনেক পুরানো বলে জানান বিএনপি ও আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা। এমনকি গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় জোটের ধানের শীষের প্রার্থী এসএম আকরামকে সমর্থন না দিয়ে কাজ করেন মহাজোটের প্রার্থী এমপি সেলিম ওসমানের পক্ষে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার পক্ষে ভোট চেয়ে প্রচারণা করতেও দেখা যায় তাকে।
গত ২০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় এক মতবিনিময় সভায় তৈমূর আলম খন্দকারের উপস্থিতিতে আতাউর রহমান মুকুল বলেন, ‘যারা এখনও আমাদের সাথে আসে নাই, তারা আমাদের চাইতেও বড় বিএনপি। তারা বলতেছে, কেন্দ্র তো বলে নাই, আমরা কেন নির্বাচন করবো, বাহানা দেখায়। এইগুলা হচ্ছে তাগো (আওয়ামী লীগ) দালাল। এইগুলি (বিএনপির নেতা-কর্মীরা) যদি না আসে তৈমুর ভাইয়ের নির্বাচন না করে এইগুলিকে নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে বের করে দিব। এক দম সোজা কথা।’
তার এই ঘোষণায় ক্ষুব্দ নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা। এই ঘটনায় তারা মুকুলকেই মুখে লাগাম দিয়ে কথা বলতে বলেছেন। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুকুল ইসলাম রাজীব বলেন, কারো এক কান কাটা গেলে রাস্তার এক পাশ দিয়া হাঁটে আর যার দুই কান কাটা যায় সে রাস্তার মাঝখান দিয়া হাঁটে। মুকুলের অবস্থাটাও তেমন। তার দুই কানই কাটা গেছে। তাছাড়া নারায়ণগঞ্জে দুই চারজন সরকার দলীয় দালাল যদি চিহ্নিত করা হয়, তাহলে সে (মুকুল) এক নম্বরে আছে।
এদিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, আজাদ বিশ্বাস ও মুকুল বিএনপির সাইনবোর্ডে আওয়ামী লীগের এজেন্ট। বিএনপির কোনো আন্দোলন কর্মসূচিতে উপস্থিত না থাকলেও ক্ষমতাসীন ওসমান পরিবারের দালালিতে সিদ্ধহস্ত তারা। বিএনপির তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের দাবি, এমনিতেই নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে দলের প্রতীক ধানের শীষ না নিয়ে স্বতন্ত্র মেয়র পদে মাঠে নামায় তৈমুর আলম খন্দকার ক্ষমতাসীন দলের একটি অংশের সমর্থনে নির্বাচন করছেন বলে নগরজুড়ে গুজব চাউর আছে। সেখানে আতাউর রহমান মুকুল ও আজাদ বিশ্বাসের মতো ওসমান পরিবারের চিহ্নিত দালালদের নির্বাচনের সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়ে তৈমুর আলম খন্দকার সেই গুজবকে বিশ্বাসযোগ্য ও প্রতিষ্ঠিত করছেন বলে মন্তব্য করছেন নগরবাসী।
প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম