২৮ জুন ২০২৫

প্রকাশিত: ১৫:১০, ২৩ জানুয়ারি ২০১৮

অস্ত্রের ঝনঝনানির বিরুদ্ধে সত্যের জয়: আইভী

অস্ত্রের ঝনঝনানির বিরুদ্ধে সত্যের জয়: আইভী

প্রেস নারায়ণগঞ্জ ডটকম: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘‘আমি নারায়ণগঞ্জবাসীর উদ্দেশে একটা কথা বলতে চাই, যে সাহসী আইভীকে তারা পেয়েছিল সেই সাহসী আইভীকে নারায়ণগঞ্জ আবার পেয়েছে। অস্ত্রের ঝনঝনানির বিরুদ্ধে সত্যের জয়, নৈতিকতার যে জয় তাকে যে হারানো যায় না তা নারায়ণগঞ্জ দেখিয়েছে। শান্তির নারায়ণগঞ্জ, শান্তির নারায়ণগঞ্জই থাকবে। আমার স্লোগান ছিল ‘নয় সন্ত্রাস নয় ভয়, শহর হবে শান্তিময়।’ আমার শহর শান্তিময় হতেই হবে। এই ব্যাপারে আমাকে সহযোগিতা করবেন আমাদের সকলের গার্ডিয়ান জননেত্রী শেখ হাসিনা। আমি উনার ক্ষুদ্র কর্মী। আমার কোনও অভিযোগ নেই।’’

রাজধানী ল্যাবএইড হাসপাতালে মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ের সময় আইভী এসব কথা বলেন।

আইভী বলেন, আমার ফুটপাত দিয়ে আওয়ামী লীগ হাঁটবে, বিএনপি হাঁটবে এবং আমার ফুটপাত দিয়ে জনগণ হাঁটবে। এটা সকলের অধিকার। আমি যখন ট্যাক্স নেই তখন সবার কাছ থেকে নেই। সিটি লিডার হিসেবে আমি সবার মেয়র।’

রাজধানী ল্যাবএইড হাসপাতালে মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ের সময় আইভী এসব কথা বলেন। আইভী বলেন, ‘ফুটপাত দিয়ে মানুষ হাঁটবে। হকারদের জন্য চারতলা ভবন হচ্ছে। তারা সেখানে যাবে। হকারদের জন্য এটাই আমার মেসেজ। আমার মানুষ হাঁটবে নাগরিক অধিকার। হকাররা তাদের জায়গায় যাবে।’

আইভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমি শেখ হাসিনার এক অতি ক্ষুদ্র কর্মী। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী। আমি আলী আহম্মদ চুনকার সন্তান। এই আমার পরিচয়। সকল কিছু আমার জনগণ, নারায়ণগঞ্জের জনগণ। যেই জনগণের জন্য আমি বেঁচে আছি , এখানে দাঁড়ায়ে আছি। আমি আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছি। সশস্ত্র আক্রমণ থেকে নিরস্ত্র লোকজন ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাকে রক্ষা করেছেন। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি আপনাদের বোন, আপনাদেরই একজন। আমি জীবনে কোনোদিন এত ভালোবাসা পাইনি। আমার আর কিছু পাওয়ার নেই। একজন ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে আমি অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। আমার নেত্রীর প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই।’

ব্রিফিংয়ে আইভী বলেন, ‘আমার সঙ্গে কারও কোনও বিরোধ নেই। দেশসেবা করতে আমি নিউজিল্যান্ড থেকে চলে আসি। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের ভরাডুবির পর ২০০৩ সালে ক্যান্ডিডেট হয়ে আমি পাস করেছিলাম। আমি শেখ হাসিনার পরীক্ষিত সৈনিক। আমাকে বারবার পরীক্ষা দিতে হবে না। আমি আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিত কর্মী।’

ল্যাব এইড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনাদের। পুনরায় আমি ল্যাব এইড হাসপাতালকে ধন্যবাদ জানাই। ল্যাব এইড হাসপাতাল আমাকে এখানে দাঁড় করায় রাখছে। সব ডাক্তাররা আমাকে দেখেছেন। ডাইনে-বাইয়ে সমস্ত ডাক্তার, আমি কারও নাম বলে ছোট করতে চাই না। ওই হাসপাতাল আমাকে যে সেবা দিয়েছে তা আমি কোনোদিন ভুলবো না। যদিও আমি তাদেরই একজন। আপানারা জানেন প্রফেশনালি আমিও একজন ডাক্তার ছিলাম। আমি সেখান থেকে রাজনীতিতে এসেছি। সেই ডাক্তার ভাইয়েরা আমাকে প্রতিদিন একটু একটু করে সুস্থ করে তুলেছেন। আমি এখন একদম ভালো, আল্লাহ রহমতে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশ দরিদ্র দেশ। আমার দেশ মধ্যম আয়ের দেশে যাচ্ছে। মধ্যম আয়ের দেশে যাওয়ার জন্য সরকার যে কাজগুলো করছে তা এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমাদের স্পিড, আমাদের মনোবলকে কেউ পেছাতে পারবে না। আমরা আমাদের অ্যাচিভমেন্টে যাবোই যাবো। আর সেটা করবো আমার জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। যেহেতু আমি একজন মেয়র- আমি সিটি পরিচালনা করি। আমার সিটির দায়-দায়িত্ব আমার। আমার সিটির ভেতরে এসে কেউ এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে আমার সিটিকে নিয়ে কমেন্ট করবে তা আমার নগরবাসী মেনে নেবে না। যেটা তারা মেনে নেয় নাই, সেটা ভবিষ্যতেও মেনে নেবে না। আমার নগর কী হবে সেটার সিদ্ধান্ত আমার নরগবাসী দেবে। আরেকটা কথা, আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় বিশ্বাসী না। আমি জানি, এই কয়দিনে অনেক কিছু হয়েছে। আমার সাথে কারও রাজনৈতিক ও পারিবারিক বিরোধ নেই। বিরোধ যদি কিছু থাকে সেটা আদর্শগত, নীতিগত।’

প্রসঙ্গত, নগরীর সৌন্দর্য অক্ষুণ্ন রাখতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ভেতরের সড়কের ফুটপাথগুলো হকারমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন মেয়র আইভী। এই সিদ্ধান্তে হকাররা প্রতিবাদ জানালে তাদের সমর্থন জানান শামীম ওসমান। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্য রাখার ঘটনাও ঘটে। সবশেষ মেয়র আইভী নগরীর ফুটপাথ থেকে হকারদের উচ্ছেদের ঘোষণা দিলে তাদের আবারও ফুটপাথে বসানোর ঘোষণা দেন শামীম ওসমান। এর প্রতিবাদে গত ১৬ জানুয়ারি নগর ভবন থেকে পায়ে হেঁটে মেয়র আইভী তার নেতাকর্মীদের নিয়ে মিছিলসহ চাষাঢ়া এলাকায় আসেন। তারা মুক্তি জেনারেল হাসপাতালে সামনে এলে শামীম ওসমানের সমর্থক ও হকাররা তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ও গুলি ছোড়ে। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে মেয়র আইভীসহ উভয় শিবিরের শতাধিক আহত হয়। এই ঘটনায় উভয়পক্ষে টান টান উত্তেজনার মধ্যেই ১৮ জানুয়ারি বিকালে নগরভবনে কর্মরত অবস্থায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন মেয়র আইভী। তাকে সেদিন বিকালেই রাজধানীর ল্যাব এইডে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসা শেষে আজ মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) সুস্থ হয়ে তিনি ঘরে ফিরে গেলেন।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়