বাবা ফিরেছেন লাশ হয়ে, পুতির মালা হাতে মেয়ের বিলাপ

সৌরভ হোসেন সিয়াম (প্রেস নারায়ণগঞ্জ): কুয়াকাটা থেকে মেয়ের জন্য পুতির মালা আর এক জোড়া কানের দুল কিনেছিলেন শাহীন আলম। এসব নিয়ে বাড়ি ফেরার কথা থাকলেও ফিরেছেন লাশ হয়ে। গত রোববার দুপুরে গোপালগঞ্জে এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে তার।
গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার উত্তর কাশীপুর এলাকায় শাহীনের বাড়িতে দেখা যায় শোকের মাতম। বাবার কেনা সেই মালা আর দুল হাতে বিলাপ করছেন বড় মেয়ে সুমাইয়া আক্তার সাফা। রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রী সুমাইয়া বলেন, ‘আব্বু আমার জন্য এইগুলা কিনছিল। মোবাইলে ছবি তুইল্লা পাঠাইছিল। কোথাও ঘুরতে গেলেই আমার জন্য কিছু না কিছু নিয়া আসতো। আব্বু তো চইলা গেল, এখন এইগুলা দিয়া আমি কি করমু?’
কাশীপুর ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ছিলেন শাহীন আলম। আট ভাইবোনের মধ্যে শাহীন পাঁচ নম্বর। তার ছোট বোন পপি আক্তার জানান, শাহীনের এক মেয়ে ও দুই ছেলে। বড় ছেলে আবু হুরাইরা (১৫) ক্বওমী মাদরাসার ছাত্র এবং ছোট ছেলে আদরিব (৬) প্রথম শ্রেণির ছাত্র।
পপি আক্তার বলেন, প্রথমে খবরটা শুইনা বিশ্বাস করি নাই। লাশ না দেখা পর্যন্ত বিশ্বাস করি নাই। আল্লায় জানের উপর দিয়া না নিয়া মালের উপর দিয়া নিতো! (কান্না)
গত বৃহস্পতিবার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে কুয়াকাটা বেড়াতে গিয়েছিলেন শাহীন আলম ও তার চার বন্ধু। ফেরার পথে রোববার দুপুরে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার দিগনগরে স্পিডব্রেকার পার হওয়ার সময় গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন লেগে যায়। এ ঘটনায় নিহত হন শাহীন আলম ও তার বন্ধু ময়মনসিংহ গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার ফরিদ শেখ, চাঁদপুর ফরিদগঞ্জের মাসুদ আলিম, খোকন শেখ ও বরিশালের আব্দুল মান্নান। গাড়িটি ফরিদ শেখের নিজের ছিল বলে জানা গেছে।
রোববার রাতেই শাহীন আলম ও ফরিদ শেখের মরদেহ নারায়ণগঞ্জে আনা হয়। বাকিদের স্বজনরা তাদের মরদেহ নিজ নিজ গ্রামে নিয়ে যান। গতকাল সকালে ফরিদ শেখের স্বজনরাও তার মরদেহ ময়মনসিংহে নিয়ে যান।
প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম