সোনারগাঁয়ের এক গ্রামের ৩২ শিক্ষার্থীর বাল্য বিয়ে

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের নুনেরটেক গ্রামে গত বছর ৩২টি মেয়ে বাল্য বিবাহের শিকার হয়েছে। এরা সকলেই নুনেরটেক উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী ছিলেন। বাল্য বিবাহের শিকার শিক্ষার্থীদের পরিবার ও বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতা এবং অফিসের নথি ঘেঁটে জানা যায়, গত বছর ৩২ জনের বাল্য বিবাহ হয়েছে। এর মধ্যে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ৮জন। ৭ম শ্রেণির ১২জন, ৮ম শ্রেণির ১ জন ও নবম শ্রেণির ৯ জনের বাল্য বিবাহ দেয়া হয়। এছাড়া আরও দুই ছাত্রীর বাল্য বিবাহ হয়েছে। বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় তাদের নাম পাওয়া যায়নি। তবে গ্রামবাসী ও কয়েকজন সহপাঠী তাদের বাল্য বিবাহের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
কয়েকজন গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যে ৩২ জনের বাল্য বিবাহ হয়েছে, তাদের ২৮ জনের পাত্রই প্রবাসী। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দেয়ার জন্যে টেলিফোনে ও দূরের আত্বীয় স্বজনের বাড়িতে নিয়ে এসব বাল্য বিবাহ সম্পন্ন করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সোহানা আক্তার বলেন, চোখের সামনে দেখেছি আমাদের সহপাঠীদের একের পর এক বাল্য বিবাহ হচ্ছে। আমাদের সহপাঠীরা অনেকেই এখন সন্তানের মা হয়ে আছে। অভিভাবকেরা গোপনে অন্যত্র নিয়ে তাদের মেয়েদের বিয়ে দেন। অনেকদিন কেউ স্কুলে অনুপস্থিত থাকলে পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তার বিয়ে হয়ে গেছে। বাল্য বিবাহ রোধ করতে হলে আমাদের অভিভাবকদের সবার আগে সচেতন হতে হবে।
প্রায় আড়াই মাস আগে বাল্য বিবাহের শিকার ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, ছোট মাইয়াদের বিয়া আমাগো গ্রামে আজীবন থেকে চইলা আইছে। মাইয়া মাইনষের পড়ালেখা কইরা কী হইবো। এ জন্যে ছোট থাকতেই বিয়া দিছি। তারা সুখেই আছে।
৭ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, আমার মেয়েকে প্রবাসী ছেলের কাছে বিয়ে দিয়েছি। মেয়ে আরও বড় হলে যৌতুক নিতো। ছোট বিধায় যৌতুক লাগেনি।
নুনেরটেক উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ শাহজালাল জানান, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের স্কুলে এক বছরে ৩২টি বাল্য বিবাহের ঘটনা ঘটেছে। এসব বিবাহের অধিকাংশই গোপনে ও অন্য এলাকায় হয়েছে। এ কারণে প্রশাসনিক ভাবে কোনো ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি।
গ্রামের বাসিন্দা আলী নূর বলেন, যারা মেয়েদের বোঝা মনে করেন তারা চান মেয়েদের দ্রুত শ্বশুর বাড়ি পাঠাতে। এ গ্রামে যুগ যুগ ধরেই বাল্য বিবাহ চলে আসছে। বাল্য বিবাহের কারণে প্রসুতি ও শিশুরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নুনেরটেক কমিউনিটি ক্লিনিকের পরিবার পরিকল্পনা সহকারি লাইলী আক্তার বলেন, এ গ্রামে বাল্য বিবাহের কারণে খুব কম বয়সে মেয়েরা মা হচ্ছে। ফলে সন্তান প্রসব করার পর মায়েরা অপুষ্টিতে ভোগে।
স্থানীয় বারদী ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য লোকমান হাকিম বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকেই গ্রামটি বাল্য বিবাহের গ্রাম নামের পরিচিত। আমরা বাধা দিলেও মেয়েদের বাবা-মা মেয়েকে অন্য জায়গায় নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেন।
সোনারগাঁয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনুর ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, গ্রামটি নদীবেষ্টিত চরাঞ্চল। সচেতনতার অভাবে অভিভাবকেরা সন্তানদের বাল্য বিবাহ দেন বলে অভিযোগ পেয়েছি। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা বাল্য বিবাহের কুফল সম্পর্কে সচেতন করতে গ্রামবাসীর মাঝে প্রচারণা চালাচ্ছি।
প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম