২৫ জুন ২০২৫

প্রকাশিত: ২১:৩৩, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

ভালোবাসা ও একুশে ব্যস্ত রূপগঞ্জের ফুল চাষীরা

ভালোবাসা ও একুশে ব্যস্ত রূপগঞ্জের ফুল চাষীরা

প্রেস নারায়ণগঞ্জ: ১৪ ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও ২১ফেব্রুয়ারী আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মাসুমাবাদের ফুল যাবে রাজধানীসহ সারাদেশে। বিশেষ দুটি দিনকে সামনে রেখে এবার অন্তত ২০ লাখ টাকার ফুল যাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। একারনে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন এ এলাকার ফুলচাষীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিশির ভেজা ঘন কুয়াশার ঘোরে ঘুম থেকে উঠে ফুল চাষীরা পরিচর্যা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। মাসুমাবাদ গ্রামের বাড়ি বাড়ি এখন কাঠ বেলী ও চেরী, আলমেন্দা, বেলি, গাদা আর রঙ্গন ফুলের বাগান। ভোর ৬টার মধ্যে বাগানে যেতে হয়। ১১টা পর্যন্ত চলে ফুল তোলা। এরপর ঘরে বসে সুঁই-সুতোর সঙ্গে ফুলের সেই বন্ধন।

জানা যায়, রূপগঞ্জের মাসুমাবাদ দিঘীরপাড় গ্রামের ফুলচাষী গ্রামের শহীদুল্যাহ, সফিকুল ইসলাম, অতুল চন্দ্র দাস, রফিকুল ইসলাম,ভায়েলা মিয়া বাড়ী নাঈম মিয়া, আউয়াল মিয়া, আমিনুল হক, মুইরাবো এলাকার জালালউদ্দিন, সোলামান, নজরুল ইসলাম, জলিল, পোরাব এলাকার নুরুলসহ প্রায় ৩০জন ফুলচাষী এবার প্রায় ১‘শ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করেছেন। তাদের অধীনে কাজ করছে প্রায় ৩ শতাধিক পরিবারের লোকজন।

প্রতিদিন বাগান থেকে ফুল তুলে মালা বানানোর জন্য লোকজন তাদেরবাড়ীতে বাড়ীতে নিয়ে যায়। পরে বিকালে আবার সেগুলো ফিরিয়ে দিয়ে যেতে হয় বাগান মালিকদের। যে যত বেশি মালা গাঁথতে পারে, তার আয় তত বেশি। কেউ কেউ প্রতিদিন ২‘শথেকে আড়াইশটি মালা গাঁথতে পারেন। যারা সংসারে কাজ শেষে বেশি ফুরসত পান, তাদের আয়টা একটু বেশি হয়। গ্রামের এসব নারী নিজেদের আয় দিয়ে পরিবারের সদস্যদের জন্য কিনতে পারেন একটুখানি সুখ। ফুলের মিষ্টি গন্ধে ওরা ভুলে থাকে ছোট ছোট দুঃখ গুলোকে। সাদা ফুলের সঙ্গে গেঁথে চলে নীল কষ্টকে। আর সুঁইয়ের খোঁচায় আঙুলে ফুটিয়ে তোলে বিচিত্র নকশা।

সরেজমিনে ফুলের গ্রাম মাসুমাবাদ ভায়েলা মিয়া বাড়ী এলাকায় গিয়ে জানা যায়, এ গ্রামের নাঈম মিয়া প্রায় ২০ বছর ধরে ফুলচাষের সঙ্গে জড়িত। তার ১২বিঘা জমিতে ফুলের বাগানে রয়েছে। তিনি এবারকাঠ মালতি, চেরীফুলম, রক্ত গাদা, হলুদ গাদা আর রঙ্গন ফুলের চাষ করেছেন। এছাড়াও রয়েছে গন্ধরাজ ফুলের বিশাল বাগান। তার ফুল বাগানে ৪০ থেকে ৪৫ জন বিভিন্ন বয়সের নারী আসেন ফুল তুলতে। তাদের কাজের তদারকি করা, ফুলের মালা বুঝে নিয়ে পাওনা মিটিয়ে দেওয়ার দায়িত্বটি তারই। এ গুলো দু’জন লোক নিয়োগ করেছেন বাগান দেখাশোনার জন্য। এ বাগানের ফুল ও ফুলের মালা বিক্রি হয় রাজধানী শাহাবাগের বিভিন্ন ফুলের দোকানে। ফুলের প্রধান মৌসুম পৌষ-চৈত্র মাস। এ সময় গন্ধরাজ ফোটে। কাঠমালতি ফাল্গুন মাস থেকে মাঘ মাস পর্যন্ত ফোটে। ফুল বিক্রি করে প্রতি বছর তার আয় হয় অন্তত৫ লাখ টাকার। তার এ ফুলের বাগান স্বাবলম্বী করেছে তাকে। সেই সঙ্গে আয়ের পথ দেখিয়েছে অনেক অসহায় নারীকে। তিনি আরো বলেন, পৌষ মাস এলেই খুশিতে মনটা ভরে ওঠে আমাদের গ্রামের সুমা আক্তার, শেফালী, সাথী, নাজমা, ছালেহা, নাসরিন ও শারমিনদের। কেননা এটা ফুল ফোটার প্রধান মৌসুম। এ সময় কাঠ মালতি, গন্ধরাজ দেখা মেলে। অজস্র সাদা, আর হলুদ ফুলে ছেয়ে যায় বাগান। তারা প্রতিদিন ২‘শ থেকে আড়াইশটির মতো মালা গাঁথতে পারে। অন্য সময় ফুল কম থাকায় ২০ থেকে ৩০টির বেশি মালা হয় না। তাই তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে এ মৌসুমের জন্য। এ গ্রামেরই স্বামী পরিত্যক্ত কুলসুম বেগম একমাত্র ছেলেকে নিয়ে পড়ে আছেন বাবার ভিটায়। অন্যের বাড়িতে রান্নার কাজ করে এবং ফুলের মালা গাঁথার আয় দিয়ে ছেলেকে বড় করেছেন। ছেলে সংসারের হাল ধরেছে। আর তিনি তার উপার্জিত অর্থ দিয়ে ঋণের টাকা পরিশোধ করছেন। আরেক নারী ছালেহা বেগম দুই সন্তানের জননী। স্বামী রিকশা চালক। তার সামান্য আয় দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। একটু ভালোভাবে থাকার জন্য তিনি এ কাজ করছেন। তার আয় দিয়ে ছেলেটাকে পড়াশোনা করাতে পারছেন। এটাই তার বড় শান্তনা। রুমা অভাবের কারণে ক্লাস ফাইভের বেশি পড়তে পারেনি। এখন সারাদিন অফুরন্ত অবসর সময়টাকে কাজে লাগায় ফুল তুলে ও মালা গেঁথে। ফুলের মৌসুমে ভোর ৫টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফুল নিয়েই থাকতে হয়। সে সারাদিন ২‘শটির মতো মালা গাঁথতে পারে। ওর কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পারছে, ছোট বোনটির বই-খাতা কিনতে পারছে, এ-ইবা কম কী।

ফুল চাষীর মহাজন নাঈম মিয়া বলেন, ভালবাসা ও আন্তজার্তিক দিবসে ফুলের কদর বাড়ে। এবার এ দুই দিবসে প্রায় ২০ লাখ টাকার ফুল যাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

তিনি আরো বলেন, আমরা প্রায় ৩০জন ব্যাক্তি এ এলাকায় ফুল চাষ করে আসছি। আমাদের এখানে ফুল চাষের কারণে প্রায় তিন শতাধিক পরিবার মোটামুটি ভালো আছে। তবে বর্তমানে কারখানার বর্জ্য আর ডাইংয়ের কেমিক্যাল পানির কারনে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারনে এখন আর আগের মতো ফলন হয়না। এ ব্যাপারে সরকারের নজরদারির দাবি করেন তিনি।

প্রেস নারায়ণগঞ্জ.কম

সর্বশেষ

জনপ্রিয়