শাহনাজ মুন্নি’র কল্প কথার গল্প থেকে ৫টি কবিতা

গাঙের টান

মাঝি,
ভোর বিহান হইতে ঘাটে বইসা...
পা আমার জলে ভাসে,
আলতার রঙে ধরছে ঘুণ,
জলের ঘুণ পোকা,
কুটকুটায়া রঙ খায়...
আলতার রঙ,
মনের রঙ,
বইসা আমি জল গুনি...
ঢেউ গুনি, গো মাঝি...
জীবনের ঢেউ...
কানামাছি খেলে রইদ, ঘোমটা দেওয়া আঁচলের ফাঁকে
আমি তো খুঁজি তোমার হাসি, ঐ ঢেউয়ে...

গেল রাইতে স্বপনে দেহি,
নাও তোমার, ঘাটে বান্ধা..
ঘরে আমার জোছনার আলো...
দহনে পুড়ি আমি...

পেঁচা ডাকে ভাঙে ঘুম!
কই জোছনা!
কই তোমার নাও, গো মাঝি!

সূর্য ডুবে আমার চোক্ষের কোনায়,
গড়ায় গড়ায় পড়ে তার আলো...
মিলে গিয়া ঐ গাঙের জলে...
আমি জল হইতে চাই মাঝি,
সেই জলেই না হয় ভাসাইও তোমার নাও...


স্বপ্ন কাজল

মেঘদূত,
আমার কাজল ফুরিয়ে গেছে...
আর তুমি, অঝরে ঝরেই যাচ্ছো!
আয়নায় তাকিয়ে নিজেকে কেমন অচেনা লাগছে!
তোমার মেঘের কালো ছায়ায় যে আমার নয়ন বিলাস...
তোমার ঐ মায়া ছাড়া মনে হয় আমি নিস্ব!
মায়াবীর ঐ দৃষ্টি তো তোমারই...

মেঘদূত,
কাজল ছাড়া যে আমার স্বপ্ন আঁকে না...
বাঁধে না বাসা কোন পাখি...

দেখে না চেয়ে ঐ আকাশে তোমার ভেসে চলা...

শুনো...
একবার যদি অভিমান করি,
হারাবে কিন্তু কৃষ্ণকলি...


আমার একটা সূর্য ছিল

আমার একটা সূর্য ছিল
তার একটা সকাল ছিল
সেই সকালের আলোতে অনেক মায়া ছিল
মায়া গুলোর মিষ্টি ঘ্রাণ ছিল
গাছে গাছে ফুল ছিল
পাখি ছিল
সূর্যটা তা দেখে হাসছিল

একদিন, আকাশে অনেক মেঘ ছিল
সাদা সাদা মেঘে অহংয়ের গ্রাস ছিল
এপাশ ওপাশ মেঘগুলো ছুটছিল
পাখিগুলো অস্থির ছিল
ফুলগুলো কাঁপছিল
সূর্যটা আমার কাঁদছিল
মেঘের আড়াল হতে আমায় খুঁজছিল
সকালের মায়া আঁধারে নামছিল

আমার একটা সূর্য ছিল
তার অনেক কষ্ট ছিল
কষ্টগুলো মেঘে মিশেছিল
বৃষ্টি হয়ে ঝরছিল...


সর্বনাশ

প্রতিদিন প্রতিটি মুহূর্তে আমি একটু একটু করে পড়ি তোমায়
ভাবতাম, ছন্দময় কবিতা তুমি
ভোরের শিশিরের জলকণা তুমি
আমার কপালে পড়া সূর্যের এক ছটা পরশ তুমি
পাখির চঞ্চলতার সুকণ্ঠী সুর তুমি

বিকেলে, কবিতাটা পড়তে গিয়ে দেখি
তুমি এক বিশাল উপন্যাস
সমুদ্রের মতো
যার তল নেই
তীর নেই
আছে, শুধু সর্বনাশ...


কবিতা

আমি মানুষ হতে চেয়েও বার বার হয়ে গেছি তোমার কবিতা
তুমি চেয়ে চেয়ে দেখো বৃষ্টি!
না হয় বৃষ্টিতে ভিজাও কোন নারী,  
কবিতার মতো...

এক বৃক্ষের নীচে দাঁড়িয়ে,
বাঁচিয়ে রাখো তুমি তোমাকে
তুমি কবি...
লিখে যাও প্রতিদিন একটা করে কবিতা...
নতুন নতুন কবিতা...

তোমার ছায়া আমার চারপাশ
তোমার পদ তালে ছন্দ মিলাতে গিয়ে
ধুয়ে যাই আমি জলে...

দুর হতে তৃপ্তির হাসি হাসো তুমি!
অহংকারী বৃক্ষের হাসি
ঐ চোখের ভাষা আমাকে বলে...

‘আমি লিখবো কবিতা প্রতিদিন, একটা একটা করে
নতুন নতুন কবিতা...
তারপর নৌক বানিয়ে ভাসিয়ে দিবো জলে
তুমিও ভাসবে ঐ জলে...’