হাতেমকে ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ বলা ছাত্রদল নেতার দুঃখ প্রকাশ
‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর’ উল্লেখ করে সরকারি তোলারাম কলেজের এক অনুষ্ঠান থেকে বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমকে বের করে দেওয়ার ঘটনার একদিন পর দুঃখ প্রকাশ করেছেন ছাত্রদল নেতা মনির হোসেন জিয়া।
বুধবার (১২ নভেম্বর) রাত আটটার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজ একাউন্টে হাতেমের ছবি পোস্ট করে দুঃখ প্রকাশ করেন জিয়া।
মনির হোসেন জিয়া নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি তোলারাম কলেজের শিক্ষার্থী এবং ওই কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি।
গত মঙ্গলবার জিয়ার নেতৃত্বে কয়েকজন শিক্ষার্থী কলেজ মিলনায়তনে চলমান একটি উদ্যোক্তা সম্মেলন অনুষ্ঠানে ঢুকে হাতেমকে ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর’ বলে স্লোগন দেন। পরে হাতেমকে সেখান থেকে চলে যেতে বললে কিছুক্ষণ পর হাতেম অনুষ্ঠানস্থল ছেড়ে চলে যান।
পরে সাংবাদিকদের মনির হোসেন জিয়া বলেন, মোহাম্মদ হাতেম বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন তৎকালীন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার আহ্বানে গণভবনে গিয়ে ছাত্র আন্দোলনকে ‘তান্ডব’ বলে উল্লেখ করেন এবং তিনি সরকারের পাশে সবসময় থাকার কথাও জানান। তোলারাম কলেজের অন্তত চারজন শিক্ষার্থী আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন কিন্তু সেই কলেজে হাতেমের মতো ‘ফ্যাসিস্টের দোসরকে’ অতিথি করা শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি।
কিন্তু এই ঘটনার একদিন পর দুঃখ প্রকাশ করে জিয়া ফেসবুকে লিখেছেন, “আমি মো. মনির হোসেন জিয়া সরকারি তোলারাম কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি। কিছু দিন আগে শিল্পকলা একাডেমীতে একটি অনুষ্ঠানে এনসিপির এক নেতা হাতেম সাহেবকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর হিসেবে আখ্যায়িত করে। যেটা বিভিন্ন নিউজ পোর্টালে ভাইরাল হয়। গতকাল মঙ্গলবার সরকারি তোলারাম কলেজের একটি অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে তিনি আসেন। অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে কিছুসংখ্যক সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা কলেজে আমার কাছে অভিযোগ করে যে, সে একজন ফ্যাসিস্টের দোসর, আমাদের কলেজের অনুষ্ঠানে তিনি কী করে আসতে পারেন। এবং অনেকেই আমাকে বারবার কলেজ থেকে তাকে বের করে দিতে বলে। এক পর্যায়ে আমি আবেগপ্রবণ হয়ে তাকে কলেজ থেকে চলে যেতে বলি।”
“তার মতো একজন সম্মানিত ব্যক্তির সাথে এমন আচরণ কোনভাবেই কাম্য না। আমি এরকম আচরণের জন্য মোহাম্মদ হাতেম সাহেবসহ বিকেএমই’র সকল ব্যবসায়ীদের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। ব্যবসায়ীক কারণে সব সরকারের সাথেই তাদেরকে সম্পর্ক রাখতে হয়, কিন্ত এই বিষয়টি আমি সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছি। ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতে আমার দ্বারা এ রকমটা আর ঘটবে না”, ওই পোস্টে লেখেন এ ছাত্রদল নেতা।
এর আগে গত ৪ নভেম্বর শিক্ষার মানোন্নয়ন নিয়ে শিল্পকলা একাডেমীতে জেলা প্রশাসনের এক অনুষ্ঠানেও তোপের মুখে পড়েন মোহাম্মদ হাতেম। ওইদিন হাতেমকে ‘গণঅভ্যুত্থানের শত্রু’ উল্লেখ করে বক্তব্য রাখেন জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন। তাকে অনুষ্ঠানে অতিথি করা নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেন এনসিপির এই নেতা।
ওই অনুষ্ঠানে আল আমিন বলেন, “এখানে মঞ্চে ছাত্রদের নানা পরামর্শ দিতে দেখলাম এমন একজন ব্যক্তিকে যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় শেখ হাসিনার সভায় কীভাবে ছাত্রদের আন্দোলন দমন করতে হবে সেই অনুরোধ করেছিলেন। গণঅভ্যুত্থানের শত্রু এই ধরনের ব্যক্তি যারা ওসমান পরিবারের দালালি করেছেন তাদেরকে কেবল একটা পদের কারণে স্পেস দিতে পারি না।”
এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শোয়াইব আহমাদ খান।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৩ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন গণভবনে ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে শেখ হাসিনার এক সভায় মোহাম্মদ হাতেম ছাত্র আন্দোলনকে ‘তান্ডব’ হিসেবে উল্লেখ করে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান। তিনি বিগত সরকারের পাশে আছেন এবং সবসময় থাকবেন বলেও উল্লেখ করেন।
দুইদিন পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে হাতেমের দেওয়া এই বক্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। যদিও চলতি মে মাসে বিকেএমইএ’র নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হন এ ব্যবসায়ী নেতা।





































